X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

যা ঘটেছে তা প্রকাশ করতে ভীত নই: গার্ডিয়ানকে ফরহাদ মজহার

বিদেশ ডেস্ক
১৩ জুলাই ২০১৭, ১০:১৮আপডেট : ১৩ জুলাই ২০১৭, ১০:৪২
image

সম্প্রতি ‘নিখোঁজ’ হওয়ার পর ‘পুলিশের হাতে উদ্ধার’ হওয়া কবি ও প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার বলেছেন, তার সঙ্গে যা ঘটেছে তা প্রকাশ করতে তিনি ভীত নন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মজহার দাবি করেন, তিনি অপহৃত হয়েছিলেন। বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ‘নিখোঁজ’ হওয়ার পর বিদেশি কোনও সংবাদমাধ্যমকে এই প্রথম সাক্ষাৎকার দিলেন বাংলাদেশের এই চিন্তাবিদ। সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেন, অপহরণের পর যারা মুক্তি পান, তারা ফিরে এসে চুপ হয়ে যান। মানসিকভাবে এখনও ভীষণ বিপর্যস্ত আছেন জানিয়ে গার্ডিয়ানকে তিনি বলেছেন, কাজে ফিরে তিনি অপহরণের বিরুদ্ধেই সোচ্চার হবেন।
যা ঘটেছে তা প্রকাশ করতে ভীত নই: গার্ডিয়ানকে ফরহাদ মজহার

গার্ডিয়ানের পক্ষে ফরহাদ মজহারের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ওই সংবাদমাধ্যমের দক্ষিণ এশিয়া প্রতিবেদক মাইকেল সাফি। সাক্ষাৎকারভিত্তিক প্রতিবেদনে মজহারকে সরকারের সমালোচক এবং সরকারবিরোধী অ্যাকটিভিস্টদের মধ্যে অপহরণের সর্বশেষ শিকার ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই সংবাদমাধ্যমকে বুধবার দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে মজহার দাবি করেন, গত সপ্তাহে ভোর ৫টার দিকে তাকে অপহরণ করা হয়। তবে কে বা কারা বাড়ির সামনের রাস্তা থেকে তুলে নেয় তা তিনি বুঝতে পারেননি। ‘সেদিন সকালে চোখে সমস্যা হচ্ছিল, তাই ওষুধ কিনতে বাড়ি থেকে বের হই। হঠাৎ তিন ব্যক্তি আমার পাশে এসে উপস্থিত হয় এবং আমাকে একটি সাদা মিনিবাসে (মাইক্রোবাস) তুলে নেয়।’

মজহার গার্ডিয়ানকে বলেন, ঘটনার সময় তিনি পকেট থেকে মোবাইল ফোনটি বের করার সুযোগ পান এবং তার স্ত্রীকে ফোন করেন। ‘এটি ছিল একটি ছোট্ট ফোনকল। আমি ফিসফিসিয়ে বলি, ওরা আমাকে নিয়ে যাচ্ছে। আমাকে মেরে ফেলবে। অপহরণকারীরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমি কয়েক সেকেন্ডের জন্য আমার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে পারি।’ ফরহাদ মজহার দাবি করেন, এর পর অপহরণকারীরা তার চোখ বেঁধে ফেলে এবং মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়। তার দাবি, তিনি অপহরণকারীদের মুক্তিপণ দেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছিলেন, যেন তাকে তার স্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে দেওয়া হয়। দাবি অনুযায়ী তিনি ভেবেছিলেন, স্ত্রীর সঙ্গে কথা বললে সেল ফোনের নেটওয়ার্ক দিয়ে পুলিশ তার অবস্থান শনাক্ত করতে পারবে। ‘এই বিষয়ে তারা আমাকে ফোন ব্যবহার করতে দেয় এবং কয়েকবার আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলি।’ গার্ডিয়ানকে বলেছেন তিনি।

মেয়ে ও স্ত্রীর সঙ্গে মজহার

মজহার বলেন, 'তারা অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করেছিল, আমার মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়েছিল এবং চোখ বেঁধে ফেলেছিল। তারা নিজেদের হাঁটু দিয়ে আমাকে গাড়ির মেঝের সঙ্গে চেপে রেখেছিল।' তবে নিজের অপহরণকারীদের সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই বলে জানান তিনি। ‘ঘণ্টার পর ঘণ্টা মিনিবাসটি (মাইক্রোবাস) চলতে থাকে। তারা আমাকে অপমান করে, মাঝেমধ্যে গালিও দেয়। তারা আমাকে চড়ও মারে। ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা পর অপহরণকারীরা আমাকে মুক্ত করে দেবে বলে জানায়। এর পর একটি নির্জন ও কিছুটা অন্ধকার স্থানে আমার চোখ খুলে দিয়ে তারা চলে যায়। আমাকে একটি বাসের টিকিট দেয় এবং বলে খুলনা শহর থেকে বাসে চেপে ঢাকায় ফিরে যেতে। আমি কিছুদূর হাঁটি এবং খুলনার একটি বিপনিবিতানে পৌঁছাই, যেখানে রাত সোয়া ৯টার বাসে ওঠার আগে কিছু খাবার খাই।’ বলেন ফরহাদ মজহার। ‘অপহরণকারীরা সাধারণ পোশাকে ছিল। আমি জানি না তারা কারা বা কোন দলের সদস্য। বন্দি অবস্থায় আমি বেশ কয়েকবার আমার স্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছি। আমাকে বহনকারী মাইক্রোবাসটি ঢাকা ছেড়ে আসার পর পুলিশ চাইলে আমার অবস্থান শনাক্ত করতে পারত। এখন এসে আমি অবাক হয়েছি কেন পুলিশ খুলনা পৌঁছার আগেই মাইক্রোবাসটিকে আটক করতে পারল না।’ গার্ডিয়ানের কাছে বলেছেন তিনি।

