দেশের সংগীত বাজার ক্রমশ নিচের দিকেই নামছে। দুঃখজনক হলেও এটা সত্যি। এমন অশনি সংকেতের মধ্যেও যখন একটি প্রতিষ্ঠান টানা চার দশক টিকে থাকে, তখন সেটা বড় বিষয় বটে। প্রতিষ্ঠানটির নাম জি সিরিজ। দেশের সংগীতাঙ্গনে এই প্রযোজনা ও পরিবেশনা লেভেলের ভূমিকা কতখানি, তা বাড়িয়ে বলা নিষ্প্রয়োজন।
রবিবার (৫ মার্চ) জি সিরিজের ৪০ বছর পূর্তি উদযাপন করা হয়েছে। রাজধানীর বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে নানা আয়োজনে একটি সন্ধ্যা কাটিয়েছেন প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট ও সংগীতাঙ্গনের মানুষেরা।
সন্ধ্যা ৬টার দিকে অনুষ্ঠান শুরু হয়। শুরুতেই জি সিরিজের প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে বর্তমান অব্দি জার্নির টুকরো অংশ নিয়ে তৈরি করা একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়। এরপর মঞ্চে ওঠেন কিংবদন্তি গীতিকবি, সুরকার ও সংগীত পরিচালক প্রিন্স মাহমুদ।
তিনি বলেন, ‘জি সিরিজের সঙ্গে আমাদের অনেক সুন্দর স্মৃতি আছে, সব তো বলা সম্ভব না। এখনও জি সিরিজ গানে বিশ্বাস করে, একটার পর একটা গান প্রকাশ করে আসছে, এজন্য তাদের ধন্যবাদ। প্রতিষ্ঠানটির সবাইকে অনেক শুভেচ্ছা আমাদের সুন্দর পথের সহযাত্রী হবার জন্য।’
এরপর দেশের প্রয়াত গুণী শিল্পীদের স্মরণ করা হয় ভিডিওচিত্রের মাধ্যমে। এই স্মরণ তালিকায় ছিলেন আব্দুল জব্বার, আজম খান, বারী সিদ্দিকী, ফকির আলমগীর, শাহনাজ রহমতুল্লাহ, লাকী আখন্দ, সুবীর নন্দী, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল, এন্ড্রু কিশোর, সঞ্জীব চৌধুরী, আইয়ুব বাচ্চু প্রমুখ।
সংগীতশিল্পী তপুও এসেছেন অনুষ্ঠানে। তিনি বলেন, ‘আমার যাত্রা জি সিরিজ থেকেই। তারা গান রিলিজ করছে বলে সবাই আমাকে চিনেছে। আগামীতে তারা আরও অনেক শিল্পীকে সুযোগ করে দিক, এই প্রত্যাশা।’
আনন্দ-উদযাপনের মাঝে বিষাদের অংশ হয়ে ধরা দেন অকাল প্রয়াত গীতিকবি ও সাংবাদিক ওমর ফারুক বিশাল। যিনি গেলো বছর সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। তাকে ঘিরে একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়।
সশরীরে উপস্থিত থাকতে না পারলেও ভিডিও বার্তায় শুভেচ্ছা পাঠিয়েছেন অনেক তারকা। এরমধ্যে আছেন নচিকেতা, মাকসুদ, নকীব খান, ফোয়াদ নাসের বাবু, বাপ্পা মজুমদার, আরমান খান, সাকিব চৌধুরী, জয়া আহসান, জায়েদ খান, জাকিয়া বারী মম, নাজিয়া হক অর্ষা, লিংকন, পথিক নবী, শারমিন সুলতানা সুমী প্রমুখ।
জি সিরিজের প্রতিষ্ঠাতা ও কর্ণধার নাজমুল হক ভুঁইয়া খালেদ বলেন, ‘এই চল্লিশ বছর চলার পথে অনেক বাধা প্রতিকূলতা পেরোতে হয়েছে। মিউজিক এমন একটা পেশা, যেটার মধ্যে অনেক উত্থান-পতন হয়। করোনার সময়ে সেটা ভালোভাবে বোঝা গেছে। আমাদের এখানে আসলে দেখার কেউ নেই, কোনও অভিভাবক নেই। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে গেছে, কিন্তু আমরা এমন ইন্ডাস্ট্রি বানাতে পারিনি, যেখানে শিল্পীরা স্বাবলম্বী হবে। কেউ একজন তারকা হলে অন্যজনকে নিয়ে ভাবে না, সহযোগিতা করে না। এটা দুঃখজনক। পারলে এই ইন্ডাস্ট্রির মানুষকে সহযোগিতা করুন। এটুকু অবদান প্রত্যেকের রাখা উচিত। আমি যতদিন বেঁচে থাকবো, আপনাদের সঙ্গেই থাকবো।’
এরপর কেক কেটে চার দশক পূর্তি উদযাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে দুজন গুণী ব্যক্তিকে সম্মাননাও দেওয়া হয়েছে। একজন সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন, অন্যজন প্রয়াত গাজী মাজহারুল আনোয়ার। সবশেষে সংগীতানুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের ইতি ঘটে।
ছবি: কামরুল ইসলাম