X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১
‘শনিবার বিকেল’

চলচ্চিত্র সেন্সরশিপ নিয়ে যা বলছেন সিনেমাওয়ালারা

বিনোদন রিপোর্ট
১১ আগস্ট ২০২২, ১৮:৪৬আপডেট : ১১ আগস্ট ২০২২, ২১:১৯

২০১৯ সালে সেন্সর বোর্ডের সনদ পাওয়ার সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলেও এখন পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত সিনেমা ‘শনিবার বিকেল’। বিষয়টি নিয়ে সে সময় তুমুল লেখালেখি হলেও কোনও এক অজানা কারণে থমকে যায় এর ছাড়পত্র। তবে ‘শনিবার বিকেল’ প্রসঙ্গটি চলতি সপ্তাহজুড়েই চর্চায় আছে। বিশেষ করে ফেসবুকে চলছে ‘হোক প্রতিবাদ’ স্লোগান। খোলা হয়েছে ফেসবুক গ্রুপও।  

ঘটনার শুরু চলতি সপ্তাহের প্রথম দিকে। ‘শনিবার বিকেল’ নিয়ে মুখ খোলেন এর নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তুলে ধরেন ছবিটির হালহকিকত। অন্যদিকে, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বরাবর খোলা চিঠি দেয় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়া।

এরপরই সরব হয়েছে দেশের মিডিয়া অঙ্গনের মানুষরা। ছবিটির মুক্তির জন্য ফেসবুককেই হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছেন তারা। সামাজিক যোগাযোগের এ হ্যান্ডেলে চলছে এর প্রতিবাদ। বেশিরভাগ নির্মাতা-কুশলী-দর্শকের দাবি, পৃথিবীর কোথাও সেন্সরে ছবি আটকে দেওয়ার মতো তেমন নজির এখন আর পাওয়া যায় না। স্বাধীন দেশে সেন্সরশিপ আরোপ করা শিল্পচর্চার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলেও মনে করছেন তারা। 

দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসানের ভাষ্য, ‘‘পৃথিবীর নানা দেশে যখন সেন্সর বোর্ড নামের বালাইটা উঠে যাচ্ছে, আমাদের দেশে সেটা তখন ফাঁসির রজ্জুর মতো চলচ্চিত্রের গলায় চেপে বসছে। এর সর্বশেষ শিকার এখন মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘শনিবার বিকেল’। কোনও চলচ্চিত্রের কাহিনি কী হবে, তারও কি এখন প্রেসক্রিপশন নিয়ে আসতে হবে? চলচ্চিত্রের বিষয় আকাশের তলায় মাটির পৃথিবীর যেকোনও কিছু হতে পারে। চূড়ান্ত কল্পনা, নিরেট বাস্তব, বাস্তব থেকে অনুপ্রাণিত কল্পনা।’’

হোলি আর্টিজানের প্রসঙ্গ টেনে এই অভিনেত্রী আরও বলেন, ‘‘শনিবারের বিকেল’ ছবিতে হোলি আর্টিজানের শোচনীয় ঘটনাটির ছায়া আছে বলে? আসলেই আছে কিনা আমার জানা নেই। যদি থাকেও, তাহলেই বা ছবিটা আটকে দেওয়ার যুক্তি কী? হোলি আর্টিজান ঘটেনি? আমাদের মন থেকে ধুয়ে মুছে গেছে? সত্যি বলতে কী, এই ঘটনা কখনোই আমাদের মন থেকে মুছে যেতে পারে না। মুছে যেতে দেওয়া যায়ও না। যে ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমরা মোটেও চাই না, আমাদের ছেলেমেয়েদের সামনে থেকে যে পথ চিরকালের জন্য অবরুদ্ধ করে রাখতে চাই, হোলি আর্টিজানের ঘটনা তার জোরালো সতর্কঘণ্টা হিসেবে মন থেকে মনে বাজিয়ে যেতে হবে। ঘণ্টা বাজিয়ে ঘুম থেকে আমাদের মনটাকে জাগিয়ে তোলা তো চলচ্চিত্রেরই একটা কাজ। আমরা চলচ্চিত্রের মুক্তি চাই, সব শিল্পের মুক্তি চাই। কারণ, আমরা মানুষের মুক্তি চাই।’’ 

জয়ার এ পোস্টে কথা বলেছেন মিডিয়ার আরও কয়েকজন। অভিনেতা হাসান মাসুদ সেখানে মন্তব্য করেছেন এভাবে, ‘সেন্সর বোর্ড নিপাত যাক’। 

ঢাকার গুলশানের হোলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার ছায়া অবলম্বনে তৈরি ‘শনিবার বিকেল’।

তবে একই ঘটনায় ভারতে ‘ফারাজ’ নামে সিনেমা নির্মাণ করেছেন বলিউডের খ্যাতিমান নির্মাতা হংসল মেহতা। সে বিষয়টিও উঠেছে এসেছে অনেকের প্রতিবাদে। অন্যদিকে শুধু ‘শনিবার বিকেল’ নয়, সেন্সরে আটকে থাকা সব ছবি নিয়ে কথা বলেছেন অনেকে। যার সূত্রপাতও ‘শনিবার বিকেল’। 

প্রসঙ্গটি উঠে এসেছে নির্মাতা খিজির হায়াতের বয়ানেও। তার ভাষ্য, ‘একতাই বল, নিজেদের মধ্যে বিভেদ আর না করি আমরা। সকল আটকে থাকা সিনেমা আলোর মুখ দেখুক।’

নির্মাতা মিজানুর রহমান মিজান এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘‘হায়রে চলচ্চিত্রের মানুষ! ‘শনিবার বিকেল’ মুক্তির জন্য সিনেমার অনেক জ্ঞানী-গুণী মানুষ প্রতিবাদী পোস্ট দিলেও ‘রানা প্লাজা’ নিয়ে সবাই নিশ্চুপ। কেউ কোনও কথাই বলে নাই। প্রতিবাদ যদি করতেই হয় তাহলে সেন্সরে আটকে যাওয়া সকল সিনেমা নিয়ে প্রতিবাদ করা উচিত। একপাক্ষিক প্রতিবাদ হবে কেন? ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমা, ‘রানা প্লাজা’ কি সিনেমা না? কই তখন তো কেউ প্রতিবাদ করলেন না ভাই? এই বঙ্গদেশে যদি ‘শনিবার বিকেল’ মুক্তি দেওয়া হয়, তাহলে ‘রানা প্লাজা’র মতো আরও অনেক সিনেমা আছে, সেগুলোও মুক্তি দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।’’

এই পোস্টে মন্তব্য করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী নির্মাতা রিয়াজুল রিজু। তিনি লিখেছেন, ‘সবারটা নিয়েই হোক সমস্যা কোথায়? সমস্যা হচ্ছে প্রতিবাদী হতে বিপ্লবী হতে সৎ সাহস লাগে এবং সেটারই অভাব।’ 

তবে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখছেন নির্মাতা আশফাক নিপুণ। তার ভাষ্য, এটা শুধুই ‘শিক্ষা’ দেওয়ার জন্য করা হচ্ছে। 

তিনি লেখেন, ‘এই মুহূর্তে বিশ্বের চলচ্চিত্র মানচিত্রে মননে তরুণ যে কয়জন দেশি চলচ্চিত্র নির্মাতা দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন, দেশের নাম উজ্জ্বল করছেন, তাদের মধ্যে সম্ভবত অগ্রগণ্যই থাকবেন ফারুকী। ইতোপূর্বে তার নির্মিত কোনও চলচ্চিত্র দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তাকে কোনোরকম ঝুঁকিতে ফেলেছে—এই কথা তার শত্রুও বলার ধৃষ্টতা দেখাবেন না। বরং এসব ভিন্ন ন্যারেটিভের সিনেমার কারণে বিশ্ব বাংলাদেশকে চিনেছে নতুন আলোয়। বিশ্বের বড় বড় শিল্পী তার সিনেমায় যুক্ত হয়েছেন সাগ্রহে। কিন্তু তার ছবিকে প্রায় প্রতিবারই এরকম সেন্সরের দীর্ঘসূত্রতা পার করতে হয়। কেন? বোধকরি এটা এক ধরনের শিক্ষা দেওয়া। ফারুকীর ছবি আটকে বাকি সবাইকে এই শিক্ষা দেওয়া, যেন কেউ অন্যভাবে ভাবতে না পারে। যেন কেউ অন্য বয়ান হাজির করতে না পারে সিনেমার মধ্য দিয়ে।’

২০১৯ সালে সেন্সর বোর্ডের অন্যতম সদস্য ছিলেন নির্মাতা ও চলচ্চিত্র নেতা মুশফিকুর রহমান গুলজার। 

তিনিও জানেন না কেন সাড়ে তিন বছরেও ছাড়পত্র পেলো না ‘শনিবার বিকেল’! তার কাছে আটকে থাকা সিনেমাটির সর্বশেষ আপডেট জানতে চাইলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে সিনেমাটির ব্যাপারে কোনও আপত্তি ছিল না। কিন্তু কী হলো বুঝতে পারছি না। রাষ্ট্রের কিছু ব্যাপার থাকতে পারে। এই সিনেমাটি যে ঘটনার ওপর নির্মিত সেটা সামনে আসা নিয়ে প্রশাসনিক আপত্তি থাকতে পারে। এ বিষয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। এটুকু বলতে পারি, সিনেমা হিসেবে আমার চোখে আপত্তিকর কিছু লাগেনি। তবে সাবজেক্ট বিষয়ে প্রশাসনিক বা আন্তর্জাতিক কোনও রেশ থাকলে আমাদের কিছু বলারও নেই।’ 

গিয়াস উদ্দিন সেলিম বলেন, ‘বাংলাদেশের বাইরের স্ক্রিনে মানুষ বাংলাদেশের চলচ্চিত্র দেখছে, অথচ আমরা নিজের দেশের চলচ্চিত্র দেখতে পারছি না সেন্সরশিপের কারণে। এ সমস্যাগুলোর সমাধান হোক!’

সিনেমায় সেন্সরশিপ প্রসঙ্গে নির্মাতা অনিমেষ আইচ বলেন, ‌‌‘‘লাইভে এসে আত্মহত্যা দেখি, বিডিআর বিদ্রোহ লাইভ দেখি, বিশ্বজিৎকে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে মেরে ফেলতে দেখি, পিকে হালদারের দুর্নীতি তাও দেখি শান্ত দু’চোখে। একটা সিনেমা দেখতে গেলেই হয় তো আমাদের ঘুমিয়ে থাকা গতজন্মে মৃত আত্মা জেগে উঠবে। তাই দেখি না, দেখাতে পারি না। ‘শনিবারের বিকেল’ তিন বছর ধরে পড়ে আছে তিমিরে। সিনেমার সঙ্গে কেন এমন ফ্যাসিস্ট আচরণ?’’

জাজ মাল্টিমিডিয়া, ছবিয়াল ও ট্যানডেম প্রোডাকশন প্রযোজিত ‘শনিবার বিকেল’-এর বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন ১২টি দেশের স্বনামধন্য অভিনেতারা। যার মধ্যে আছেন ফিলিস্তিনের ইয়াদ হুরানি, ইউরোপের এলি পুসো, সেলিনা ব্ল্যাক, বাংলাদেশের মামুনুর রশীদ, জাহিদ হাসান, নুসরাত ইমরোজ তিশা, ভারতের পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ।

/এম/এমএম/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সন্ধ্যা নামিলো শ্যাম: গানে ও চিত্রে মুগ্ধতার সমন্বয়
সন্ধ্যা নামিলো শ্যাম: গানে ও চিত্রে মুগ্ধতার সমন্বয়
যুক্তরাজ্যের টিভি চ্যানেলে ফারুকী-তিশার ‘অটোবায়োগ্রাফি’
যুক্তরাজ্যের টিভি চ্যানেলে ফারুকী-তিশার ‘অটোবায়োগ্রাফি’
ঈদ নাটক: ভিউতে এগিয়ে থাকা ১০
ঈদ নাটক: ভিউতে এগিয়ে থাকা ১০
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
প্রেম নাকি বিয়ে, মুখ খুললেন ইলিয়ানা
প্রেম নাকি বিয়ে, মুখ খুললেন ইলিয়ানা
এফডিসিতে মারামারি: যৌথ বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হলো
এফডিসিতে মারামারি: যৌথ বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হলো
সেন্সর বোর্ডের সিদ্ধান্ত, রাফীর সিনেমাটি প্রদর্শনের অযোগ্য!
সেন্সর বোর্ডের সিদ্ধান্ত, রাফীর সিনেমাটি প্রদর্শনের অযোগ্য!