আদালতে কবি ও প্রাবন্ধিক মজহার

বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থা অধিকার-এর পরিসংখ্যানকে উদ্ধৃত করে গার্ডিয়ানে প্রকাশিত ওই সাক্ষাৎকারভিত্তিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত তিন বছরে ২২৩ জন ব্যক্তি অপহরণের শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে ১৮ জন জীবিত ফিরে এলেও তারা তাদের অপহরণের ব্যাপারে নীরব হয়ে যান। তবে ফরহাদ মজহার গার্ডিয়ান জানান, তিনি নীরব হবেন না। ‘মানসিকভাবে ভীষণ বিপর্যস্ত’ অবস্থায় থাকার কারণে তার উত্তরণে বেশ কিছু সময় লাগবে বলে জানান তিনি। ‘ আমার সঙ্গে যা হয়েছে তা প্রকাশ করতে আমি ভীত নই। বেশিরভাগ মানুষই গুমের ঘটনা থেকে ফিরে আসার পর রহস্যজনকভাবে নীরব হয়ে যায়। আমি যখন কাজে ফিরব তখন এই বিষয় নিয়ে কাজ করব। আমাদের এই অপহরণ করার সংস্কৃতির অবসান ঘটাতে হবে।’ গার্ডিয়ানকে বলেছেন কবি মজহার।

উল্লেখ্য, গত (৩ জুলাই) ভোর সোয়া ৫টার দিকে রাজধানীর আদাবর রিং রোড এলাকার হক গার্ডেনের নিজ বাসা থেকে বের হওয়ার পরপর অপহৃত হওয়ার দাবি করেন ফরহাদ মজহার। স্ত্রী ফরিদা আখতারের মৌখিক অভিযোগের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়,  প্রযুক্তির সাহায্যে তারা জানতে পেরেছেন মজহারকে গাবতলী, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, যশোর হয়ে খুলনার দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খুলনা থেকে ঢাকায় আসার পথে তাকে যশোরের নওয়াপাড়ায় হানিফ বাস থেকে উদ্ধারের দাবি করে। ৪ জুলাই তাকে ঢাকায় আনার পর আদালতে নেওয়া হলে তিনি ১৬৪ ধারায় ভিকটিম হিসেবে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দি দেন।  

নিউ জিম্মায় বাড়ি যাচ্ছেন ফরহাদ মজহার

ঘটনার কয়েকদিনের মাথায় এইচআরডব্লিউ-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৩ সাল থেকে কয়েকশ' মানুষ গুম কিংবা গোপন আটকের শিকার হয়েছেন। তবে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফিপকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ওই মার্কিন মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন,  বাংলাদেশের সূচনালগ্ন থেকে তারা অপপ্রচার চালিয়ে আসছে, যার সঙ্গে বাস্তবের কোনও সম্পর্ক নেই। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে একে নেতিবাচক প্রচারণা বলেও উল্লেখ করেন মজহার। পরে এইচআরডব্লিউ ‘না বাংলাদেশ, সত্য বলার মানে ‘নেতিবাচক প্রচারণা’ শিরোনামে বিবৃতি দেয়। 
/বিএ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ডিবি কার্যালয়ে মিল্টন সমাদ্দারের স্ত্রী, চলছে  জিজ্ঞাসাবাদ
ডিবি কার্যালয়ে মিল্টন সমাদ্দারের স্ত্রী, চলছে জিজ্ঞাসাবাদ
মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের বিরত রাখা নীতিগত সিদ্ধান্ত, আইনি নয়: কাদের
মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের বিরত রাখা নীতিগত সিদ্ধান্ত, আইনি নয়: কাদের
আইপিএলের সময়ে হবে পিএসএল!
আইপিএলের সময়ে হবে পিএসএল!
বাড়ি ফেরার পথে বজ্রাঘাতে বাবুর্চির মৃত্যু, সারা রাত রাস্তায় পড়ে ছিল লাশ
বাড়ি ফেরার পথে বজ্রাঘাতে বাবুর্চির মৃত্যু, সারা রাত রাস্তায় পড়ে ছিল লাশ
সর্বাধিক পঠিত
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি