X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১
স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২৪

খুশি মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান: ‘আবেদন না করেও পাওয়া যায়!’

সুধাময় সরকার
১৫ মার্চ ২০২৪, ১৬:১৮আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২৪, ১২:০৯

পদক নিয়ে দীর্ঘ ও গভীর ক্ষোভ রয়েছে কিংবদন্তি গীতিকবি-চিত্রনাট্যকার মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানের ভেতর। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় বা জাতীয় স্বীকৃতি নিয়ে। এমনকি তিনি প্রকাশ্যে এ বিষয়ে সমালোচনা করছেন বহু দিন ধরে। বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছিলেন অযোগ্যদের চাপে কেমন করে এসব পদক হাতছাড়া হয়ে যায় যোগ্যদের।

কবির মতো করে এতটা কঠোর ভাষায় এসব স্বীকৃতি নিয়ে আর কেউ বলেছেন বলে নজির নেই। থাকলেও সেসব অস্ফুট স্বরে। ফলে অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, এমন প্রকাশ্য সমালোচনার কারণে মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান সবক’টি রাষ্ট্রীয় পদকের যোগ্য হয়েও সম্ভবত রাষ্ট্রের রোষানলেই পড়ে থাকবেন। তবে, সেই ধারণা ভুল প্রমাণ করলো রাষ্ট্র তথা সংশ্লিষ্টরা।

সংস্কৃতিতে জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানকে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ প্রদান করার গেজেট প্রকাশ করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ১৫ মার্চ প্রকাশিত এই গেজেটে জানানো হয় বিভিন্ন অঙ্গনের এমন আরও ৯ জন কৃতী সন্তানের নাম।

গেজেট প্রকাশের পরেও শঙ্কা ছিল, এমন প্রাপ্তির খবরে প্রতিক্রিয়া কেমন দেন মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান। কারণ, তিনি আগেই বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছিলেন রাষ্ট্রীয় এমন কোনও পদক দিলেও তিনি গ্রহণ করবেন না।

তবে শুক্রবার (১৫ মার্চ) বেলা আড়াইটায় মুঠোফোনে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া ও তথ্য মেলে মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানের কণ্ঠে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ব্যাপারটা হয়েছে খুশি হয়েছি খবরটি পেয়ে। খুশি হওয়ার কারণ, পদক পাচ্ছি সেটাও কিন্তু নয়। মূল খুশির কারণ, সরকারের কাছে আবেদন না করেও যে এমন পদক পাওয়া যায়, সেটা ভেবে। আমি এ পর্যন্ত কোনও পদক ও প্রাপ্তির জন্য আবেদন করিনি। আমি জানি না, আমার হয়ে অন্য কেউ করেছেন কিনা। সেটাও জানি না। এই না জানার মধ্যে অপ্রত্যাশিতভাবেই পদকটির খবর পেলাম। এটা সত্যিই ভালো লাগার বিষয়।’

মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান পরিবেশ বদলাতে প্রায়শই ঢাকার চার দেয়াল থেকে বেরিয়ে সস্ত্রীক চলে যান যশোরে, বাবার বাড়িতে। পদকপ্রাপ্তির খবরটি যশোরে বসেই পেয়েছেন। তবে সরকারিভাবে কেউ এখনও তার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ করেননি বিষয়টি নিয়ে। রফিকউজ্জামান বলেন, ‘এই প্রাপ্তি বা অপ্রাপ্তি প্রসঙ্গে আরও বিস্তারিত বলতে পারবো, আনুষ্ঠানিকভাবে কথা হলে। আমাকে দ্রুত ঢাকায় যেতে বলেছেন কেউ কেউ। ভাবছি কালই (১৬ মার্চ) ঢাকায় যাবো। এরপর নিশ্চয়ই দাফতরিকভাবে সংশ্লিষ্টরা যোগাযোগ করবেন। তবে তার আগে ধন্যবাদ জানাতে চাই বাংলাদেশ সরকারকে, তারা আমাকে নিজ দায়িত্বে এই পদকের যোগ্য মনে করেছেন বলে।’

অনেকেই জানেন, তবু বলা, গীতিকবি মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান তিনবার (১৯৮৪, ১৯৮৬, ২০০৮) জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। অনেকেই মনে করেন এই সংখ্যাটা কমপক্ষে দ্বিগুণ হতে পারতো। মূলত কেন হয়নি সেই প্রশ্নের জবাবে গীতিকবি বেশ আক্ষেপ নিয়ে বলেন তার বেদনার কথা। সাম্প্রতিক এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘৯৫ সাল। তখন আমার পেনশন কেসটা ঝুলছিল। বিএনপি সরকার ক্ষমতায়। আমার বন্ধু তরিকুল ইসলাম তথ্যমন্ত্রী ছিল। তারপরও আমার পেনশন হচ্ছিল না। ওই হয়, হয় না। ঘুরতে থাকলাম। একদিন পেনশনের খোঁজ নিতে গেছি মন্ত্রণালয়ে। যাওয়ার পরে অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি দৌড়ে এসে বললো, ‘আরে রফিক ভাই, আপনার তো দারুণ সুখবর আছে’। আমি বললাম, আমার পেনশনের ফাইল সই হয়েছে? সে বললো, ‘আরে না না, আসেন’। একেবারে টেনে নিয়ে গেছে ভেতরে। দেখালো, ফিল্ম জুরি বোর্ড তিন বছরের পুরস্কার একসঙ্গে দিচ্ছে। গান আর চিত্রনাট্য মিলিয়ে আমি একসঙ্গে সাতটা পুরস্কার পাচ্ছি! জুরি বোর্ড থেকেই এই রায় এসেছে। তারপর যখন পত্রিকায় চূড়ান্ত তালিকা দেখলাম, কোথাও নেই আমি! একটি পদকও পাইনি।’’

