কান চলচ্চিত্র উৎসবের ৭৭তম আসরে শিক্ষার্থী নির্মাতাদের বিভাগ লা সিনেফে প্রথম পুরস্কার জিতলো ভারতীয় তরুণ চিদানন্দ এস নায়েক পরিচালিত ‘সানফ্লাওয়ার্স ওয়্যার দ্য ফার্স্ট ওয়ানস টু নো’। তিনি ভারতের পুনের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার (এফটিআইআই) শিক্ষার্থী। ফলে তার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র আগামীতে কান উৎসবে স্থান করে নেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। একইসঙ্গে পুরস্কার হিসেবে তিনি পেয়েছেন ১৫ হাজার ইউরো (প্রায় ২০ লাখ টাকা)।
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) সন্ধ্যা ৬টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা) ভূমধ্যসাগরের তীরে পালে দে ফেস্টিভ্যাল ভবনের বুনুয়েল থিয়েটারে ২৭তম লা সিনেফ বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। তখন মঞ্চে ছিলেন এবারের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র এবং লা সিনেফ বিভাগে বিচারকদের প্রধান ছিলেন বেলজিয়ান অভিনেত্রী লুবনা আজাবাল।
এছাড়াও ছিলেন লা সিনেফ বিভাগের অন্য চার বিচারক সার্বিয়ান পরিচালক ভ্লাদিমির পেরিসিচ, ফরাসি পরিচালক ম্যারি-ক্যাস্টি মঁচো-শার, ফরাসি প্রযোজক ক্লদিন নুগারে, ডিরেক্টর’স ফোর্টনাইটের সাবেক পরিচালক পাওলো মোরেত্তি। পুরস্কার প্রদান শেষে দেখানো হয় বিজয়ী ছবিগুলো।
‘সানফ্লাওয়ার্স ওয়্যার দ্য ফার্স্ট ওয়ানস টু নো’ ছবির ব্যাপ্তি ১৬ মিনিট। এর গল্পে দেখা যায়, গ্রামের এক বৃদ্ধা মহিলা মোরগ চুরি করার পর আর সূর্যোদয় হয় না। এ কারণে গ্রামীণ সম্প্রদায়ে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। মোরগটিকে ফিরিয়ে আনতে একটি দৈববাণী আহ্বান করে বৃদ্ধার পরিবারকে নির্বাসনে পাঠানো হয়।
তৃতীয় হয়েছে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন স্কুলের (এনএফটিএস) ভারতীয় শিক্ষার্থী মানসী মহেশ্বরীর অ্যানিমেটেড ছবি ‘বানিহুড’। পুরস্কার হিসেবে তার হাতে এসেছে ৭ হাজার ৫০০ ইউরো (প্রায় ১০ লাখ টাকা)।
মানসী নিজেই ৯ মিনিট দৈর্ঘ্যের ছবিটির অ্যানিমেশন করেছেন। সত্যি গল্প অবলম্বনে এর চিত্রনাট্য লিখেছেন আনা মুর ও জেমস ডেভিস। মা কি কখনও সন্তানকে মিথ্যা বলে? নিষ্পাপ ববি এই প্রশ্নের উত্তর আবিষ্কার করে যখন তার মাকে হাসপাতালে যেতে হয়। ববি চরিত্রে কণ্ঠ দিয়েছেন মানসী নিজেই।
লা সিনেফের এবারের আয়োজনে যৌথভাবে দ্বিতীয় হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির রুশ শিক্ষার্থী আচিয়া সেগালোভিচ পরিচালিত ‘আউট দ্য উইন্ডো থ্রো দ্য ওয়াল’ এবং গ্রিসের অ্যারিস্টোটল ইউনিভার্সিটি অব থেসালোনিকি’র শিক্ষার্থী নিকোস কোলিয়োকোসের ‘দ্য কেওস শি লেফট বিহাইন্ড’। পুরস্কার হিসেবে তারা ভাগাভাগি করেছেন ১১ হাজার ২৫০ ইউরো (প্রায় ১৫ লাখ টাকা)।
‘আউট দ্য উইন্ডো থ্রো দ্য ওয়াল’ ছবির দৈর্ঘ্য ২২ মিনিট। এর গল্পে দেখা যায়, বর্তমান রাশিয়ার নতুন বাস্তবতার সঙ্গে লোকজন খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এরমধ্যে সম্প্রতি প্রাপ্তবয়স্ক সাইকো-নিউরোলজিক্যাল সুবিধা থেকে পালিয়ে আসা এক তরুণের মুখোমুখি হন একজন মানচিত্রকার।
৩৩ মিনিট দৈর্ঘ্যের ‘দ্য কেওস শি লেফট বিহাইন্ড’-এর গল্প আনা নামের এক নারীকে কেন্দ্র করে। তিনি মনে করেন, জীবনটা নিজের হাতে পিছলে যাচ্ছে তার। প্যারিসের এক মিউজিক স্কুলের একটি টিকিট তার স্বপ্ন অনুসরণের শেষ সুযোগ হতে পারে। কিন্তু তার আত্ম-ধ্বংসাত্মক মদ্যপ বাবা বাধা হয়ে দাঁড়ান।
কান উৎসবের সাবেক পরিচালক জিলস ইয়াকব ১৯৯৮ সালে চালু করেন সিনেফঁদাসো বিভাগ। এবার বসেছিল এর ২৭তম আসর। এতে জমা পড়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৫৫৫টি ফিল্ম স্কুলের ২ হাজার ২৬৩টি ছবি। সেখান থেকে নির্বাচিত হয় ১৮টি ছবি। এর মধ্যে ১৪টি কাহিনিচিত্র ও চারটি অ্যানিমেটেড ছবি।
আয়োজকরা জানিয়েছে, ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে সিনেমা দ্যু পান্তিওনে আগামী ৩ জুন এবং এমকেটু কে দ্যু চেন প্রেক্ষাগৃহে লা সিনেফ বিভাগের বিজয়ী ছবিগুলোর প্রদর্শনী হবে। কান উৎসবের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে আগামী সপ্তাহে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।