X
বুধবার, ০১ মে ২০২৪
১৮ বৈশাখ ১৪৩১

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলো কি শ্রীলঙ্কা-বসনিয়ার ভাগ্য বরণ করবে?

ফাহমিদা উর্ণি
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২০:২৪আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৪:১৭
image

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে রোহিঙ্গাদের জন্য সেইফ জোন প্রতিষ্ঠা করা হলে তার ফল ভালো হবে না বলে আশঙ্কা করছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। অতীতে প্রতিষ্ঠিত সেইফ জোনগুলোর পরিণতি বিশ্লেষণের ভিত্তিতে শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এমন আভাস দিয়েছে সংগঠনটি। মানবিক সহায়তা কার্যক্রম পর্যবেক্ষণকারী জেনেভাভিত্তিক অলাভজনক সংবাদমাধ্যম আইআরআইএন (ইনসাইড স্টোরি অব ইমার্জেন্সিস) সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে একই রকম আভাস দিয়েছিল। সেই প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল, রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মানুষদের জন্য ৭টি নতুন আশ্রয় শিবির খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মিয়ানমার। এখনও পালিয়ে যেতে সমর্থ হননি; এমন মানুষদের জোরপূর্বক ওই ক্যাম্পগুলোতে রাখা হবে বলে আশঙ্কার কথা জানানো হয় সেই প্রতিবেদনে।
নো ম্যানস ল্যান্ডে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির, মিয়ানমারের সেনাদের টহল
সম্প্রতি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের জন্য মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ‘সেইফ জোন’ তথা ‘নিরাপদ অঞ্চল’ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী সুপারিশ করেছেন যেন সেইফ জোনগুলো জাতিসংঘ তত্ত্বাবধান করে এবং যেন রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সেখানে ফিরে যেতে পারে। তবে প্রস্তাবিত এই সেইফ জোন নিয়ে সংশয় জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। সংগঠনটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনা কোন ধরনের সেইফ জোন প্রতিষ্ঠার কথা বলছেন সে ব্যাপারে বিস্তারিত জানা না গেলেও অতীতে বিভিন্ন দেশে স্থাপিত সেইফ জোনগুলোর পরিণাম ভালো হয়নি। এক্ষেত্রে বসনিয়া-হার্জেগোভিনা ও শ্রীলঙ্কার সেইফ জোনগুলোর পরিণতির কথা উল্লেখ করেছে মানবাধিকার সংগঠনটি।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরকে যেসব দেশ সহায়তা দিতে চায় সেসব দেশের সরকার এ সেইফ জোন গঠনকে সমর্থন দেবেন কিনা তা স্পষ্ট নয়। তবে সেইফ জোন বা নিরাপদ অঞ্চলগুলোর কর্মকাণ্ড তাদের নামকরণকে স্বার্থক করতে পেরেছে কিংবা সত্যিকারের নিরাপদ অঞ্চল হতে পেরেছে এমন ঘটনা খুবই বিরল; এমনকি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীরা সেখানে টহল দিয়েও শান্তি রক্ষা করতে পারেননি।
এক্ষেত্রে বসনিয়া ও শ্রীলঙ্কার সেইফ জোনের প্রসঙ্গ টেনে আনা হয়। বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা হলো ইউরোপ মহাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে বলকান উপদ্বীপে অবস্থিত একটি রাষ্ট্র। অতীতে এটি যুগোস্লাভিয়া প্রজাতন্ত্রের একটি অংশ ছিল। ১৯৯২ সালের মার্চ মাসে এটি স্বাধীনতা লাভ করে। এর পরপরই বসনীয় মুসলমান, ক্রোয়েশীয় ও সার্বীয় জাতির লোকদের মধ্যে গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। যুগোস্লাভিয়া ভেঙে যাওয়ার পর সার্বরা ১৯৯৫ সালের জুন মাসে সেব্রেনিৎসা শহরটি দখল করে নেয়। জাতিসংঘের ৮১৯ নম্বর প্রস্তাব অনুযায়ী সেব্রেনিৎসা শহরটি নিরাপদ অঞ্চল বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। এলাকাটি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী দ্বারা সুরক্ষিত ছিল। তা সত্ত্বেও বসনিয়ান সার্ব বাহিনী এলাকাটি দখল করে নেয়। সেখানে আশ্রয় নেওয়া ৭০০০ মুসলিম পুরুষ ও বালককে দ্রুত সময়ের মদ্যে হত্যা করে। হাজার হাজার নারীকে ধর্ষণ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটাই ইউরোপে সংঘটিত সবচেয়ে বড় গণহত্যা।
পালাতে থাকা রোহিঙ্গারা
শ্রীলঙ্কায়ও দেশটির সরকার ঘোষিত সেইফ জোন পরবর্তীতে কিল জোন অর্থাৎ হত্যাকাণ্ডের অঞ্চলে পরিণত হয়েছিল। শ্রীলঙ্কা সরকার তামিল টাইগারদের সঙ্গে যুদ্ধের সময় যে এলাকাকে সেফ জোন ঘোষণা করেছিল। লিবারেশন টাইগারস অব তামিল ইলাম সেফ জোন থেকে বেসামরিক লোকদেরকে চলে যেতে বাধা দেয়। দেশটির সেনাবাহিনী সেখানে হামলা চালিয়ে বিপুল সংখ্যক মানুষকে হত্যা করে। সেফ জোনে হামলা না হলেও মানবিক সহায়তাবিহীন এবং ভেতরে চলাচলের স্বাধীনতা না থাকা লোকগুলোর অবস্থা শরণার্থী শিবিরের চেয়েও বাজে হতে পারে।

এরইমধ্যে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে মিয়ানমারের শরণার্থী শিবিরগুলোর দুর্দশার চিত্র উঠে এসেছে। রয়টার্সের ২ সেপ্টেম্বর তারিখের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের আশ্রয় শিবিরগুলোতে জাতিসংঘের ত্রাণ কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার কারণে ১ লাখ ২০ হাজার মানুষ মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। রাখাইনে এখনও থেকে যাওয়া রোহিঙ্গারা বিপন্ন অবস্থায় রয়েছেন। জাতিসংঘসহ ২০টি মানবিক সহায়তা দানকারী প্রতিষ্ঠান মিয়ানমারের ডি-ফ্যাক্টো সরকারের অসহযোগিতা ও বাধাকে কারণ উল্লেখ করে ত্রাণ কার্যক্রম স্থগিত রেখেছিল সেখানে। সীমিত পরিসরে আবারও ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হলেও সেখানে রয়েছে ব্যাপক প্রতিবন্ধকতা। আইআরআইএন-এর প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে ত্রাণকর্মীদের দুর্ভোগের খবর। ওই প্রতিবেদনের ভাষ্য অনুযায়ী ত্রাণকর্মীদের 'রোহিঙ্গা জঙ্গি' প্রমাণে সরকারি ত্রাণ বণ্টন সংস্থার পক্ষ থেকেই প্রচারণা চালানো হয়। সে কারণে স্বেচ্ছাসেবী হতে ভয় পায় সবাই।
আলজাজিরার ১৬ মার্চ তারিখের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোতে কী করে বাঁচার জন্য একটুখানি খাবার, প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা আর শিক্ষার সুযোগ না থাকা সত্ত্বেও বন্দি জীবন যাপনে বাধ্য হয় রোহিঙ্গারা। সে সময় সাবেক জাতিসংঘ মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বাধীন কমিশন ওই শিবিরগুলোতে আটকা থাকা রোহিঙ্গাদের বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে চলাচল ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
সেইফ জোন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আগেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। সংগঠনটির প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়, সেনাবাহিনী যেভাবে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দমন অভিযান চালাচ্ছে তাতে কারও এই মোহে ভোগা উচিত নয় যে সেইফ জোন আসলেই সেইফ বা নিরাপদ হবে।

/এফইউ/
সম্পর্কিত
লাইয়ের অভিষেক পরবর্তী চীনা সামরিক মহড়া নিয়ে সতর্ক অবস্থানে তাইওয়ান
‘হতাশা থেকে রোহিঙ্গারা আইনবিরোধী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হতে পারে’
অস্ত্র ও গুলিসহ ৫ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী আটক
সর্বশেষ খবর
শ্রমিক লীগের জনসভা শুরু
শ্রমিক লীগের জনসভা শুরু
ভারতের জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আ.লীগকে আমন্ত্রণ বিজেপির
ভারতের জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আ.লীগকে আমন্ত্রণ বিজেপির
আনসার আল ইসলামের সদস্য গ্রেফতার
আনসার আল ইসলামের সদস্য গ্রেফতার
ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর দক্ষিণাঞ্চলীয় সদর দফতরে হামলার দাবি রাশিয়ার
ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর দক্ষিণাঞ্চলীয় সদর দফতরে হামলার দাবি রাশিয়ার
সর্বাধিক পঠিত
চকরিয়ার সেই সমাজসেবা কর্মকর্তা ও অফিস সহকারী বরখাস্ত
চকরিয়ার সেই সমাজসেবা কর্মকর্তা ও অফিস সহকারী বরখাস্ত
সাতক্ষীরার ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড 
সাতক্ষীরার ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড 
কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে শিলাবৃষ্টিতে ভেঙেছে ঘরবাড়ি, ধানের ক্ষতি
কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে শিলাবৃষ্টিতে ভেঙেছে ঘরবাড়ি, ধানের ক্ষতি
‘মানুষের কত ফ্রেন্ড, কাউকে পাশে পাইলে আমার এমন মৃত্যু হইতো না’
‘মানুষের কত ফ্রেন্ড, কাউকে পাশে পাইলে আমার এমন মৃত্যু হইতো না’
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা