X
বুধবার, ০৮ মে ২০২৪
২৪ বৈশাখ ১৪৩১

রেল কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণেই কানপুরের দুর্ঘটনা

বিদেশ ডেস্ক
২১ নভেম্বর ২০১৬, ১৫:২৫আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০১৬, ১৫:৩৪
image

রেল কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণেই কানপুরের দুর্ঘটনা

কানপুরের যে ট্রেন দুর্ঘটনা ১৪২ জনের প্রাণ কেড়ে নিলো, রেল কৃর্তপক্ষের অব্যবস্থাপনা ও অবহেলাকেই প্রাথমিকভাবে দায়ী করা হচ্ছে। তদন্ত সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো এ কথা জানিয়েছে।

রবিবার ভোরে পুখরাইয়ার কাছে ইন্দোর থেকে পাটনাগামী ভারতীয় রেলের ১৯৩২১ এক্সপ্রেস ট্রেনটির ১৪টি বগি লাইনচ্যুত হলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। রবিবার দুর্ঘটনার খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছন রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু। রেল নিরাপত্তা কমিশনারের (উত্তরাঞ্চল) নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করার নির্দেশ দেন তিনি। নির্দেশমতোই, কাজে নেমে পড়েন তদন্তকারীরা। প্রাথমিকভাবে রেললাইনে চিড় ধরার ফলেই দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। তদন্তকারীদের মতে, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব এবং লাইনের বিভিন্ন ফিটিংয়ের অপর্যাপ্ত জোগানের ফলেই দুর্ঘটনা ঘটেছে।

রেল কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণেই কানপুরের দুর্ঘটনা

কী কারণে এত বড় মাপের দুর্ঘটনা? উত্তর-মধ্য রেলের জেনারেল ম্যানেজার অরুণ সাক্সেনা সংবাদমাধ্যমকে জানান, দুর্ঘটনার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে রেল-সুরক্ষা কমিশনারকে। লাইনের অবস্থা কেমন তা বুঝতে,  কানপুর-ঝাঁসি রুটের পুরো লাইনের ভিডিও তোলা হয়েছে। তদন্তকারীরা প্রাথমিক ভাবে দুর্ঘটনার কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ চিহ্নিত করেছেন।

লাইনে ফাটল: রেল কর্তৃপক্ষের একাংশ মনে করছে, রেল লাইনে চিড় থাকার কারণেই এই দুর্ঘটনা। শীতের শুরুতেই সাধারণত লাইনে সঙ্কোচন হয়, যা থেকে লাইনে চিড় ধরতে পারে। বহু ক্ষেত্রেই এই সূক্ষ্ম চিড় দুর্ঘটনার কারণ হয়। পাঁচ বছর আগে কালকা মেলে দুর্ঘটনার পিছনেও ছিল লাইনে চিড়। রেল মন্ত্রকের একটি বড় অংশ মনে করছে, কালকার মতো এখানেও রক্ষণাবেক্ষণে ত্রুটি হয়েছে। শীতের শুরুতে লাইন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিয়মমাফিক পরীক্ষা করা হয়। রেল লাইনের আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষাও হয়। এই লাইনে তা করা হয়েছে কি না, এখনও জানা যায়নি।

রেল কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণেই কানপুরের দুর্ঘটনা

পুলিশকে চালক জানিয়েছেন, তাঁর ধারণা, লাইনে ফাটল থাকাতেই ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে। চালকের ব্যাখ্যা, প্রথমে তিনি প্রচণ্ড জোরে একটি শব্দ শুনতে পেয়েছিলেন। তারপরেই ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়ে যায়। এতেই তাঁর মনে হয়েছে, লাইনে ফাটল ছিল। তার উপর দিয়ে ট্রেন যেতেই সশব্দে লাইনটি ভেঙে যায়। আর তারপরেই ছিটকে পড়ে কামরাগুলো।

রেলের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা ইঞ্জিনিয়ারিং দফতরের এক আধিকারিক জানান, রেললাইনে চিড় ধরার প্রধান কারণ হল আবহাওয়ার দ্রুত পরিবর্তন। তিনি জানান, গ্রীষ্মকালে তাপে লাইন সম্প্রসারি হয়, আবার শীতকালে তা কমে যায়। এরফলেই, লাইনে চিড় ধরা পড়ে। তবে, ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এই যুক্তি মানতে নারাজ রেল সুরক্ষা দফতর। তাদের মতে, রক্ষণাবেক্ষণেই গাফিলতি ছিল। আবহাওয়া পরিবর্তন সেখানে কেবল বাড়তি রসদ জুগিয়েছে।

রেল কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণেই কানপুরের দুর্ঘটনা

চাকা: ট্রেনের শুরুর দিকের একটি চাকাতে সমস্যা রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। ওই অভিযোগ এনেছেন ট্রেনেরই এক যাত্রী— মধ্যপ্রদেশের মদসৌর জেলার বাসিন্দা প্রকাশ শর্মা। ওই ট্রেনের এস-২ কামরাতেই  ইনদওর থেকে উজ্জয়িনী যাচ্ছিলেন তিনি। বহুবার ওই ট্রেনে যাতায়াত করার সুবাদে তাঁর মনে হয়েছিল, চাকার যে ধরনের আওয়াজ হওয়া উচিত তা হচ্ছে না। কোথাও গণ্ডগোল রয়েছে। টিকিট চেকার এবং পরে ট্রেন থেকে নেমে স্টেশন কর্তৃপক্ষকেও তিনি এ কথা জানান। কিন্তু প্রকাশের অভিযোগ, তার কথায় কেউ কর্ণপাত করেনি। উল্টে হেসে উড়িয়ে দেওয়া হয়। ঘটনাচক্রে দুর্ঘটনায় যে কামরাগুলো সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে এস-২ কামরা। দুর্ঘটনার পর যে ভাবে ট্রেনের বগিগুলো দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে, চাকা ও ব্রেক শু-আলাদা হয়ে এ-দিক ও-দিক ছিটকে পড়েছে, তাতে প্রকাশের পর্যবেক্ষণ ঠিক ছিল কি না, তা এখন জানা অসম্ভব বলেই মনে করছে রেল। 

 

রেল কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণেই কানপুরের দুর্ঘটনা


গতি: 
ইনদওর-ঝাঁসি এক্সপ্রেসের মতো দূরপাল্লার ট্রেনের গতি ঘণ্টায় ৮০-৯০ কিলোমিটারের কাছাকাছি থাকা উচিত। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, চালক গাড়ি ছোটাচ্ছিলেন একশোরও বেশি গতিবেগে। এক রেলকর্তার দাবি, দু্র্ঘটনার সময়ে ট্রেনটির গতি ছিল ১১০-১২০ কিলোমিটার। প্রতিটি ট্রেনে গার্ডের কামরায় একটি যন্ত্রে ট্রেনের সর্বশেষ গতি কত তা রেকর্ড হতে থাকে। ওই রেলকর্তার দাবি, তিনি সেই রেকর্ডের ভিত্তিতে ওই দাবি করেছেন। যদিও তদন্তের স্বার্থে এখন গার্ডের কামরাটিকে সিল করে দিয়েছে রেল।

চালক:
 প্রশ্নের মুখে চালকের ভূমিকাও। এক্সপ্রেস ট্রেন চালানোর মতো শারীরিক ও মানসিক পরিস্থিতিতে তিনি ছিলেন কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

কামরা: দুর্ঘটনার ভয়াবহতা বাড়িয়ে দিয়েছে ট্রেনের কামরা। এখন  যে কামরা ব্যবহার করা হয়, সেগুলো হলো এলএইচবি (লিঙ্ক হফম্যান বুশ) ধাঁচের। জার্মান প্রযুক্তিতে বানানো ওই কামরাগুলো লাইনচ্যুত হলে একটি আরেকটির পিছনে ঢুকে যাওয়ার পরিবর্তে ঘাড়ের উপর চড়ে যায়। এতে প্রাণহানি কম হয়। কিন্তু ইনদওর-পটনা এক্সপ্রেসের মতো কম গুরুত্বহীন ট্রেনে এখনও মান্ধাতার আমলের টেলিস্কোপিক কামরা ব্যবহার করা হয়। দুর্ঘটনা ঘটলে যে কামরাগুলো একে অপরের ভিতরে ঢুকে পড়ে। ফলে প্রাণহানি বাড়ে। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।
/বিএ/

সম্পর্কিত
কাঁটাতার পেরিয়ে ভোট দিলেন তারা
এই বর্ষায় নির্ধারিত হবে মিয়ানমার জান্তা ও বিদ্রোহীদের পরিণতি?
আমি মুসলিম ও ইসলামবিরোধী নই: মোদি
সর্বশেষ খবর
রাজস্থানকে হারিয়ে প্লে অফের আশা বাঁচিয়ে রাখলো দিল্লি
রাজস্থানকে হারিয়ে প্লে অফের আশা বাঁচিয়ে রাখলো দিল্লি
ঢাকা আসছেন মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু
ঢাকা আসছেন মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন আজ
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন আজ
নির্দেশ উপেক্ষিত হলেও কৌশলে সফল আ.লীগ
উপজেলা নির্বাচননির্দেশ উপেক্ষিত হলেও কৌশলে সফল আ.লীগ
সর্বাধিক পঠিত
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
শনিবার স্কুল খোলা রাখার প্রতিবাদে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা
শনিবার স্কুল খোলা রাখার প্রতিবাদে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা
আসছে ব্যয় কমানোর বাজেট
আসছে ব্যয় কমানোর বাজেট