X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘অপারেশন সুন্দরবন’ নিয়ে সহকারী পরিচালকের বিস্ফোরক অভিযোগ

সুধাময় সরকার
২১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৮:৩৪আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২১:১৩

দীর্ঘ শুটিং-সম্পাদনা প্রক্রিয়া শেষে মুক্তির আনন্দে ভাসার বাকি মাত্র দুদিন। এমন সময়ে বিস্ফোরক প্রতিক্রিয়ায় সোশাল হ্যান্ডেল ফাটালেন ‘অপারেশন সুন্দরবন’ ছবির অন্যতম সহকারী পরিচালক তানিন খান।

২০ সেপ্টেম্বর নিজের ফেসবুক দেয়ালে পোস্ট করেন ছবিটিকে ঘিরে তার দীর্ঘ প্রতিক্রিয়া। যেখানে ঘুরেফিরে উঠে এসেছে এটি নির্মাণে তার ত্যাগ-শ্রম ব্যয়ের বিষয় আর সম্মান-সম্মানি না পাওয়ার গুরুতর অভিযোগ। যে অভিযোগের তীর গিয়ে সরাসরি বিঁধেছে এর নির্মাতা দীপংকর দীপন হয়ে ছবিটির প্রযোজনা সংস্থা র‌্যাব ওয়েলফেয়ার কো-অপারেটিভ সোসাইটি কর্তাদের ওপর।

তানিন খানের অভিযোগ, ‘এই ছবির জন্য আমার সাথে দাদার (দীপংকর দীপন) ডিল হয় ২৫ হাজার টাকায়। যেটা এত বড় একটা ছবির সহকারী হিসেবে পারিশ্রমিক অনেক কম। তবু দাদার এক কথায় আমি রাজি হয়েছিলাম। কারণ, কাজটাকে আমি ভালোবাসি। তো করোনা শুরুর দিকে আমার পেমেন্টের মধ্যে ৫ হাজার টাকা সে র‍্যাবের মাধ্যমে আমায় বিকাশে পরিশোধ করে। বাকি টাকা এখনও আমি পাইনি। এত কষ্ট করে টানা ২৭ দিন শুট শেষ করে যদি পেমেন্ট না করে, তাহলে আর কি করার থাকে।’

নিজের পারিশ্রমিক তোলার জন্য তানিন খান গিয়েছেন র‌্যাব হেডকোয়ার্টারেও। সেখানে গিয়ে যে অভিজ্ঞতা হলো তার, সেটির ব্যাখ্যাও দিয়েছেন এই তরুণ নির্মাতা। তার বয়ানে, ‘‘রাইসুল স্যার (মেজর হুসাইন রইসুল আজম মনি, উপ-পরিচালক, আইন ও গণমাধ্যম শাখা, র‌্যাব) আমায় লাঞ্চ করতে বললেন, উনি তখন মিটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন। দুপুরের খাবার খেলাম ওখানে। কিছুক্ষণ পর উনি আমায় ডেকে পাঠালেন, বললেন তুমি দীপনকে এত কল, মেসেজ করে বিরক্ত কর কেন? তার এক্সপ্রেশনে খুব বিরক্তির ছাপ ছিল। আমি বললাম, স্যার আমার বাকি টাকাটা ক্লিয়ার করে দিন, আমি খুব ফিন্যানসিয়ালি সমস্যায় আছি। তো উনি আমাকে শুধু বললেন, এরপর থেকে দীপনকে আর কল করবে না, এখন যাও, দীপন আসুক, সামনাসামনি কথা হবে। ব্যাপারটা আমার কাছে খুব ‘ভদ্রবেশী থ্রেট মনে’ হয়েছে। তাকে আমি বুঝানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু সে আমায় আর সময় দিলো না।’’ 

এরপর তানিন খান নির্মাতা দীপংকর দীপনের প্রতি আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, ‘র‍্যাবের রাইসুল স্যারের প্রতি আমার কোনও আক্ষেপ নেই। কারণ, আপনি (দীপংকর দীপন) না বললে সে হয়তো এগুলো আমায় বলতেন না। তাই আপনার প্রতি আমার অনেকটা আক্ষেপ হচ্ছে, বলতে পারেন আক্ষেপ-অভিমান দুটোই রয়েছে। যেগুলো আর ধরে রাখতে পারছিলাম না, তাই এখানে বলে দিলাম। কারণ, আপনি তো ফোন বা মেসেজ করতে নিষেধ করে দিয়েছেন, তাই এখানে বললাম। হয়তো আপনি আমার এই পোস্ট দেখবেন। প্রশ্ন একটাই, আমার সাথে কেন এমনটা করলেন। আমার অপরাধ কী।’

এমন পোস্ট বা অভিযোগের আত্মপক্ষ সমর্থন খুঁজতে বাংলা ট্রিবিউন যোগাযোগ করে নির্মাতা দীপংকর দীপন এবং র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার উপ-পরিচালক মেজর হুসাইন রইসুল আজম মনির সঙ্গে।

এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে দীপন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রথমত আমি গত প্রায় একমাস ধরে ছবিটির কাজে ইন্ডিয়ায় ছিলাম। সেখানে রাত-দিন কাজ করেছি। গতকালই (২০ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় ফিরেছি। ফিরে এখনও আমি ছবিটির নানা টেকনিক্যাল বিষয়ে কাজ করছি। এরমধ্যে এই পোস্টটি আমার নজরে আসে। আমি সঙ্গে সঙ্গে তানিনের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তার ফোন অফ। হোয়াটসঅ্যাপ অন থাকলেও কল রিসিভ করছে না। কারণ, আগে তো আমাকে নিশ্চিত হতে হবে, এই পোস্টটি তানিন নিজেই দিয়েছে নাকি হ্যাক হয়েছে তার প্রোফাইল। এই পোস্ট দেখে তো আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না, এভাবে সে পাবলিকলি অভিযোগগুলো তুলতে পারে। এগুলো তোলার আগে তো আমাদের বসতে হবে।’ 

দীপনের বক্তব্য এমন, যে প্রজেক্টের কাজই এখনও শেষ হয়নি, সেটার পারিশ্রমিক বা সম্মানি নিয়ে হিসাব-নিকাশ করার সময় এটা নয়। তার ভাষ্যে, ‘আমার সকল সহকারী এখনও রাত-দিন আমার সঙ্গে কাজ করছে। কাজটা তো প্রপারলি শেষ করতে হবে আগে। কারণ, দুদিন পরেই ছবিটির স্ক্রিনিং হচ্ছে। সেই সময়ে আমার একজন সহকারী যদি সোশাল মিডিয়ায় এমন অভিযোগ তোলে, তবে তো সে আমার সহকারীই নয়! এবং ছবিটির সেকেন্ড লটে ও আমাদের সঙ্গে জয়েন করে শেষ করার আগেই চলে গেছে অন্য কাজে। সেটাও বিষয় নয়, একসঙ্গে কাজ করলে অভাব-অভিযোগ থাকতেই পারে। কিন্তু সেটি বিচারের সময় কি এটা? এভাবে আমাদেরকে মিডিয়া ট্রায়ালে ফেলার মানেও দেখি না। এরপরেও আমি এবং র‌্যাবের পক্ষ থেকে তাকে হাজারবার ফোন করা হয়েছে। কিন্তু তাকে আমরা পাচ্ছি না। তাহলে এর সমাধান কীভাবে করবো?’  

এদিকে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার উপ-পরিচালক মেজর হুসাইন রইসুল আজম মনির সঙ্গে বারবার বিষয়টি প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনও সাড়া দেননি।

