রুপালি পর্দায় স্বর্ণালি অধ্যায় রেখে চলে গেলেন নায়ক ফারুক। সত্তর ও আশির দশকে ঢাকাই সিনেমার প্রথম সারির নায়ক ছিলেন তিনি। বহু দর্শকনন্দিত ছবি উপহার দিয়ে যেমন নিজে সফল হয়েছেন, তেমনি শেষ বয়সে এসে অভিভাবক হয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন ইন্ডাস্ট্রিকে। তাই ফারুকের মৃত্যুতে শোকের মাতম বইছে ঢালিউড পাড়ায়।
লম্বা ক্যারিয়ারে অনেক নায়িকার সঙ্গেই জুটি বেঁধেছেন ফারুক। তবে সবচেয়ে সফল বলা যায় ফারুক-ববিতা জুটিকে। তারা একসঙ্গে অনেক কালজয়ী ছবি উপহার দিয়েছেন। ‘আবার তোরা মানুষ হ’, ‘গোলাপি এখন ট্রেনে’, ‘নয়নমণি’, ‘আলোর মিছিল’, ‘লাঠিয়াল’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘মিয়া ভাই’সহ ৩০টির বেশি ছবিতে কাজ করেছেন তারা।
তাই ফারুকের মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না ববিতা। বাংলা ট্রিবিউনকে বিষণ্ন মনে শুনিয়েছেন কিছু স্মৃতি আর শোকাহত অনুভূতি। দুঃসংবাদটি শুনেছেন কিনা জানতে চাইলে ববিতা বললেন, ‘হ্যাঁ শুনেছি। কিন্তু এটা মেনে নিতে পারছি না। অত্যন্ত খারাপ লাগছে। কারণ, কয়েক দিন আগেই ওনার স্ত্রীর বোনের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। বললেন ফারুক ভাইয়ের রক্ত সঞ্চালনে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া তিনি ঠিকঠাক আছেন। শিগগিরই ঢাকায় ফিরবেন। আমি তো শুনে খুশি হলাম। কিন্তু আজ জানতে পারলাম ফারুক ভাই চলে গেলেন! খুব খারাপ লাগছে।’
কথায় কথায় স্মৃতির ডায়েরির পাতা ওল্টাতে লাগলেন ববিতা। এক লহমায় বলে গেলেন, “ক্যারিয়ারের প্রথম থেকেই ফারুক ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করেছি। সেসব ছবি মাইলস্টোন হয়ে আছে। ‘নয়নমণি’, ‘গোলাপি এখন ট্রেনে’, ‘আবার তোরা মানুষ হ’ সব বিখ্যাত ছবি। আমরা যখন শীতের মধ্যে সেই মানিকগঞ্জে শুটিং করতাম, অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকতাম, কখন আমাদের শট আসবে। কত কত স্মৃতি তার সঙ্গে মিশে আছে। সব যেন চোখে ভাসছে।”
অন্য সবার মতো ববিতাও অপেক্ষায় ছিলেন ফারুক সুস্থ হয়ে দেশে ফিরবেন। কিন্তু সেই অপেক্ষা আর ঘুচলো না। ববিতার ভাষ্য, ‘ফারুক ভাই মানুষ হিসেবেও অসাধারণ ছিলেন। কী বলবো! কথা বের হচ্ছে না মুখ দিয়ে। ভাবতেই পারিনি তিনি চলে যাবেন। আমার মনে বিশ্বাস ছিল, চিকিৎসা নিচ্ছেন, ঠিকই তিনি ফিরে আসবেন। কিন্তু কী থেকে কী হয়ে গেলো! শরীরের ব্যাপারে আসলে কেউ তো কিছু বলতে পারে না। কখন কী হয়!’
ফারুকের সঙ্গে শেষ দেখার কথা মনে পড়লো ববিতার। সেটা ২০১৮ সালে, ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৬’র মঞ্চে। ওই আসরে যৌথভাবে আজীবন সম্মাননা পেয়েছিলেন তারা। ওই স্মৃতির টুকরো অংশ শেয়ার করলেন ববিতা, ‘আমরা যখন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে একসঙ্গে আজীবন সম্মাননা নিয়েছি, সেদিনই শেষ দেখা হয়েছিল। ওই সময় তার সঙ্গে অনেক কথা হয়েছিল। সবার সামনে মাইক্রোফোনে তাকে নিয়ে কত কথা বললাম।’
ফারুক অসুস্থ হওয়ার পর আর কখনও ফোন করেননি ববিতা। কেন? কারণটা ব্যাখ্যা করলেন এভাবে, ‘ফোন করতে পারতাম না; ফোন করে কী জিজ্ঞেস করবো? আপনি কেমন আছেন? কেমন চলছে? একজন অসুস্থ মানুষকে এসব কি জিজ্ঞেস করা যায়! এ জন্য দোয়া করতাম, তিনি যেন সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন। যাহোক, এখন আল্লাহর কাছে এটাই প্রার্থনা, তাকে যেন বেহেশত নসিব করেন।’
সবশেষে নায়কের স্ত্রী ফারহানা ফারুকের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন ববিতা। বললেন, ‘ফারুক ভাইয়ের স্ত্রীও একজন অসাধারণ নারী। তার এত যত্ন করেছিলেন। ফারুক ভাই সিঙ্গাপুরে অসুস্থ হয়ে আছেন, আর দিনরাত এক করে ওনার স্ত্রী সেবা করেছেন। খেতে পারতেন না, কত কষ্ট করে খাওয়াতেন। এই পরিবারকে কীভাবে সান্ত্বনা দেবো, বুঝতে পারছি না।’