দীর্ঘদিন ধরেই কিডনি ও ডায়াবেটিস সমস্যায় ভুগছেন লালল সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন। এর আগে দুইবার তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। ডায়ালাইসিস করতে গিয়ে শারীরিক জটিলতা তৈরি হওয়ায় আবারও আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে এই গুণী শিল্পীকে।
এদিকে, হঠাৎ করেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও দেশের বেশ কিছু নিউজ পোর্টালে খবর আসে, অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না ফরিদা পারভীন। প্রিয় শিল্পীর এমন খবর শুনে সবাই খুব মর্মাহত হন। তবে এই শিল্পীর ছেলে ইমাম জাফর নোমানি বলেছেন ভিন্ন কথা। তিনি তার মাকে নিয়ে এমন খবরে অনেকটা বিরক্তই হয়েছেন।
ইমাম জাফর নোমানি জানিয়েছেন, তার মায়ের অর্থাৎ ফরিদা পারভীনের চিকিৎসার জন্য কোনও অর্থের প্রয়োজন নেই। তারাই তার মায়ের চিকিৎসার খরচ বহন করতে সক্ষম। তিনি বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আমরা যে কয়জন ভাইবোন আছি। আমরা ওয়েল এস্টাবলিশড। আমরা আমাদের মায়ের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে সক্ষম। আর আমরা যদি চিকিৎসার ব্যয় বহন নাও করি, তাহলে আমার মায়ের যে টাকা-পয়সা আছে তা দিয়েও চিকিৎসার ব্যয়বার বহন করতে সক্ষম। শুধু তাই নয়, তাকে সার্বক্ষণিক দেখাশুনার জন্য আমরা ও আমাদের স্ত্রীরা, আমাদের বোন ও বোনের স্বামী, সবাই সার্বক্ষণিক পাশে আছি তাকে দেখাশুনার জন্য।’
এরপর তিনি বলেন, ‘আসলে আম্মার শরীর খারাপ অনেক দিন ধরেই। সেই ২০১৯ সাল থেকেই তার কিডনির সমস্যা। অনেক দিন ধরেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। এখন ডায়ালাইসিস নেওয়ার শুরুর পর থেকেই তার শরীরটা খারাপ হয়ে পড়ে। তার অসুস্থতার খবর শুনে উপদেষ্টা থেকে শুরু করে আমাদের সঙ্গে সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয় থেকেও যোগাযোগ করা হয়েছে যে, তার চিকিৎসায় কোনো আর্থিক হেল্প লাগবে কিনা। এটা জানার পর ফরিদা পারভীন মানে আমার আম্মা জানিয়েছেন, তিনি এ ধরণের কোনো সহযোগিতা নিতে চান না।’
এরপর তিনি ক্ষোভ নিয়ে বলেন, ‘কাজেই যারা ছড়াচ্ছেন ফরীদা পারভীন টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না, এটা কতোটা সঠিক, চিন্তার বিষয়। তবে আপাতত সবাই শিল্পীর জন্য দোয়া করবেন। তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে নিজ অঙ্গনে ফিরে আসুন।’
বলা প্রয়োজন, চলতি বছরের ফব্রুয়ারিতে ১৩ দিন হাসপাতালের আইসিইউতে ছিলেন ফরিদা পারভীন। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তাকে।
উল্লেখ্য, ফরিদা পারভীন ১৯৬৮ সালে রাজশাহী বেতারের তালিকাভুক্ত শিল্পী হিসেবে নজরুলসংগীত গাওয়া শুরু করেন। তবে ১৯৭৩ সালের দিকে দেশাত্মবোধক গান গেয়ে জনপ্রিয়তা পান তিনি। সাধক মোকসেদ আলী শাহর কাছে ফরিদা পারভীন লালনসংগীতে তালিম নেন। এরপর থেকে তিনি নিয়মিত লালনগীতি গাওয়া শুরু করেন। ১৯৮৭ সালে সংগীতাঙ্গনে বিশেষ অবদানের জন্য একুশে পদক লাভ করেন এই শিল্পী। ২০০৮ সালে তিনি জাপান সরকারের ‘ফুকুওয়াকা এশিয়ান কালচার’ পুরস্কারে ভূষিত হন। এছাড়া, ১৯৯৩ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।