X
সোমবার, ২০ মে ২০২৪
৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

কবিগুরুর ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী: গঠিত হলো সোসাইটি, দেশজুড়ে বর্ণিল আয়োজন

বিনোদন রিপোর্ট
০৮ মে ২০২৪, ০৮:০৫আপডেট : ০৮ মে ২০২৪, ০৮:০৫

শিল্প-সাহিত্যের প্রায় সব শাখায় দাপটের সঙ্গে বিচরণ করা বিরল ব্যক্তিত্ব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, গান, ছোটগল্প, চিত্রকর্মসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনন্য দ্যুতি ছড়িয়েছেন তিনি। তাই তাকে কবিগুরু, বিশ্বকবি ইত্যাদি নামে অভিহিত করেন ভক্ত-অনুরাগীরা। আজ (২৫ বৈশাখ) কিংবদন্তি এই সাহিত্যিকের জন্মদিন।

বরাবরের মতো এবারও রবি ঠাকুরের জন্মদিন উপলক্ষে দেশজুড়ে বহু অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এবার জাতীয়ভাবে কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপনের প্রতিপাদ্য ‘সোনার বাংলা স্বপ্ন ও বাস্তবতা: রবীন্দ্রনাথ থেকে বঙ্গবন্ধু’। এই প্রতিপাদ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বর্ণিল সব আয়োজন থাকছে।

কবির স্মৃতি বিজড়িত খুলনার ফুলতলা উপজেলার দক্ষিণডিহি রবীন্দ্র কমপ্লেক্সে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে থাকছে তিন দিনব্যাপী কর্মসূচি। কুষ্টিয়ার শিলাইদহ কুঠিবাড়িকে সাজানো হয়েছে নতুন সাজে। সেখানে চলছে দুই দিনব্যাপী আয়োজন। গান, কবিতার আসর ছাড়াও থাকছে রবীন্দ্র মেলা।

পিরোজপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বর্ণিল আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নৃত্য, আবৃত্তি, রবীন্দ্রসংগীতসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভায় কবিগুরুকে স্মরণ করা হবে। 
এদিকে বিশ্বকবির জন্মবার্ষিকী পালনের জন্য দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ফলে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদরাসায়ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আয়োজনের মধ্যে রয়েছে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রচনা ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতা ইত্যাদি। 

এদিকে চার দশক ধরে প্রতি বছরই ঘটা করে হয়ে আসছে জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত উৎসব। রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে এত বড় উৎসব আর হয় না এই বাংলায়। সেই ধারাবাহিকতায় এবারও রাজধানীর বুকে বসতে যাচ্ছে তিন দিনব্যাপী উৎসব। আয়োজনে বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থা।

চলছে জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত উৎসব-এর মহড়া ৯ থেকে ১১ মে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে হবে এই উৎসব। উৎসবটি উৎসর্গ করা হয়েছে অকাল প্রস্থানে যাওয়া সাদি মহম্মদ স্মরণে। ফলে আগাম অনুমান করা যায়, এবারের উৎসবজুড়ে থাকছে নাচ-গান-আবৃত্তি আর আলোচনায় মোড়ানো সুরেলা মেলবন্ধনের প্রতিধ্বনি। জানিয়েছেন সংগঠনের নির্বাহী সভাপতি আমিনা আহমেদ। এই সংগঠক ও রবীন্দ্রসংগীশিল্পী বলেন, ‘কবিগুরুর জন্মদিন ঘিরে এবারের উৎসবটি আমাদের কাছে যেমন আনন্দের তেমনই বেদনার বার্তা বহন করে। আপনারা জানেন, কিংবদন্তি শিল্পী ও সাংস্কৃতিক সংগঠক, রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কলিম শরাফীর শততম জন্মবার্ষিকী ৮ মে। সেটি আমরা ৯ মে উৎসবের উদ্বোধনী দিনে পালন করবো ঘটা করে। আপনারা আরও জানেন, আরেক সংগঠন রবিরাগ-এর প্রতিষ্ঠাতা আমাদের অত্যন্ত প্রিয় সাদি মহম্মদ চলে গেলেন এই তো সেদিন। তাই পুরো উৎসবটি এবার তাঁর প্রতি উৎসর্গ করছি আমরা। আমাদের প্রস্তুতি চলছে দারুণ উৎসাহের মাধ্যমে। আশা করছি ভালো কিছু হবে।’

অন্যদিকে কবিগুরুর ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে ৬ মে ঢাকায় গঠিত হয়েছে ‘টেগোর সোসাইটি’। যার মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্য, সংগীত আর দর্শনকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে কাজ করবে বলে জানান এর সভাপতি ড. চঞ্চল খান। তিনি বলেন, ‘আমরা রবীন্দ্রনাথের যে ফিলোসফিগুলো আছে সেগুলোকে আরেকটু ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবো এই সোসাইটির মাধ্যমে।’ 

১৮৬১ সালের ৭ মে (২৫ বৈশাখ) ব্রিটিশ ভারত অর্থাৎ বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের জোড়াসাঁকোয় জন্মগ্রহণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সমৃদ্ধ পরিবারে জন্মের সুবাদে ছোটবেলা থেকেই সাহিত্য-শিল্পের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে তার। আর সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত প্রতিভায় তিনি ছিলেন অনন্য। যার সুবাদে শুরু করেন সাহিত্যচর্চা। ১৮৭৮ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে প্রকাশিত হয় তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘কবিকাহিনী’।

পুরোটা জীবন লেখালেখিতে কাটিয়েছেন রবিঠাকুর। ফলে তার সৃষ্টিকর্মের সংখ্যাও বিপুল। ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস, ৩৬টি প্রবন্ধ ও ৯৫টি ছোটগল্প রচনা করেছেন তিনি। এর বাইরে তার রচিত গানের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। এটাই শেষ নয়, চিত্রশিল্পী হিসেবেও তার প্রতিভা ছিল অনন্য। জীবদ্দশায় প্রায় দুই হাজার ছবি এঁকেছিলেন তিনি।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ঘিরে শিক্ষার্থীরা ১৯১৩ সালে ‘গীতাঞ্জলী’ কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য এশিয়া মহাদেশের মধ্যে প্রথম সাহিত্যিক হিসেবে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাংলা ভাষায় শ্রেষ্ঠ কবি কিংবা সাহিত্যিকদের মধ্যে তার নামটি উচ্চারিত হয় প্রথমেই। তার লেখায় গীতিধর্মিতা, আধ্যাত্মচেতনা, ঐতিহ্যপ্রীতি, প্রকৃতি, মানব, দেশ ও ঈশ্বরপ্রেম যে রূপে ফুটে উঠেছে, তা বাংলা সাহিত্যে বিরল।

বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’ ও ভারতের জাতীয় সংগীত ‘জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে’ রবীন্দ্রনাথের লেখা। তার রচিত গল্প-উপন্যাস অবলম্বনে বিভিন্ন ভাষায় বহু চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো- ‘চারুলতা’, ‘তিন কন্যা’, ‘চোখের বালি’, ‘মেঘে ঢাকা তারা’, ‘কাবুলিওয়ালা’, ‘চতুরঙ্গ’, ‘ডাকঘর’, ‘গোরা’, ‘সুভা’ ইত্যাদি।

১৯০১ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানেই পাকাপাকিভাবে বসবাস শুরু করেন। এর চার বছর পর বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে নাইট উপাধিতে ভূষিত করে। কিন্তু ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি সেই উপাধি ত্যাগ করেন।

১৯৩৭ সালে একবার অচৈতন্য হয়ে গিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থা হয়েছিল কবির। সেবার সেরে উঠলেও ১৯৪০ সালে অসুস্থ হওয়ার পর আর সেরে উঠতে পারেননি। এই সময়ে রচিত রবীন্দ্রনাথের কবিতাগুলো ছিল মৃত্যুচেতনাকে কেন্দ্র করে। মৃত্যুর সাত দিন আগ পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ সৃষ্টিশীল ছিলেন। দীর্ঘ রোগভোগের পর ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট (২২ শ্রাবণ) জোড়াসাঁকোর বাসভবনেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ‘টেগোর সোসাইটি’র অভিষেক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন সভাপতি

/কেআই/এমএম/
সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
লালগালিচা থেকে নেমে ফের বিড়ম্বনায় উর্বশি!
কান উৎসব ২০২৪লালগালিচা থেকে নেমে ফের বিড়ম্বনায় উর্বশি!
কোটি ভিউতে ফারহানের সেঞ্চুরি!
কোটি ভিউতে ফারহানের সেঞ্চুরি!
রাইমা নাকি সুচিত্রা!
রাইমা নাকি সুচিত্রা!
জুনে ‘সংবাদ’ তৈরিতে নামছেন তারা
জুনে ‘সংবাদ’ তৈরিতে নামছেন তারা
সন্ধ্যায় করতালি পেয়ে সেলেনার কান্না, রাতে কেট ব্ল্যানচেটের আলো
কান উৎসব ২০২৪সন্ধ্যায় করতালি পেয়ে সেলেনার কান্না, রাতে কেট ব্ল্যানচেটের আলো