মূলত সেই ঘটনার পরই কবি সিদ্ধান্ত নেন জাতীয় কোনও পদক না গ্রহণের। তিনি বলেন, ‘‘এসব ঘটনার পরেই আমি ঘোষণা দিয়েছি, জাতীয় বা রাষ্ট্রীয় কোনও পুরস্কার বা পদক আমি পেলেও গ্রহণ করবো না। কখনোই না। সেটা যে সরকারই হোক, যে কারণেই হোক। এসব অনেক কিছু হয়, অনেক কিছুই ঘটে জীবনে। এগুলো নিয়ে আমার কিন্তু কোনও ক্ষোভ নেই। শেষবার ২০০৮ সালে যখন পুরস্কার নিয়ে বের হই, আমাকে কয়েকজন সাংবাদিক বললেন, ‘রফিক ভাই আপনার অনুভূতি বলেন’। বললাম, ভাই গরিব মানুষ আমি। টাকা পয়সার খুব অভাব। এক লাখ টাকা পেয়েছি, খুব কাজে লাগবে। এটার জন্য ধন্যবাদ। ওরা বললো, ‘আর ট্রফি?’ তখন আমি এগিয়ে দিয়ে বললাম, নিয়ে যান এটা। আমার কোনও দরকার নেই।’’

১৯৬৫ সাল থেকে বাংলাদেশে বেতারে নিয়মিত গীতিকার হিসেবে লিখছেন মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান। তার প্রকাশিত গানের সংখ্যা দুই হাজারের বেশি। ১৯৭৩ সাল থেকে তিনি নিয়মিত চলচ্চিত্রের জন্য গান লিখছেন। প্রায় শতাধিক চলচ্চিত্রের জন্য গান লিখেছেন তিনি। ১৯৬১-১৯৮৭ সাল পর্যন্ত মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান মঞ্চ, বেতার ও টেলিভিশনের জন্য শতাধিক নাটক লিখেছেন ও অভিনয় করেছেন।

তার লেখা উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে রয়েছে, সেই রেললাইনের ধারে মেঠো পথটার পারে দাঁড়িয়ে, বন্ধু হতে চেয়ে তোমার শত্রু বলে গণ্য হলাম, দুঃখ আমার বাসর রাতের পালঙ্ক, আমার মতো এত সুখী নয়তো কারও জীবন, ভালোবাসা যত বড় জীবন তত বড় নয়, আমার মন পাখিটা যায়রে উড়ে যায়, পদ্ম পাতার পানি নয়, মাঠের সবুজ থেকে সূর্যের লাল, কিছু কিছু মানুষের জীবনে ভালোবাসা চাওয়াটাই ভুল, মনটা সবাই দিতে পারে আমি তোমায় প্রাণটা দিতে চাই প্রভৃতি।

১০ বিশিষ্টজনকে দেওয়া হচ্ছে স্বাধীনতা পুরস্কার

অনেক কিছুই ইচ্ছে করে, কিন্তু করা যায় না: মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান

/এমএম/এমওএফ/
সম্পর্কিত
‘ফিরতে হবে গাজী মাজহারুল আনোয়ারদের কাছেই’
‘ফিরতে হবে গাজী মাজহারুল আনোয়ারদের কাছেই’
অনেক কিছুই ইচ্ছে করে, কিন্তু করা যায় না: মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান
গীতিকবির গল্পঅনেক কিছুই ইচ্ছে করে, কিন্তু করা যায় না: মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান
গীতিকবিতায় মুগ্ধতা ও শুদ্ধতার নাম মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান
শুভ জন্মদিনগীতিকবিতায় মুগ্ধতা ও শুদ্ধতার নাম মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান
রয়্যালটি নিয়ে ক্ষুব্ধ মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান, তথ্যমন্ত্রীর প্রতি আবেদন
রয়্যালটি নিয়ে ক্ষুব্ধ মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান, তথ্যমন্ত্রীর প্রতি আবেদন
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
কানাডার স্টেডিয়ামে রেকর্ড গড়লেন দিলজিৎ
কানাডার স্টেডিয়ামে রেকর্ড গড়লেন দিলজিৎ
আট গল্পের প্রদর্শনী ‘অল দ্যাট ওয়েদারস’
আট গল্পের প্রদর্শনী ‘অল দ্যাট ওয়েদারস’
অপু-বুবলীর ‘কথাযুদ্ধ’ চলমান, মাঝে শাকিবের বিয়ে গুঞ্জন!
অপু-বুবলীর ‘কথাযুদ্ধ’ চলমান, মাঝে শাকিবের বিয়ে গুঞ্জন!
ইরফান খান: জীবনের মোড় ঘুরেছিল ২০০ রুপির অভাবে!
প্রয়াণ দিনে স্মরণইরফান খান: জীবনের মোড় ঘুরেছিল ২০০ রুপির অভাবে!
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!