‘‌অপারেশন সুন্দরবন’-এর এই সহকারী পরিচালকের দীর্ঘ অভিযোগনামায় উঠে এসেছে ‘চড় খাওয়া’র কাণ্ডও! ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে নির্মাতা দীপনকে লক্ষ্য করে তার সহকারী তানিন খান বলেন, ‘দাদা আমি আপনাকে অনেক সম্মান করি শ্রদ্ধা করি, সেটা আপনি জানেন হয়তো। মনে আছে দাদা, আপনি আমায় সেটে সবার সামনে চড় মেরেছিলেন, একটু কাজে ভুল হওয়ার জন্য। কিন্তু আমি সেদিন কোনও রিঅ্যাক্ট করিনি। বরং সেটাকে আমার উপদেশ হিসেবে মেনে নিয়েছিলাম। চড় খাওয়ার পরও আমি কিন্তু হাসিমুখে আবারও কাজ করেছি, কাউকে বুঝতে দিইনি কষ্টটা। সবার সামনে অপমানিত হওয়ার যে কী কষ্ট দাদা, এটা আপনাকে বুঝাতে পারবো না। সেদিন শিপে সবাই আমায় নিয়ে হাসাহাসি করেছিল। আপনার প্রতি সম্মান আমার একটুও কমেনি দাদা। তবে কি জানেন দাদা, বারবার একটা মানুষের সাথে এভাবে করলে তারও ধৈর্যের সীমা থাকে, সেটা একসময় ভেঙে যায়।’

এরপর ছবিটির শুটিং চলাকালে তানিন খানের কষ্ট, শ্রম, আন্তরিকতা আর অপারগতার কথা তুলে ধরেন।

যদিও নির্মাতা দীপংকর দীপনের কণ্ঠে পাল্টা অভিযোগের সুর, ‘সুন্দরবন একটা জটিল জায়গা। যেখানে একটা খালে ঢুকতে ধরেন একঘণ্টা লাগে। ফিরতে লাগে চার ঘণ্টা! তো এমন লোকেশনে শিপ থেকে নেমে নৌকার ওঠার আগে আমাদের শুটিংয়ের সব পরিকল্পনা আর কস্টিউম শতভাগ চেক করে নামতে হয়। কারণ, আমরা জানি যেতে আসতে দিন পার হয়ে যায়। তানিন ছিল আমার পাঁচ নম্বর এডি (সহকারী পরিচালক)। যে কারণে, সরাসরি খুব বেশি কথা বলারও প্রয়োজন হতো না। তো আমরা লক্ষ করলাম, ওর (তানিন) কারণে প্রায়শই আমরা বিপদে পড়তাম। স্পটে গিয়ে দেখতাম একটা দরকারি কস্টিউম মিসিং। যেটার দায়িত্বে ও ছিল। এভাবে কয়েকবার ঘটার পর ও টিম থেকেই খানিকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। একটা সিনেমা তো আসলে পুরো টিম ইস্পিরিটের ওপর নির্ভর করে। সেখানে টিমের গতির সঙ্গে তাল মেলাতে হয়। কিন্তু সেটা সে পারছিল না। এরপর তো মাঝপথেই ও চলে যায় অন্য কাজের কথা বলে। এবং ও যে র‌্যাবকে দোষারোপ দিচ্ছে, এখানে তো ওর সঙ্গে হিসাবটা আমার। র‌্যাব তো ওর সঙ্গে কোনও ডিলে যায়নি। ফলে র‌্যাবের কাছে যাওয়ার পর ওকে বলা হয়েছে আমার ফেরার অপেক্ষা করতে। কিন্তু সে তো আমার অপেক্ষা আর করলো না!’ 

দীপংকর দীপন তানিন খান তার পোস্টে সুন্দরবনের ভয়ংকর দিনগুলোর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘টানা ১৩ দিন শুটিং হয় ওখানে। এরিয়াটার পুরোটায় টাইগার জোন ছিল, পানিতে কুমির আর ডাঙ্গায় বাঘ। খুব ভয়াবহ ব্যাপার ছিল। কাজের সময় আমাদের খুব সতর্ক থাকতে হতো, টিম ছেড়ে একটু পাশেও কেউ যেতে সাহস পেতাম না। খুব ভয়ে থাকতে হতো কখন কাকে বাঘ এসে নিয়ে যায়। কারণ, প্রতিদিন আমরা বাঘের দুর্গন্ধ পেতাম, বুঝতাম আশপাশেই হয়তো কোনও বাঘ শিকার ধরার জন্য বসে আছে, শুধু সুযোগের অপেক্ষা। তবু টিমের সবাই প্রচণ্ড অমানুষিক পরিশ্রম করি আমরা। লবণাক্ত পানি দিয়ে গোসল আর বিশাল বিশাল মাছি সামলিয়ে আমাদের খাবার খেতে হতো, তার ওপর প্রচণ্ড রোদ, ঝড়-বৃষ্টি তো ছিলই। বাড়ি ফেরার পর আমার চেহারা দেখে আব্বু-আম্মু খুব ঘাবড়ে গিয়েছিল, কারণ ১৩ দিনে আমার শরীর পুড়ে লাল আর মাথার চুল পড়ে গিয়েছিল। কখনও কখনও এক কোমর কাদায় নেমে শুটিং করতে হয়েছে। ওই এরিয়ার প্রায় ৫০/৬০ কি.মি. কোনও জনবসতি ছিল না। মশামাছির তাণ্ডবে টিমের প্রায় ১৬ জন অসুস্থ হয়ে পড়ি আমরা। মনে হচ্ছিল এখান থেকে ভালোভাবে শুট শেষ করে আমরা কবে বাড়ি ফিরবো। এভাবে করে সেখানকার লট শেষ করি আমরা। তারপর ৩ দিনের বিরতি নিয়ে আমরা তৃতীয় লটের শুটিং শুরু করি খুলনা ও বাগেরহাটে। ঘুম কী জিনিস সেই ২৭ দিন আমরা বুঝতেই পারিনি।’

এই তরুণ পরিচালক মনে করেন, ইন্ডাস্ট্রিতে তার মতো এমন অনেকেই আছেন, যারা তার শ্রমের মূল্য পায় না। তার ভাষায়, ‘মাসের পর মাস, বছরের পর বছর প্রডিউসার-পরিচালকরা সবার টাকা আজ দিবো কাল দিবো করে আর দেয়নি। অনেকেই আমার মতো থ্রেট-এর শিকারও হয়েছে। কিছু এসব লোকদের জন্য অনেক স্ট্র্যাগল করা ফিল্মমেকার ও কলাকুশলীরা মিডিয়া ছেড়ে দিয়েছেন। কত স্বপ্নবাজরা ঝরে গিয়েছেন এসবের জন্য। এভাবে আর কতদিন, এই সিস্টেমটার পরিবর্তন হওয়া খুব জরুরি। হয়তো এগুলো লেখার জন্য আমি প্রশাসনিকভাবে হুমকির শিকারও হতে পারি, আমার লাইফ রিক্সটাও রয়েছে অনেক। হোক যা হবার, তারপরও এই সিস্টেমটার পরিবর্তন চাই।’

প্রসঙ্গত, ‘অপারেশন সুন্দরবন’ ছবির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন রিয়াজ, সিয়াম, রোশান, নুসরাত ফারিয়া, দর্শনা বণিক, সামিনা বাশার, শতাব্দী ওয়াদুদ, মনির খান শিমুল, তাসকিন রহমান, মনোজ প্রামাণিক, দীপু ইমাম, এহসানুর রহমান প্রমুখ। ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে ২৩ সেপ্টেম্বর দেশের বেশিরভাগ প্রেক্ষাগৃহে।

র‍্যাব ওয়েলফেয়ার কো-অপারেটিভ সোসাইটি লি. প্রযোজিত এই ছবিটি নির্মাণ হয়েছে সুন্দরবনে র‌্যাবের দুঃসাহসিক অভিযানের ঘটনা নিয়ে।

/এমএম/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সন্ধ্যা নামিলো শ্যাম: গানে ও চিত্রে মুগ্ধতার সমন্বয়
সন্ধ্যা নামিলো শ্যাম: গানে ও চিত্রে মুগ্ধতার সমন্বয়
ঈদ নাটক: ভিউতে এগিয়ে থাকা ১০
ঈদ নাটক: ভিউতে এগিয়ে থাকা ১০
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
গার্মেন্টসকর্মীদের জীবনের গল্প ‘ঈদের ছুটি’!
গার্মেন্টসকর্মীদের জীবনের গল্প ‘ঈদের ছুটি’!
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
প্রেম নাকি বিয়ে, মুখ খুললেন ইলিয়ানা
প্রেম নাকি বিয়ে, মুখ খুললেন ইলিয়ানা
এফডিসিতে মারামারি: যৌথ বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হলো
এফডিসিতে মারামারি: যৌথ বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হলো