অবশেষে ফিরলেন তিনি। পেলেন রাজকীয় অভ্যর্থনা। তার সঙ্গে আগত সকল শিল্পী-কুশলী এদিন সন্ধ্যায় বড় ম্লান হয়ে রইলো। টানা প্রায় তিন ঘণ্টার আবেগী আলাপ করলেন, আর মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনলেন আগতরা।
মাহফুজ আহমেদ। দুই দশকের সফল ক্যারিয়ার। মাঝে প্রায় এক দশকের আড়াল। সেটি ভাঙলো রবিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর অভিজাত এক ক্লাবে। তিনি এলেন। সাংবাদিকদের ফ্লোরে মাইক্রোফোন ছেড়ে দিলেন। আর প্রতিটি প্রশ্নের জবাব দিলেন আনন্দ নিয়ে। শুরুতেই বললেন, ‘আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলাম আপনাদের প্রশ্ন আর গল্পগুলো শোনার জন্য। তার আগে একটি ভালোলাগার কথা বলি, দীর্ঘ দীর্ঘ দিন পর আমি আবার এতো ক্যামেরা-সাংবাদিককে চোখে দেখলাম। তাই নয়, এখানে আজ এমন অনেককেই দেখতে পাচ্ছি, যারা আমার ক্যারিয়ারের বেড়ে ওঠার সময় থেকে ছিলেন। আজও তারা আছেন। এটা যে কী ভালো লাগার বিষয়, বলে বোঝাতে পারবো না। এই মানুষগুলোকে আমি দীর্ঘদিন মিস করেছি।’
এসময় মাহফুজ আহমেদের পাশে লালশাড়ি পরে দাঁড়িয়ে ছিলেন শবনম বুবলী। যে দু’জন জুটি বেঁধে প্রথমবার করলেন সিনেমা ‘প্রহেলিকা’। এটি নির্মাণ করেছেন চয়নিকা চৌধুরী। সে হিসেবে টানা ৮ বছর পর মাহফুজ আহমেদ ফিরছেন রূপালি পর্দায়। তার অভিনীত শেষ সিনেমা ‘জিরো ডিগ্রি’ মুক্তি পেয়েছিল ২০১৫ সালে।
যদিও বুবলী বললেন, ‘আমি বলবো না মাহফুজ ভাই কামব্যাক করেছেন। কারণ তিনি আমাদের অভিনয় শিখিয়েছেন, রোমান্টিকতা শিখিয়েছেন, তার অসংখ্য নাটক-সিনেমার মাধ্যমে। ফলে তিনি তার কাজের মাধ্যমে আমাদের সঙ্গে বরাবরই ছিলেন। আমি বললো, তিনি কাজে আবার সরব হয়েছেন। এবং তার সঙ্গে আমার কাজ করাটা ব্লেসিংস।’
লম্বা বিরতির পর ফেরা। শুটিংয়ে কি দ্বিধা কাজ করেছিল। কিংবা প্রতিষ্ঠিত নায়িকা বুবলীর বিপরীতে কাজ করা, অস্বস্তি বয়ে আনেনি তো! প্রসঙ্গে মাহফুজ আহমেদ বলেন, ‘শুধু বুবলী নয়, টুবলি থাকলেও জড়তা কাজ করতো আমার! কারণ আমি তো সবাইকে নিয়েই ভয়ে ছিলাম। আমার সঙ্গে আরও ছিলেন সেতু আজাদ, রাশেদ মামুন অপু, নাসির উদ্দিন খানের মতো অভিনেতারা। যারা এখন ওটিটি মাত করছে। আমার ভয়ের কারণ ছিলো, ওদের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবো কি না। কারণ, এটা তো সত্যি লম্বা সময় আমি ক্যামেরার বাইরে। প্রথম দৃশ্য করেছিলাম বুবলীর সঙ্গে। আমি সত্যিই নার্ভাস ছিলাম সেদিন। তবে এটাও ভরসা ছিলো, সাঁতার একবার শিখলে সেটা তো আর ভুলে যাওয়ার কথা নয়। এরপর একটি দৃশ্য করছি, আর মনিটরে গিয়ে দেখছি। দেখলাম, না হচ্ছে!’
‘প্রহেলিকা’য় মাহফুজ আহমেদ অভিনয় করেছেন মনা চরিত্রে। যেমনটা আগে তাকে দেখা গেছে ‘আমাদের নুরুলহুদা’ বা ‘চৈতা পাগল’ নাটকে। যে দুটি চরিত্রে আজও বেঁচে আছেন দর্শক হৃদয়ে। অভিনেতা মনে করেন, লম্বা বিরতির পর তিনি আবারও তেমন একটি চরিত্র নিয়ে ফিরছেন। যেটি করতে গিয়ে ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছেন। তার ভাষায়, ‘আমি শুটিং শেষ করার পরদিন দেশের বাইরে চলে যাই। কারণ, আমি মনা রোগে আক্রান্ত হয়েছিলাম। সেটি থেকে বের হতেই দেশ ছাড়ি। এবং আজকের আগে এ প্রসঙ্গে আমি মিডিয়ায় কোনও কথাও বলিনি। আশা করছি সিনেমাটি মুক্তির পর সেটা আপনারাও অনুভব করবেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে সহশিল্পী বুবলী সম্পর্কেও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন মাহফুজ আহমেদ। জানালেন টিভি আর সিনেমা মিডিয়ার পার্থক্যটাও। যে পার্থক্যটা তিনি আরও বেশি অনুভব করেছেন বুবলীর সঙ্গে কাজ করে। অভিনেতা বলেন, ‘বুবলী আমার মোস্ট ফেভারিট কো-অ্যাক্টর। শুধু একটা সিকোয়েন্সর কথা বলি। আমাদের দুজনের একটা লম্বা সিকোয়েন্স ছিলো। প্রায় ৬ মিনিটের, ওয়ানটেক শট। ফলে আমি খুবই কনফিউজড ছিলাম বুবলীকে নিয়ে। কারণ আমি তো সহশিল্পী হিসেবে তার সঙ্গে প্রথম কাজ করছি। ফলে আমার অ্যাকটিংয়ের পর তার রিঅ্যাকশনটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেই সিকোয়েন্স শেষ করার পর আমি জাস্ট বিস্মিত। তার কাছ থেকে যে রিঅ্যাকশন বা সাপোর্ট পেয়েছি, সেটা না পেলে ঐ দৃশ্যটি বাস্তবায়ন করা কঠিন ছিলো। সেই দৃশ্য শেষ করার পর আমি জাস্ট মুগ্ধ হয়ে যাই। বুবলী বার বার বলছে সে আমার সঙ্গে কাজ করে ধন্য বা ইত্যাদি। কিন্তু আমি বলবো, তার সঙ্গে কাজ করে আমি অনেক কিছু শিখেছি।’
কিন্তু কী এমন শিখেছেন বুবলীর কাছ থেকে! অভিনয়? একজন মাহফুজ আহমেদ তো অভিনয়ের সর্বোচ্চ চূড়া অতিক্রম করে বসে আছেন বহু আগেই। এটির ব্যাখ্যাও দিলেন অভিনেতা। বললেন, ‘আমরা যারা টেলিভিশন মিডিয়া থেকে ফিল্মে যাই, তাদের মধ্যে একটা অভ্যাস আছে। আমরা কাজটা করতে গিয়ে ভাবি- ঠিক আছে করলাম আরকি। ঠিক আছে হবে আরকি! এই বিষয়টি হচ্ছে নন প্রফেশনাল আচরণ। কিন্তু ফিল্মের একজন প্রফেশনাল আর্টিস্ট, লাইক বুবলী; তারা এভাবে কখনও ভাবে না। তারা কল টাইম তিনটা মানে তিনটা, পাঁচটা মানে পাঁচটা। ওর জন্য কোনও দিন শুটিং লেট হয়নি। ওর এই টাইমিংয়ের জন্য আমাকে তটস্থ থাকতে হয়েছে। এমন আরও অনেকগুলো গুণ দেখেছি বুবলীর মধ্যে। যা আমাকে নতুনকরে শিখিয়েছে এবং সচেতন করেছে।’
এভাবে মাহফুজ আহমেদের কণ্ঠে কথার ফুলঝুরি চললো প্রায় তিন ঘণ্টা। বললেন, আরও কথা আছে; যা শোনাতে গণমাধ্যমের সঙ্গে বসবেন বার বার।
অনুষ্ঠানে মাহফুজ আহমেদের গল্পের ফাঁকে প্রজেক্টরে দেখানো হয় ‘প্রহেলিকা’র গান ‘মেঘের নৌকা’। আসিফ ইকবালের কথায় গানটি গেয়েছেন ইমরান ও কোনাল। আর পর্দায় সেই গানে নেচেছেন, ঠোঁট মিলিয়েছেন এবং রোমান্টিকতায় মেখেছেন মাহফুজ আহমেদ ও শবনম বুবলী। যে গানটি দেখে ও শুনে মুগ্ধতায় ভেসেছেন উপস্থিতরা। বুবলীর বিপরীতে অভিনেতার ফিটনেস, স্বতঃস্ফূর্তটা আর এক্সপ্রেশন দেখে প্রকাশ করেছেন বিস্ময়।
রঙ্গন মিউজিক প্রযোজিত ‘প্রহেলিকা’ চয়নিকা চৌধুরীর দ্বিতীয় সিনেমা। এটির কাহিনি, চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন পান্থ শাহরিয়ার। ছবিটি মুক্তি পাবে শিগগিরই। 
ছবি: জনি হক
