X
বুধবার, ১৫ মে ২০২৪
৩১ বৈশাখ ১৪৩১
কান কথা-৮

মেয়রের নিমন্ত্রণে বিচারকদের সামনে খাওয়া

জনি হক, কান (ফ্রান্স) থেকে
২৩ মে ২০১৯, ১৭:৪৩আপডেট : ২৩ মে ২০১৯, ১৭:৫০


দক্ষিণ ফরাসি উপকূলে প্রায় ৯০০ রেস্তোরাঁ। কিন্তু হাতেগোনা পাঁচ-ছয়টিতে মিলবে ভাত। তাও দাম বাংলাদেশের তুলনায় বহুগুণ। তবে রোজ রাতে বাহারি তরকারির সঙ্গে ভাত খেতে পারছি মেজন দো কারি রেস্তোরাঁয়। সেজান ভাই আর আওরঙ্গ ভাই, প্রতিদিন দুপুরেও মধ্যাহ্নভোজ করার জন্য যেতে বলেন। কান চলচ্চিত্র উৎসবের প্রাণকেন্দ্র পালে দে ফেস্তিভাল ভবন থেকে তিন মিনিট হাঁটা দূরত্বে রেস্তোরাঁটি।

মেয়রের নিমন্ত্রণে বিচারকদের সামনে খাওয়া কিন্তু দিনভর সংবাদ সম্মেলন, লালগালিচার আয়োজন, লেখা, চলচ্চিত্র দেখাসহ ব্যস্ততায় তা আর হয় না। নিয়মিত কাজের মধ্যে আরও আছে প্রেস বক্স নিয়মিত খুলে দেখা। কারণ আয়োজকদের দেওয়া কাগজ বেশি জমে গেলে নতুন তথ্য দেওয়া হয় না। তারা আগেভাগেই জানিয়ে দেন, প্রেস বক্স কোনও লকার নয়। তাই এখানে কিছু জমিয়ে রাখা মানে আপডেট তথ্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হওয়া।
প্রেস বক্সে প্রতি বছরের মতো কান শহরের মেয়র ডেভিড লিসনার্ডের একটি নিমন্ত্রণপত্র এলো। তাতে লেখা, ‘কানের মেজাজে কিছু দারুণ সময় কাটানোর নিমন্ত্রণ জানাচ্ছি। ফরাসি ঢঙের মধ্যাহ্নভোজে এই শহরের উপভোগ্য অন্যরকম একটি দিক সম্পর্কে জানার সুযোগ হবে। উৎসবে অংশগ্রহণকারীদের অনেকেই এই স্বাদ পান না। স্থানীয় সামুদ্রিক মাছ ও ফোরভিল মার্কেট থেকে কেনা সবজি সম্মিলন আনন্দ দেবে।’
মেয়রের নিমন্ত্রণে বিচারকদের সামনে খাওয়া কান উৎসবের ৭২তম আসরে অ্যাক্রেডিটেশন পাওয়া বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকদের সম্মানে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেছেন মেয়র। আমন্ত্রণপত্রে আরও উল্লেখ ছিল, এবারের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগের বিচারকরা দুপুরের খাবারে অংশ নেবেন।  
উৎসবের নবম দিনে বুধবার (২২ মে) ‘ওয়ান্স আপন অ্যা টাইম ইন...হলিউড’ তারকা ব্র্যাড পিট ও লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিওর সংবাদ সম্মেলন শেষ করেই এগোতে থাকলাম কানের ঐতিহাসিক স্থান লে সুকের প্লেস দো লা ক্যাস্তরের দিকে। ভিলেজ ইন্টারন্যাশনাল পান্টিয়েরো পেরিয়ে মিনিট তিনেক হেঁটে সড়ক পেরোতে হলো। ডানদিকে হোটেল ডি ভিল, লজেন্সের ভাস্কর্য, উন্মুক্ত পার্ক, সড়ক বিভাজকে নানান রঙের ফুল চোখে পড়লো। গার দি কানের পর শহরের সবচেয়ে বড় বাসস্ট্যান্ড এদিকেই।
মেয়রের নিমন্ত্রণে বিচারকদের সামনে খাওয়া ভেন্যুতে যেতে মূল সড়ক থেকে পিচঢালা পথে হেঁটে হেঁটে উপরে উঠতে হয়। জায়গাটা বেশ নিরিবিলি। রাস্তার দু’পাশে বাসাবাড়ি। খুব ধীরে ধীরে হাঁটতে হয় এই পথে। হাঁটার গতি বাড়ালে ক্লান্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। পিছচঢালা পথের সমাপ্তি শেষে দুই ধাপ সিঁড়ি বেয়ে আরও উপরে উঠতে হলো। প্লেস দো লা ক্যাস্তরের ফটকে অতিথিদের প্লাস্টিকের গ্লাসে পরিবেশন করা হচ্ছে শরবত।
ভেতরে দু’পাশে বাহারি সাজে দুই হাতে বড় ফুলের মালা ধরে দাঁড়িয়ে আছেন হাসিখুশি কয়েকজন বৃদ্ধা। তাদের পেরিয়ে দেখি ব্যান্ডপার্টির শিল্পীরা মনের আনন্দে বাজাচ্ছেন। তাদের ঠিক পাশে ওপরে তাকালেই চোখে পড়ে বিশাল একটি ঘড়ি। প্রতি ঘণ্টায় এটি বেজে ওঠে।
মেয়রের নিমন্ত্রণে বিচারকদের সামনে খাওয়া অন্যপাশে মেয়রের নিমন্ত্রণপত্র জমা নিয়ে অতিথিদের দেওয়া হচ্ছে অলিভ অয়েলের একটি করে বোতল। তাতে ৭২তম কান উৎসবের স্টিকার। সেখানে সাগরমুখো একটি ভাস্কর্য। এর পাশে বড় করে ইংরেজিতে লেখা ‘কান’।
প্রতিটি টেবিলে পিঙ্ক ওয়াইন, পানি, স্পার্কলিং ওয়াটার, বাগেল ও বাটার দেওয়া হয়েছে। টেবিলগুলোর একপাশে বুফে। সেখানে কাচের বাসন নিয়ে গেলে মিলছে সামুদ্রিক মাছ, সবজি, ডিম সেদ্ধ ও ডেজার্ট।
মেয়রের নিমন্ত্রণে বিচারকদের সামনে খাওয়া একেবারে সামনে ব্যারিকেড দেওয়া জায়গায় টেবিল-চেয়ার রাখা। সেখানে বসে খাবেন ৭২তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগের বিচারকরা। দুপুর ১টায় তারা আসতেই আলোকচিত্রী আর স্মার্টফোনের ক্যামেরা চালু হয়ে গেলো। বিচারকদের সভাপতি (প্রধান) মেক্সিকান নির্মাতা আলেহান্দ্রো গঞ্জালেজ ইনারিতুর নেতৃত্বে এসে হাজির হলেন মার্কিন অভিনেত্রী এল ফ্যানিং, সেনেগালের অভিনেত্রী-পরিচালক মায়মুনা এনদাই, মার্কিন নির্মাতা কেলি রাইকার্ড, ইতালিয়ান নারী নির্মাতা অ্যালিস রোরওয়াচার, গ্রিসের পরিচালক ইওর্গেস লানতিমোস, পোল্যান্ডের পরিচালক পাওয়েল পাওলিকস্কি, ফরাসি নির্মাতা রবিন ক্যাম্পিলো ও ফরাসি গ্রাফিক ঔপন্যাসিক-নির্মাতা এনকি বিলাল। তারাই উৎসবের সর্বোচ্চ পুরস্কার স্বর্ণ পাম জয়ী ছবি চূড়ান্ত করবেন। মূল প্রতিযোগিতা বিভাগের বিচারকদের মধ্যে ইনারিতুকে ঘিরেই আলোকচিত্রী ও সাংবাদিকদের আগ্রহ বেশি। তিনিও নিরাশ করেননি কাউকে।
মেয়রের নিমন্ত্রণে বিচারকদের সামনে খাওয়া উৎসবের উদ্বোধনী দিনে বিচারকদের সংবাদ সম্মেলনে ইনারিতুকে বাগে পাওয়া যায়নি সংবাদকর্মীদের ঠ্যালাঠেলিতে। ‘বার্ডম্যান’ ও ‘দ্য রেভেন্যান্ট’ বানিয়েছেন যিনি, তাকে নিয়ে উন্মাদনা পর্দার সামনের তারকাদের মতো থাকা স্বাভাবিক। মেয়রের মধ্যাহ্নভোজে হতাশ হতে হলো না। মিস্টার ইনারিতু বলে ডাক দিতেই কিছুটা হেঁটে এগিয়ে এসে সেলফি তুলে গেলেন ভদ্রলোক।
এখানেও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে হাঁটা দায়! তারা যেভাবে পারলেন ছবি আর সেলফি তোলায় ব্যস্ত থাকলো। কারণ খাওয়ার সময় বিচারকদের ছবি তোলা বারণ। কেউ সেই চেষ্টা করছে কিনা তা পর্যবেক্ষণের জন্য আছে পুলিশ ও মেয়রের কর্মীরা। খাওয়া শেষ করা মাত্রই বিচারকরা চলে যান। সুতরাং দ্বিতীয় কোনও সুযোগ নেই।
মেয়রের নিমন্ত্রণে বিচারকদের সামনে খাওয়া প্লেস দো লা ক্যাস্তর থেকে চোখ মেলে একঝলকে দেখে ফেলা যায় পুরো কান শহর! নীল আকাশের নিচে সাগরের নীল জলরাশি। ভূমধ্যসাগরের তীরে শতাধিক ইয়ট ও স্পিডবোট। এগুলোর কাছাকাছি রয়েছে হেলিপ্যাড। সাগরের অন্যপাশে বিশাল পাহাড়। সেখানে সবুজ গাছ-গাছালির ফাঁকে ঘর-বাড়ি, রিসোর্ট, হোটেল, অফিস-আদালত দৃশ্যমান। সব মিলিয়ে নয়নাভিরাম সৌন্দর্য। এ এক অন্যরকম মুগ্ধতা। কান উৎসব থেকে দেওয়া প্রতিবেদকের এবারের আইডি কার্ড

ছবি ও ভিডিও: প্রতিবেদক, বাংলা ট্রিবিউন

/এমএম/
সম্পর্কিত
জমকালো উদ্বোধনের দিনে মনমরা শহর
কান উৎসব ২০২৪জমকালো উদ্বোধনের দিনে মনমরা শহর
এবারের পর্দা উঠছে অদ্ভুত মেজাজে!
কান উৎসব ২০২৪এবারের পর্দা উঠছে অদ্ভুত মেজাজে!
উদ্বোধক মেরিল স্ট্রিপ, পাচ্ছেন স্বর্ণপাম
কান উৎসব ২০২৪উদ্বোধক মেরিল স্ট্রিপ, পাচ্ছেন স্বর্ণপাম
স্বর্ণপামে ৯ বিচারক: সর্বকনিষ্ঠ আদিবাসী লিলি, আছেন বন্ডকন্যাও
কান উৎসব ২০২৪স্বর্ণপামে ৯ বিচারক: সর্বকনিষ্ঠ আদিবাসী লিলি, আছেন বন্ডকন্যাও
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
ডানপিঠে দুলু থেকে কিংবদন্তি ফারুক
প্রয়াণ দিবসে স্মরণডানপিঠে দুলু থেকে কিংবদন্তি ফারুক
জমকালো উদ্বোধনের দিনে মনমরা শহর
কান উৎসব ২০২৪জমকালো উদ্বোধনের দিনে মনমরা শহর
‘পদাতিক’ ঝলক: মৃত্যুতে শুরু, ‘কাট’ দিয়ে শেষ (ভিডিও)
‘পদাতিক’ ঝলক: মৃত্যুতে শুরু, ‘কাট’ দিয়ে শেষ (ভিডিও)
‘ডিউন’ সিরিজে টাবু
‘ডিউন’ সিরিজে টাবু
কাজী নজরুলের বায়োপিক, কে থাকছেন কবির ভূমিকায়
কাজী নজরুলের বায়োপিক, কে থাকছেন কবির ভূমিকায়