X
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
একুশে পদক ২০২৩

জীবিত অবস্থায় দিয়েছে, এটাই যথেষ্ট: জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়

কামরুল ইসলাম
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৯:২৫আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১:৫৭

রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদক ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য এবার ১৯ জন ব্যক্তি ও দুটি প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে। রবিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব বাবুল মিয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পদকপ্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশ করা হয়।

এ বছর শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গন একুশে পদক পাচ্ছেন: মাসুদ আলী খান (অভিনয়), শিমূল ইউসুফ (অভিনয়), মনোরঞ্জন ঘোষাল (সংগীত), গাজী আবদুল হাকিম (সংগীত), ফজল-এ-খোদা (মরণোত্তর-সংগীত), জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় (আবৃত্তি) ও নওয়াজীশ আলী খান (শিল্পকলা)।

ওপরে বাঁ থেকে- মাসুদ আলী খান, শিমুল ইউসুফ, মনোরঞ্জন ঘোষাল, গাজী আব্দুল হাকিম, ফজল-এ-খোদা ও নওয়াজীশ আলী খান ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক অনুভূতি জানার জন্য যোগাযোগ করা হয় গুণী অভিনেতা ও আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। আলাপের শুরুতে তিনি শব্দহীন হতে চাইলেন। বললেন, ‘একটা গান গাইতে ইচ্ছে করছে- আমার বলার কিছু ছিল না।’

তবু কিছু কথা তো বলার থাকেই। সেগুলো কেমন? জীবনের ৭৬ বসন্ত পেরিয়ে অবশেষে রাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পাচ্ছেন। যে পদকের জন্য অনেকে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকেন। কিন্তু তাদের দলে নিজেকে শামিল করতে নারাজ জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। তার ভাষ্য, ‘আমি এই ধরনের প্রাপ্তিতে নিরাসক্ত। আমি জানিও না আমাকে দিয়েছে। যাহোক, বেটার লেট দ্যান নেভার। অন্তত আমার ছেলেমেয়েদের নিতে হয়নি, জীবিত অবস্থায় দিয়েছে, এটাই যথেষ্ট।’

মূলত অভিনেতা হিসেবেই জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়ের পরিচিতি, খ্যাতি। আবৃত্তিশিল্পী হিসেবে তার সুনাম রয়েছে বটে, তবে অভিনয়ের তুলনায় তা যৎসামান্য। অথচ তাকে অভিনয়ে না দিয়ে পদক দেওয়া হচ্ছে আবৃত্তিতে। এ নিয়ে অবশ্য আক্ষেপ-আফসোস কিছুই নেই তার।

এ প্রসঙ্গে তার মন্তব্য, ‘যারা দিয়েছেন, তারা হয়তো আমার অভিনয় দেখেননি, দেখার সুযোগ পাননি। আমি তো লেখালেখি, অভিনয়, আবৃত্তি তিনটাই করি; এখন তারা কি আমাকে তিনটি পদক দেবেন! আমার চাওয়া-পাওয়া খুব কম, নেই বললেই চলে। ওনারা ভালোবেসে দিয়েছেন, আমিও নেবো। এটাই।’

কথার ফাঁকে উঠে এলো মরণোত্তর সম্মাননা প্রসঙ্গও। মৃত্যুর পর অনেক গুণীজনকে পদক দেওয়া হয়। কিন্তু এই রীতির ঘোর বিরোধিতা করলেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘কোনও মরণোত্তর পুরস্কারে আমার সায় নেই। মরণোত্তর পুরস্কার দেওয়ার মধ্যে একটা কৃপা থাকে এবং তাদের একটা অবহেলাও থাকে। একজন মানুষ আশি-পঁচাশি বছর অবদান রেখে মারা গেছেন, তারপর তাকে সম্মাননা দিলেন। তার মানে এই পঁচাশি বছর পর্যন্ত তাকে চিনলেন না! আমার মনে হয়, এই মরণোত্তর ব্যাপারটা তুলে দেওয়া উচিত। আমরা তাদের জীবিত অবস্থায় কেন স্বীকৃতি দেবো না? জীবিত অবস্থায় দিন, যাতে তিনি জেনে যান তাকে রাষ্ট্র মনে রেখেছে।’

একুশে পদক প্রাপ্তিতে রাষ্ট্রের পাশাপাশি নিজেকেও ধন্যবাদ দিলেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। সেটা এভাবে, ‘আমি যদি পাঁচ বছর আগে মারা যেতাম! এজন্য তাদেরও ধন্যবাদ জানাচ্ছি, আবার নিজেকেও ধন্যবাদ দিচ্ছি এটা পাওয়া পর্যন্ত বেঁচে আছি বলে! (হাসি)’

জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় নিজের পদকপ্রাপ্তির চেয়েও জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় বেশি আনন্দিত হয়েছেন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের প্রাপ্তিতে। এ বছর সমাজসেবার জন্য একুশে পদক পাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। খবরটি শুনে অভিনেতা-আবৃত্তিশিল্পীর অনুভূতি, ‘আমি নিজের চেয়েও চারগুণ খুশি হয়েছি বিদ্যানন্দ পাওয়াতে। তারা কিছু দিন আগে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, নোংরামির শিকার হয়েছিল। শুধু নামটা বিদ্যানন্দ হওয়ার কারণে। তবে তারা তাতে ভ্রূক্ষেপ করেননি। বরং নীরবে নিজেদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। কোনও প্রচার-প্রসারের উদ্দেশ্যে নয়, শুধু মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। যিনি এর উদ্যোক্তা, তিনি যে স্বেচ্ছাসেবী দল গড়ে তুলেছেন, এটা অভূতপূর্ব।’

সবশেষে জীবন নিয়ে সন্তুষ্টির সুরে জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘আমার পাওয়াটা বড় কথা নয়। কোনও প্রাপ্তির জন্য জীবনে কিছু করিনি। না পেলেও কোনও আফসোস ছিল না। আর আমি যে পেয়েছি, নিজেই তো জানতাম না। কারা আমার নাম দিয়েছে, তাও জানি না।’

উল্লেখ্য, ১৯৪৬ সালের ২৮ জুলাই সাতক্ষীরায় জন্মগ্রহণ করেন এই অভিনেতা। পারিবারিক ঐতিহ্য থেকেই পেয়েছেন গান, কবিতা আর অভিনয়ের চর্চা। সত্তরের দশকের গোড়ার দিকেই পেশাদার জীবন শুরু হয় তার। ১৯৮৮ সাল থেকে কাজ করছেন সিনেমায়। নাটকে তিনি অতি পরিচিত মুখ। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে আলোচিত ওয়েব সিরিজ ‘কারাগার’-এও দেখা গেছে জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়কে।  

/কেআই/এমওএফ/
সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
রাইমা নাকি সুচিত্রা!
রাইমা নাকি সুচিত্রা!
জুনে ‘সংবাদ’ তৈরিতে নামছেন তারা
জুনে ‘সংবাদ’ তৈরিতে নামছেন তারা
সন্ধ্যায় করতালি পেয়ে সেলেনার কান্না, রাতে কেট ব্ল্যানচেটের আলো
কান উৎসব ২০২৪সন্ধ্যায় করতালি পেয়ে সেলেনার কান্না, রাতে কেট ব্ল্যানচেটের আলো
বাবার জন্মশতবর্ষে কন্যার বর্ণিল আয়োজন
স্মরণে কলিম শরাফীবাবার জন্মশতবর্ষে কন্যার বর্ণিল আয়োজন
ঢাকায় প্রথমবার ‘পপাই’র একক কনসার্ট
ঢাকায় প্রথমবার ‘পপাই’র একক কনসার্ট