যশোরে শুরু হলো ১৭ দিনব্যাপী দ্বিতীয় দক্ষিণ এশীয় নাট্যোৎসব। বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় টাউন হল মাঠে উৎসবের উদ্বোধন করেন অভিনেতা-নির্মাতা সালাহউদ্দীন লাভলু এবং নাট্যকার মাসুম রেজা।
উদ্বোধনী দিনে খোলা মাঠে অনুষ্ঠিত হয় উঠান যাত্রাপালা। দীর্ঘদিন পর যাত্রাপালা দেখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন দর্শকরা। আর এমন আয়োজনে যোগ দিতে পেরে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন দুই উদ্বোধক। বিস্ময় প্রকাশ করে জানালেন তারা, এত লম্বা উৎসব আয়োজনের কথা তারা ঢাকা শহরেও ভাবতে পারেন না, যেটা করে দেখালো যশোর।
থিয়েটার ক্যানভাস যশোরের উদ্যোগে ‘সংস্কৃতি জাগরূক প্রাণ- থিয়েটার শিখা অনির্বাণ’ স্লোগান সামনে রেখে আয়োজন করা হয়েছে এ নাট্যোৎসবের। উৎসবের প্রতিদিন সন্ধ্যায় বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের প্রথিতযশা ১৬টি নাট্যদল তাদের নাটক মঞ্চস্থ করবে।
উদ্বোধনী দিনে টাউন হল মাঠে প্রস্তুত করা উঠানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের পরিবেশনায় মঞ্চস্থ হয় যাত্রাপালা ‘বিদ্রোহী মাইকেল মধুসূদন’।
আয়োজনের প্রথম দিনে এসেছেন স্থানীয় আমির হোসেন মৃধা। তিনি বলেন, ‘প্রায় ৩০ বছর পর যাত্রাপালা দেখলাম। যাত্রার প্রতি বাঙালির অন্যরকম একটা টান রয়েছে। আজকে দর্শকদের উপস্থিতি সেটা প্রমাণ করেছে। তাছাড়া যারা মঞ্চে অভিনয় করেছেন, তাদের উপস্থাপনাও ছিল খুব সুন্দর।’
সাথী শাহরিয়ার নামে অপর এক দর্শক বলেন, ‘দাদা-দাদির কাছে শুনেছি তারা উঠান যাত্রা দেখতেন। আমাদের প্রজন্ম এখন তো যাত্রা দেখতেই পায় না। খোলা মাঠে উঠোনের পরিবেশ তৈরি করে যাত্রা আয়োজন করায় খুব ভালো লেগেছে। শিল্পীরা তাদের অভিনয়ের মাধ্যমে আমাদের মুগ্ধ করেছেন।’
নাট্যোৎসব উদযাপন পর্ষদের সদস্য সচিব কামরুল হাসান রিপন বলেন, ‘আমরা দ্বিতীয়বারের মতো নাট্য উৎসবের আয়োজন করেছি। এবারের আয়োজনটি ১৭ দিনব্যাপী। অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজটি করতে হচ্ছে। মানুষের যে উপস্থিতি তা আমাদের উৎসাহ যোগাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে থিয়েটারমুখী করতেই এ আয়োজন করা হয়েছে।’
তিনি আরও জানান, জেলা শিল্পকলা একাডেমি মঞ্চে প্রতিদিন সন্ধ্যায় নাটক মঞ্চস্থ হবে।
এদিকে, ঢাকার বাইরে এমন আয়োজনে যোগ দিতে পেরে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন অভিনেতা-নির্মাতা সালাহউদ্দীন লাভলু। তিনি বলেন, ‘আমরা ঢাকার লোকজনও এত লম্বা (১৭ দিনব্যাপী) আয়োজনের কথা ভাবতে পারি না। সেখানে যশোরের নবীনতম একটি নাট্যদল থিয়েটার সেই সাহস দেখাচ্ছে। নাটকের মাধ্যমে সুষ্ঠু সমাজ বিনির্মাণের যে উদ্যোগ তারা নিয়েছে, তার জন্যে আমি আপ্লুত।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার। আবৃত্তি শিল্পী ও মঞ্চ অভিনেতা আবদুল আফফান ভিক্টরের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকার নটরডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক নাফিসা সুলতানা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কামাল উদ্দিন কবির, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাহমুদ হাসান বুলু প্রমুখ।
এর আগে বিকালে টাউন হল ময়দান থেকে অতিথিবৃন্দের নেতৃত্বে শোভাযাত্রা বের করা হয়। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একই স্থানে যেয়ে শেষ হয়।
আজ, শুক্রবার জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হবে ঢাকা নাটুকে থিয়েটার গ্রুপের প্রযোজনায় ‘ঠাকুর ঘরে কে রে’, পরদিন ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশ নাটক ঢাকার প্রযোজনায় ‘পারাপার’, ২৬ ফেব্রুয়ারি শব্দ থিয়েটার যশোরের প্রযোজনায় ‘শয়তান’, ২৭ ফেব্রুয়ারি থিয়েটার ক্যানভাস যশোরের প্রযোজনায় ‘ওথেলো রিটার্নস’, ২৮ ফেব্রুয়ারি বিবর্তন যশোরের প্রযোজনায় ‘মাতব্রিং’, ২৯ ফেব্রুয়ারি শব্দ নাট্যচর্চা কেন্দ্র ঢাকার প্রযোজনায় ‘কী চাহ শঙ্খচিল’, ১ মার্চ বাতিঘর থিয়েটার ঢাকার প্রযোজনায় ‘মাংকি ট্রায়াল’, ২ মার্চ প্রাচ্যনাট ঢাকার প্রযোজনায় ‘কইন্যা’, ৩ মার্চ- ভারতের মধ্যমগ্রামের নৃত্যবিতানের প্রযোজনায় ‘ওয়ান ফ্রাইডে মর্নিং’, ৪ মার্চ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের অভিমুখ’র প্রযোজনায় ‘অনাগত’, ৫ মার্চ তির্যক যশোরের প্রযোজনায় ‘মহাকবি মাইকেল’, ৬ মার্চ ফেইম স্কুল অব ডান্স, ড্রামা অ্যান্ড মিউজিক চট্টগ্রামের প্রযোজনায় ‘ইডিপাস’, ৭ মার্চ কথাঘেরা নেপালের প্রযোজনায় ‘উলঝান’, ৮ মার্চ জাগরণী থিয়েটার ঢাকার প্রযোজনায় ‘রাজার চিঠি' এবং সমাপনী দিন ৯ মার্চ মঞ্চস্থ হবে জেলা শিল্পকলা একাডেমি যশোরের প্রযোজনায় নাটক ‘শর্মিষ্ঠা’।
