X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৮ বৈশাখ ১৪৩১

ঘরে বসে একই কনসার্টে বিশ্বসংগীতের শতাধিক নক্ষত্র

জনি হক
২০ এপ্রিল ২০২০, ০০:৩৬আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২০, ১৩:৫২

লেডি গাগা, জেনিফার লোপেজ ও শেরিল ক্রো একজোট হলেন সংগীত ভুবনের সব নক্ষত্র। কে নেই! লেডি গাগা, টেলর সুইফট, বিলি আইলিশ, জেনিফার লোপেজ, স্যার এলটন জন, স্যার পল ম্যাককার্টনি, দ্য রোলিং স্টোনস ব্যান্ড, বিয়ন্সে, শেরিল ক্রোসহ আরও কত নাম। এখন পর্যন্ত পৃথিবী গ্রহের একই অনুষ্ঠানে এত বিপুলসংখ্যক তারকার সমাবেশ এটাই প্রথম।
শনিবার (বাংলাদেশ সময় ১৯ এপ্রিল ভোর) বিশেষ একটি কনসার্টে অংশ নিলেন তামাম দুনিয়ার শতাধিক সংগীতশিল্পী। লকডাউনের কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে প্রত্যেকে নিজেদের ঘরে বসে গান গেয়েছেন, বাজিয়েছেন। করোনাভাইরাস মহামারির সঙ্গে লড়তে বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যকর্মীসহ সেবা প্রদানকারীদের প্রশংসা করতেই এই আয়োজন।
‘ওয়ান ওয়ার্ল্ড: টুগেদার অ্যাট হোম’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রের এনবিসি, এবিসি ও সিবিএসসহ বিভিন্ন দেশের টিভি চ্যানেল, ইউটিউবসহ কয়েকটি স্ট্রিমিং ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টুইটারে একযোগে প্রচারিত হয়েছে। ‘পৃথিবীতে সবাই পরস্পর নির্ভরশীল’ শিরোনামের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে এই বক্তব্য।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও অলাভজনক সংস্থা গ্লোবাল সিটিজেনের নেতৃত্বে স্মরণীয় এই কনসার্ট তত্ত্বাবধান করেছেন আমেরিকান পপতারকা লেডি গাগা। অনুষ্ঠানটিকে পৃথিবীর তরে একটি প্রেমপত্র হিসেবে দেখছেন তিনি। ৩৪ বছর বয়সী এই গায়িকা উল্লেখ করেন, বৈশ্বিক দুর্যোগে সেবা প্রদানকারীরা যে অবদান রেখেছেন তার প্রতিদানে কনসার্টে অংশগ্রহণকারী সংগীতশিল্পীরা সামান্য কিছু করতে চেয়েছেন।
প্রথমে স্বাস্থ্যকর্মী, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রেতা ও সরবরাহে নিয়োজিত কর্মী, ডাক বিভাগের কর্মী, অলাভজনক সংগঠনের কর্মীসহ যারা কঠোর পরিশ্রম করছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান লেডি গাগা। তিনি বলেন, ‘এসব মানুষের জন্য এ আয়োজন সত্যিকারের একটি ভালোবাসার চিঠির মতো। আশা করি আপনাদের এসব অবদানের কথা চিরকাল মনে থাকবে সবার।’
গাগার ভাষায়, ‘আজ রাতে কী ভালো লাগবে আমার? যদি পারতাম তাহলে একমুহূর্তের জন্য বলতাম...’ বলেই তিনি গাইতে শুরু করেন ‘স্মাইল’। এটি হলো চার্লি চ্যাপলিনের ‘মডার্ন টাইমস’ (১৯৩৬) ছবিতে ব্যবহৃত তারই যন্ত্রসংগীতের ওপর লেখা বিখ্যাত গান। ১৯৫৪ সালে দুই ব্রিটিশ গীতিকবি জন টার্নার ও জিওফ্রে পারসনস সুরটির ওপর কথা বসিয়ে শিরোনাম দেন ‘স্মাইল’। এর মূল কণ্ঠশিল্পী আমেরিকান গায়ক ও জ্যাজ পিয়ানোশিল্পী ন্যাট কিং কোল।
লেডি গাগার পিয়ানোতে ‌‘স্মাইল’:

দ্য রোলিং স্টোনস ব্যান্ডের চার সদস্য পৃথক চারটি স্থান থেকে একসঙ্গে পরিবেশন করেন ‘ইউ কান্ট অলওয়েজ গেট হোয়াট ইউ ওয়ান্ট’। এ সময় অ্যাকুস্টিক গিটার বাজিয়েছেন মিক জ্যাগার ও কিথ রিচার্ডস। মজার বিষয় হলো, ড্রাম কিট না থাকায় ড্রামার চার্লি ওয়াটস সোফার ওপর হাত নেড়ে ড্রাম বাজানোর ভঙ্গি দেখিয়েছেন!
গ্র্যামির ইতিহাস কন্যা বিলি আইলিশ গেয়েছেন আমেরিকান সংগীতশিল্পী ববি হেবের ‘সানি’। তিনি বলেন, ‘এ গান আমার ভালো লাগে। এটি সবসময় আমার মনকে প্রাণবন্ত করে তোলে। আপনাদেরও মন ভালো করে দিতে চাই।’ তার ভাই ফিনিয়াস কি-বোর্ড বাজিয়েছেন।
দ্য রোলিং স্টোনস টেলর সুইফট পিয়ানো বাজিয়ে গেয়েছেন তার বিখ্যাত গান ‘সুন ইউ উইল গেট বেটার’। এটি মূলত মা ক্যান্সারের সঙ্গে লড়ার সময় লিখেছিলেন তিনি।
করোনা সংকটে স্বাস্থ্যকর্মীদের সত্যিকারের নায়ক মনে করেন সাবেক বিটলস ব্যান্ডের পল ম্যাককার্টনি। তার মা ম্যারি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নার্স ছিলেন। সন্তান প্রসবের সময় তিনি সহযোগিতা করতেন। এসব কথা জানিয়ে মাকে উদ্দেশ করে তিনি গেয়েছেন ‘লেডি ম্যাডোনা’।
সদ্য প্রয়াত আমেরিকান সংগীতশিল্পী বিল উইদারের কালজয়ী গান ‘লিন অন মি’ গেয়ে তাকে শ্রদ্ধা জানান স্টিভি ওয়ান্ডার। বর্ষীয়ান গায়িকা বারবারা স্ট্রাইস্যান্ডের ‘পিপল’ গেয়ে শোনান জেনিফার লোপেজ। তার সুবাদে কনসার্টে গ্ল্যামারের দ্যুতি ছড়িয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ান গায়ক কিথ আরবান এখন স্ত্রী অভিনেত্রী নিকোল কিডম্যানের সঙ্গে কোয়ারেন্টিনে আছেন। ব্রিটিশ গায়ক স্টিভ উইনউডের ‘হাইয়ার লাভ’  পরিবেশনায় সৃজনশীলতা দেখিয়েছেন তিনি। তখন দেখা যায় একসঙ্গে তিন কিথ আরবান বাজাচ্ছেন!
জন লিজেন্ড ও স্যাম স্মিথ নিজ নিজ ঘর থেকে একসঙ্গে গেয়েছেন বেন ই. কিংয়ের ‘স্ট্যান্ড বাই মি’। আইরিশ গায়ক হোজিয়ার তার পিয়ানোবাদকের কাছ থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখেন। ব্রিটিশ গায়িকা রিটা ওরা দর্শক-শ্রোতাদের নিরাপদে থাকা ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। এরপর তিনি পরিবেশন করেন ২০১৪ সালে প্রকাশিত ‘আই উইল নেভার লেট ইউ ডাউন’।
লকডাউনের কারণে সৃষ্ট মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কথা বলেন গায়িকা এলি গোল্ডিং ও ফরাসি সংগীতশিল্পী ক্রিস্টিন অ্যান্ড দ্য কুইনস। এছাড়া গান গেয়েছেন স্যার এলটন জন, শেরিল ক্রো, বিলি জো আর্মস্ট্রং, কেসি মাসগ্রেভস, চার্লি পুথ, মালুমা, লিজো, শন মেন্ডেস ও কামিলা কাবেলো।
বিয়ন্সে কোভিড-১৯ রোগে কৃষ্ণাঙ্গদের মৃত্যুর হার তুলনামূলক বেশি হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেছেন ভিডিও বার্তায়। তার কথায়, ‘আমেরিকায় এই জীবাণুতে আশঙ্কাজনক হারে কালো মানুষদের মৃত্যু হচ্ছে।’
ভিডিও বার্তায় অপরাহ উইনফ্রে বলেন, ‘আমরা সবাই স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশংসা করছি, তবে এমনভাবে কখনও করিনি। আমাদের মধ্যে তারাই সত্যিকার অর্থে সেরা। স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও তহবিল সরবরাহে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করা দরকার।’
শাহরুখ খান ও প্রিয়াঙ্কা চোপড়া বলিউড বাদশা শাহরুখ খান চলমান সংকটে হতদরিদ্রদের জন্য অনুদানের গুরুত্ব নিয়ে কথা বলেন। অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। গায়িকা অ্যানি লেনক্স, ব্রিটিশ ফুটবল তারকা ডেভিড বেকহাম ও গায়িকা ভিক্টোরিয়া বেকহাম দম্পতি, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক দুই ফার্স্টলেডি মিশেল ওবামা ও লরা বুশ, মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস অনুপ্রেরণাদায়ক বক্তব্য রাখেন।
সংগীতের এই ম্যারাথন ছিল দুই ভাগে বিভক্ত। প্রথমে যুক্তরাষ্ট্র, এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের পপ, শাস্ত্রীয় ও র‌্যাপ সংগীতশিল্পীরা ছয় ঘণ্টার লাইভে অংশ নেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য লাতিন তারকা লুই ফনসি, রিদমঅ্যান্ডব্লুজ গায়িকা জেনিফার হাডসন, ব্রিটিশ গায়িকা জেসি জে, হংকংয়ের গায়ক ইজন চ্যান, নাইজেরিয়ান গায়ক বার্না বয়, বেলজিয়ান গায়িকা অ্যাঞ্জেল, ভারতের বিশাল মিশ্র, আমিরাতের সংগীতশিল্পী হুসেইন আল জাসমিসহ অনেকে। সবাইকে ঘরে থাকা, নিয়মিত হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও করোনা পরীক্ষার পরিধি বাড়াতে রাজনৈতিক নেতাদের চাপ দেওয়ার আহ্বান জানান তারকারা।
কনসার্টের শুরুতে স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য লকডাউনে থাকা বিভিন্ন দেশের মানুষের তালি ও উদযাপন দেখানো হয়। এ সময় পর্দায় ভেসে ওঠে ক্যাপশন, ‘করোনা মহামারি মোকাবিলায় লড়ে যাওয়া সব স্বাস্থ্যকর্মীকে বলছি, আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি। আমাদের জন্য লড়াইয়ে থাকার জন্য ধন্যবাদ।’
অনুষ্ঠানে প্রথমেই গান গেয়েছেন আমেরিকান গায়িকা আন্ড্রা ডে। নিজের অ্যাপার্টমেন্ট থেকে তিনি পরিবেশন করেন ‘রাইজ আপ’। ওয়ান ডিরেকশন তারকা নিয়াল হোরান ও তার ব্যান্ডের সাবেক সদস্য লিয়াম পেইন, দ্য কিলারস ব্যান্ডের ব্রান্ডন ফ্লাওয়ার্স ও রনি ভানুচ্চি পরিবেশন করেন তাদের হিট গান ‘মিস্টার ব্রাইটসাইড’। আমেরিকান গায়ক অ্যাডাম ল্যাম্বার্ট গেয়েছেন ব্রিটিশ পপ রক ব্যান্ড টিয়ারস ফর ফিয়ারসের ‘ম্যাড ওয়ার্ল্ড’। ২০০৯ সালে ‘এক্স ফ্যাক্টর’ রিয়েলিটি শোতে প্রতিযোগী হিসেবে এই গান প্রথম পরিবেশন করেছিলেন তিনি।
(বাঁ থেকে) জিমি কিমেল, স্টিফেন কোলবার্ট ও জিমি ফ্যালন কনসার্টে শিক্ষক, স্বাস্থ্যকর্মী, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান, ডেলিভারি, ডাক ও অন্যান্য কর্মীরা ব্যক্তিগত গল্প শুনিয়েছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য তালি দেওয়ার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্ট ও খবরের ক্লিপ দেখানো হয় এতে। এছাড়া মরুভূমিতে পরিণত হওয়া বিখ্যাত কিছু জায়গা, আইসোলেশনে থাকা ও কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শনে জানালা দিয়ে অভিবাদন জানানোর দৃশ্য দেখা গেছে।
আয়োজকরা জানান, ইতোমধ্যে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য দাতারা ১৫ কোটি ডলার অনুদান দিয়েছেন। জনতহবিল সংগ্রহের পরিবর্তে অনুষ্ঠানে সমাজসেবী ও বিভিন্ন সংস্থাকে ডব্লিউএইচও’র কোভিড-১৯ তহবিলে অবদান রাখতে উৎসাহিত করা হয়। সেজন্য সঞ্চালক স্টিফেন কোলবার্ট বলেন, ‘আজ রাতে আমরা টাকা চাইতে আসিনি।’ তার পাশাপাশি অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন জিমি কিমেল ও জিমি ফ্যালন। তিন জনই আমেরিকার জনপ্রিয় তিনটি টিভি অনুষ্ঠানের সঞ্চালক। হিপ-হপ গ্রুপ দ্য রুটস ও একডজন সেবা প্রদানকারীর সঙ্গে মিলে আশির দশকের হিট গান ‘সেফটি ড্যান্স’-এর কারোনাভাইরাস সংস্করণ গেয়েছেন জিমি ফ্যালন।
সবশেষে সেলিন ডিওন, জন লিজেন্ড, আন্ড্রেয়া বোসেলির সঙ্গে লেডি গাগা পরিবেশন করেন ‘দ্য প্রেয়ার’, এ সময় পিয়ানো বাজিয়েছেন ল্যাং ল্যাং। ১৯৯৮ সালের অ্যানিমেটেড ছবি ‘কোয়েস্ট ফর ক্যামেলট’-এর গান এটি। এর কথায় অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসার পথ খোঁজা হয়েছে। করোনাকে জয় করে মানুষ সেই আলোর দেখা পাবে নিশ্চয়ই!
‘ওয়ান ওয়ার্ল্ড: টুগেদার অ্যাট হোম’ অনুষ্ঠানটি দেখুন:


/এমএম/এমওএফ/
সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
সজলের মুগ্ধতা অপির চোখে, জন্মদিনে
সজলের মুগ্ধতা অপির চোখে, জন্মদিনে
সাংবাদিক হতে চেয়ে অভিনেত্রী!
সাংবাদিক হতে চেয়ে অভিনেত্রী!
মুবিতে মুক্তি দেশি মুভি
মুবিতে মুক্তি দেশি মুভি
মে দিবসে ফুঁসে উঠলেন সিনেমা শ্রমিকরা
মে দিবসে ফুঁসে উঠলেন সিনেমা শ্রমিকরা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা