X
শনিবার, ১৮ মে ২০২৪
৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

রোহিঙ্গা নিপীড়ন বন্ধে মিয়ানমারকে আরও চাপ দেবে ওআইসি

বিদেশ ডেস্ক
১৯ জানুয়ারি ২০১৭, ১৫:৫৮আপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০১৭, ১৬:০৩
image

রোহিঙ্গা নিপীড়ন বন্ধে মিয়ানমারকে আরও চাপ দেবে ওআইসি মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির নেতৃত্বকে নিয়ে তীব্র হতাশা প্রকাশ করেছেন অরগানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) মহাসচিব ড. ইউসুফ আহমেদ আল-ওথায়মিন। রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর কাঠামোগত সহিংসতা ও নিপীড়নের অভিযোগ তুলেছেন তিনি। এদিকে রোহিঙ্গাদের প্রতি বৈষম্য নিরসনে ওআইসি’র সদস্য দেশগুলোকে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার তাগিদ দিয়েছে মালয়েশিয়া। কুয়ালালামপুরে চলমান ওআইসি সম্মেলনে তারা দুইটি নথি তুলে ধরার কথা জানিয়েছেন। একটি প্রস্তাব এবং একটি যৌথ ইশতেহার ঘোষণা করার মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা নিপীড়নের বিরুদ্ধে ওআইসি’র সদস্য দেশগুলোর সমন্বিত পদক্ষেপ ঘোষিত হবে বলে জানান নাজিব। এভাবেই মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হবে বলে জানান তিনি। এছাড়াও মানবিক সহায়তা এবং সামাজিক পুনর্বাসনের জন্য মিয়ানমারের সরকারকে ১৭ কোটি টাকারও বেশি (১০ মিলিয়ন মালয়েশীয় রিংগিত) সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে মালয়েশিয়া।

কুয়ালালামপুরে চলমান ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির নেতৃত্বকে নিয়ে তীব্র হতাশা প্রকাশ করেছেন অরগানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) মহাসচিব ড. ইউসুফ আহমেদ আল-ওথায়মিন। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘটিত সহিসংতা নিরসনে সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। মূলত ২০১৫ সালের গণতান্ত্রিক নির্বাচনে গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সুচিকে ইঙ্গিত করেই তিনি এই মন্তব্য করেন। বলেন, ‘সু চির বিজয়ে ওআইসি অনেক আশাবাদী হয়ে উঠেছিলো। ওআইসি মনে করেছিলো, ধর্মীয় কিংবা জাতিগত পার্থক্য অতিক্রম করে এটি একটি বহুত্ববাদী (ইনক্লুসিভ) সরকার হবে।’

ওআইসি মহাসচিব ড. ইউসুফ আহমেদ আল-ওথায়মিন মনে করেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যে অগ্রগতি হয়েছে, এবং যেভাবে নতুন সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়েছে; সেসব সত্ত্বেও মিয়ানমারের অভ্যন্তরে মুসলিম রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে স্থায়ী এবং কাঠামোগত সহিংসতা এবং ভীতি প্রদর্শনের ঘটনাগুলো অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে রোহিঙ্গাদের প্রতি বৈষম্য নিরসনে ওআইসি’র সদস্য দেশগুলোকে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার আহ্বান জানিয়েছে মালয়েশিয়া। ওআইসির পররাষ্ট্র মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেনারেল দাতুক রামলান ইব্রাহিম মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী রোহিঙ্গা মুসলিমদের জীবনের আর্তনাদের কথা তুলে ধরেন। পরিস্থিতির উন্নয়নে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া এবং রোহিঙ্গাদের প্রতি জারি থাকা চলমান বৈষম্য নিরসন করার তাগিদ দেন তিনি।

‘আমরা মনে করি, রোহিঙ্গা সংকটকে আর কেবলমাত্র মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংকট আকারে দেখার সুযোগ নেই। আমরা আশা করি মিয়ানমারের সরকার ওআইসিসহ আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোর কাছে থেকে আসা মানবিক সহায়তা নির্বিঘ্নে পৌঁছাতে দেবে।’ বলেন দাতুক রামলান ইব্রাহিম। মালয়েশিয়াসহ ওআইসির সব দেশ মিলে ঐক্যবদ্ধ চাপ সৃষ্টি করতে না পারলে কোনও ইতিবাচক ফলাফল আসবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। মিয়ানমারের চলমান সহিংসতা অব্যাহত থাকলে এশিয়ার শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মানবিক সহায়তা এবং সামাজিক পুনর্বাসনের জন্য মিয়ানমারের সরকারকে ১৭ কোটি টাকারও বেশি (১০ মিলিয়ন মালয়েশীয় রিংগিত) সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে মালয়েশিয়া। ওআইসি’র শীর্ষ সম্মেলনে পরররাষ্ট্র মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের মূল প্রস্তাব উপস্থাপন করতে গিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

নাজিব রাজাক জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের মতো অবকাঠামোগুলোর উন্নয়নের কাজে এই টাকার একাংশ ব্যয় করা হবে যেন রোহিঙ্গাদের জীবনমানের উন্নয়ন হয়। প্রাযুক্তিক সহযোগিতা কর্মসূচির মাধ্যমে রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানবসম্পদ উন্নয়নেও ভূমিকা রাখার আগ্রহের কথা জানান নাজিব। বলেন, ‘আজকের মিয়ানমার প্রাযুক্তিক সহযোগিতা কর্মসূচি গ্রহণের প্রশ্নে আসিয়ানভূক্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম শীর্ষস্থানে রয়েছে। মানুষের সক্ষমতার উন্নয়নে এই কর্মসূচিতে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়, রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের ক্ষেত্রে সেটা খুবই জরুরি।’

এ ব্যাপারে ওআইসিভূক্ত অন্যান্য দেশগুলোকেও এগিয়ে আসার তাগিদ দেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী। ‘এই সহায়তা কার্যক্রমে ওআইসিভূক্ত যে কোনও দেশ এগিয়ে এলে আমি উৎসাহের সঙ্গে তাকে স্বাগত জানাব।’

কেবল মুসলমান নয়, সমস্ত দুর্গত এলাকাতেই এইসব সহায়তা দেওয়ার প্রত্যয় জানান নাজিব। তিনি মনে করিয়ে দেন, মালয়েশিয়া সেই দেশ, যারা ঘরহারা ৫৬,০০০ রোহিঙ্গা মুসলমানকে আশ্রয় দিয়েছেন। ‘নৈতিকভাবে এই কাজটিই করা উচিত। নিজ দেশে ভয়াবহ সব ঘটনা আর পরিস্থিতি দেখে তারা পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে।‘ এই জনগোষ্ঠীর মানুষেরা মানব-পাচারের শিকার হচ্ছে এবং তাদের জঙ্গিবাদে ঝোঁকার আশঙ্কা তৈরী হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

নাজিব মন্তব্য করেন, এটি ওআইসির সদস্য দেশগুলোর সামষ্টিক দায়িত্ব। ইসলামী সংহতির বোধ থেকে তাদের প্রতি দায়িত্ববান হতে হবে।

কী করে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান হবে; এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে নাজিব বলেন, মানবিক সংকট থেকে রোহিঙ্গাদের রক্ষা করতে হবে। একটি নিরাপদ, স্থিতিশীল এবং মর্যাদাপূর্ণ ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যেতে হবে। কোন পদ্ধতিতে এই সংকটের সমাধান হবে তার উত্তর দিতে গিয়ে নাজিব বলেন, মিয়ানমারের সরকারকে হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা, নারী ও শিশু নিপীড়ন বন্ধ, মৌলিক অধিকারগুলো ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

মিয়ানমারে থাকা আমার বন্ধুদেরকে বলছি। নিজের সুমহান ইতিহাস আর ঐতিহ্যের সাপেক্ষে নিজেদেরকে প্রমাণ করুন। ১৯৪৬ সালে দেওয়া আপনাদের জাতির জেনারেল অং সান-এর সেই বক্তব্যের কথা মনে করুন।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে নাজিব বলেন, কুয়ালালামপুরের বৈঠকে তারা দুইটি নথি তুলে ধরবেন। এর একটি হলো ‘প্রস্তাব’ আর অপরটি হলো যৌথ ইশতেহার। এই দুই নথির মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা নিপীড়নের বিরুদ্ধে ওআইসি’র সদস্য দেশগুলোর সমন্বিত পদক্ষেপ ঘোষিত হবে বলে জানান নাজিব।
/বিএ/

সম্পর্কিত
চীন সফর: শি’র মন জয়ের চেষ্টায় ব্যস্ত ছিলেন পুতিন
মালয়েশিয়ায় পুলিশ স্টেশনে হামলা, ২ কর্মকর্তা নিহত
হাইপারসনিক অস্ত্র-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করবে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র
সর্বশেষ খবর
‘শেখ হাসিনা দেশে ফিরেছিলেন বলেই স্বাধীনতার সুফল ভোগ করছি’
‘শেখ হাসিনা দেশে ফিরেছিলেন বলেই স্বাধীনতার সুফল ভোগ করছি’
তালের শাঁসের ৩ রেসিপি
তালের শাঁসের ৩ রেসিপি
ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার জুজুৎসুর নিউটন
ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার জুজুৎসুর নিউটন
কানের লাল গালিচায় হাঁটতে কী লাগে, জানালেন প্রিয়তী
কানের লাল গালিচায় হাঁটতে কী লাগে, জানালেন প্রিয়তী
সর্বাধিক পঠিত
মামুনুল হক ডিবিতে
মামুনুল হক ডিবিতে
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
যাত্রীর জামাকাপড় পুড়িয়ে পাওয়া গেলো সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ
যাত্রীর জামাকাপড় পুড়িয়ে পাওয়া গেলো সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ
সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের স্থান পরিদর্শন প্রধান বিচারপতির
সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের স্থান পরিদর্শন প্রধান বিচারপতির
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি