X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১
রয়টার্সের প্রতিবেদন

যে কারণে রোহিঙ্গারা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে

বিদেশ ডেস্ক
২২ নভেম্বর ২০১৬, ১৭:৪০আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০১৬, ১৭:৪২
image

সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের সীমান্ত থেকে শত শত রোহিঙ্গা মুসলমান সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশের সীমান্তে প্রবেশ করেছে। সোমবার ত্রাণকর্মীরা জানিয়েছেন, উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় পাওয়ার চেষ্টা করছে তারা। দমনপীড়নের কারণেই তারা পালিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছে বলে উঠে এসেছে রয়টার্সের প্রতিবেদনে। জাতিসংঘের হিসেবে সাম্প্রতিক সহিংসতায় ৮৬ জনের প্রাণহানি হয়েছে। ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে ৩০, ০০০ মানুষ।

জাতিসংঘের অভিবাসন সংক্রান্ত সংস্থা আইওএম (ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব মাইগ্রেন্টস)-এর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, সোমবার ৫শ’রও বেশি সংখ্যক মানুষকে সীমান্ত পেরিয়ে পাহাড়ি ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় নিতে দেখেছেন তিনি।

জাতিসংঘের অন্যান্য ত্রাণ কর্মকর্তাও তাদেরতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেখেছেন। দেখেছেন রয়টার্সের প্রতিবেদকও। তারা কেউই বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা জানায়নি। তবে জাতিসংঘের ত্রাণকর্মীরা জানিয়েছেন, এক ঝাঁক মানুষকে একসঙ্গে ঢুকে যেতে দেখেছেন তারা।  

উল্লেখ্য, ২০১২ সালে উগ্র জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধদের সরকারের মদদপুষ্ট তাণ্ডবে প্রায় ২০০ রোহিঙ্গা হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। ঘর ছাড়তে বাধ্য হন ১ লাখেরও বেশি মানুষ।

উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের ৬০ বছর বয়সী মৌলভী আজিজ খান রয়টার্সকে বলেন, গত সপ্তাহে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিলে তিনি বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হন। তিনি জানান, ‘ওই সময় আমি আমার ৩ কন্যা আর তার ৩ সন্তানকে নিয়ে কাছাকাছি একটি পাহাড়ে পালিয়ে যাই। পরে আমরা সীমান্ত অতিক্রম করতে সমর্থ হোই।’

মিয়ানমারের সরকার ও সেনাবাহিনী জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের দাবি অস্বীকার করে বলছে, রাখাইন রাজ্যে নারী ধর্ষণ কিংবা বাড়ি পোড়ানোসহ বেসামরিক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তারা সংশ্লিষ্ট নয়।

সম্প্রতি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চরম উত্তেজনা দেখা গেছে। অক্টোবর মাসের ৯ তারিখে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ এলাকায় সন্ত্রাসীদের সমন্বিত হামলায় নয় পুলিশ সদস্য নিহত হয়। দুই দিনের মাথায় ১১ অক্টোবর মঙ্গলবার মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আরও ১২ জনের মৃত্যুর কথা জানায়। তারা দাবি করে, প্রায় ৩০০ মানুষ পিস্তল এবং ধারালো অস্ত্র নিয়ে সৈন্যদের উপর আক্রমণ করলে সেনাবাহিনী পাল্টা আক্রমণ করে।

স্যাটেলাইট ইমেজে অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বরের মধ্যে মংগদাউ জেলার তিনটি গ্রামের ৪৩০টি ভবন পুড়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছিল হিউম্যান রাইটস। আর ২১ নভেম্বর এসে তারা স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণ করে জানায়, ১০ নভেম্বর থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সহিংসতায় নতুন করে মংগদাউ জেলার ৫টি গ্রামে ওই ৮২০টি ঘর-বাড়ি ও অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। হিউম্যান রাইটসের হিসেব মতে, সবমিলে এক মাসে ধ্বংস হওয়া অবকাঠামোর সংখ্যা ১২৫০-এ দাঁড়িয়েছে।

রোহিঙ্গা শরণার্থীরা যে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে তাও বরাবরই অস্বীকার করে আসছে মিয়ানমার।  রাখাইনে নতুন করে গঠিত ইনফরমেশন ট্রাক্সফোর্স-এর সদস্য এবং প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র জ তাই দাবি করেন, এ নিয়ে তারা তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন, তবে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশের কোনও আলামত তারা পাননি।

তিনি বলেন, ‘৯ অক্টোবর থেকে এখানকার মানুষ বাংলাদেশে পালিয়ে যাচ্ছে কিনা সেনাবাহিনী ও পুলিশকে নিয়ে তা আমরা খতিয়ে দেখেছি। অবশ্য কিছু মানুষ গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছিল। তবে তারা আবার ফিরে এসেছে।’

রাখাইন রাজ্যের সংঘর্ষকে হামলাকারীদের খোঁজে 'ক্লিয়ারেন্স অপারেশন' হিসেবে অভিহিত করছে মিয়ানমারের  সেনাবাহিনী। তারা বলছে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ইসলামী চরমপন্থা দমনে কাজ করছেন তারা। সেখানে সংবাদমাধ্যমকেও প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।  তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী রাখাইন রাজ্যে জাতিগত দমনপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সেখানে ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়া, নারীদের ধর্ষণসহ নানান ধারার শারীরিক ও মানসিক নিপীড়ন চলছে।মিয়ানমারে থাকা ১ কোটি ১০ লাখ নাগরিক হাজার হাজার বছরের বংশ পরম্পরায় সেখানে বাস করলেও মিয়ানমার তাদের নাগরিকতা স্বীকার করে না। উল্টো তারা বাংলাদেশের ওপর দায় চাপিয়ে বলতে চায়, এরা বাংলাদেশের নাগরিক। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গোদেরকে মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবেই গণ্য করে।

জাতিসংঘের হিসেবে সাম্প্রতিক সংঘর্ষে সেখানে ৩০,০০০ মানুষ ঘর হারিয়েছেন। পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন আরও হাজার হাজার মানুষ। তবে রাজ্য থেকে পালিয়ে যেতে গিয়েও উগ্র জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধদের বাধার মুখে পড়ছেন তারা।

৪০ দিন ধরে রাখাইন রাজ্যে অবরুদ্ধ হয়ে থাকা ১ লাখ ৫০ হাজার মানুষকে ত্রাণ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক ত্রাণসংস্থাগুলো। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা এই ত্রাণ কার্যক্রমের সমন্বয় করছেন। ‘আমাদের সহায়তার মূল উদ্দেশ্য হলো তারা যেন বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য না হয়।’ রয়টার্সকে বলেন জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার একজন মুখপাত্র।  তবে তারপরও যারা নিতান্তই বাধ্য হয়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছেন, বাংলাদেশকে তাদের জন্য মানবিক সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

/বিএ/

সম্পর্কিত
চীনের দক্ষিণাঞ্চলে সড়ক ধসে নিহত ৩৬
লাইয়ের অভিষেক পরবর্তী চীনা সামরিক মহড়া নিয়ে সতর্ক অবস্থানে তাইওয়ান
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট শুরু
সর্বশেষ খবর
তিউনিসিয়া উপকূলে নৌকাডুবিতে নিহত ৮ বাংলাদেশির মরদেহ আসছে আজ
তিউনিসিয়া উপকূলে নৌকাডুবিতে নিহত ৮ বাংলাদেশির মরদেহ আসছে আজ
থাইল্যান্ড সফর নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করছেন প্রধানমন্ত্রী
থাইল্যান্ড সফর নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করছেন প্রধানমন্ত্রী
অবশেষে চট্টগ্রামে স্বস্তির বৃষ্টি
অবশেষে চট্টগ্রামে স্বস্তির বৃষ্টি
আদালতে ড. ইউনূস
আদালতে ড. ইউনূস
সর্বাধিক পঠিত
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
মিল্টন সমাদ্দার আটক
মিল্টন সমাদ্দার আটক
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
সিয়াম-পরীর গানের ভিউ ১০০ মিলিয়ন!
সিয়াম-পরীর গানের ভিউ ১০০ মিলিয়ন!