X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ধারণার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি উত্তপ্ত হয়েছে সমুদ্র

বিদেশ ডেস্ক
০১ নভেম্বর ২০১৮, ১৬:২২আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০১৮, ১৬:৩১

চলতি বছরের এপ্রিলে সেন্টার ফর পোলার অবজারভেশন অ্যান্ড মডেলিং-এর নতুন এক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা গিয়েছিল, পৃথিবীর দক্ষিণ মেরু অঞ্চল অ্যান্টার্কটিকায় সমুদ্রের তলদেশে বরফ গলার হার প্রতি ২০ বছরে দ্বিগুণ হচ্ছে; যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ গুণ। ওই গবেষণাতেই আভাস দেওয়া হয়েছিল, পূর্ববর্তী ধারণার চেয়েও দ্রুত গতিতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা ও উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই আশঙ্কাকে সত্য প্রমাণ করে নতুন এক গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, ধারণার চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি উত্তপ্ত হয়েছে সমুদ্র। আইপিসিসি তাদের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ১.৫ এ সীমিত রাখতে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণের হার ২০১০ সালের তুলনায় ৪৫ শতাংশ কমিয়ে আনতে হবে। তবে নতুন এই গবেষণা প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ধরে রাখতেই কার্বন নিঃসরণ সীমিত করতে হবে আগের চেয়ে ২৫ শতাংশ বেশি হারে।  ন্যাচার জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণা প্রতিবেদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গবেষকরা বলেন, নতুন করে প্রাপ্ত এই তথ্যের কারণে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা আরও কঠিন হয়ে গেল। তারা বলেন, প্যারিস চুক্তিতে বিভিন্ন দেশের সরকার যেই পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তার মাধ্যমে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা দুঃসাধ্য।

ধারণার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি উত্তপ্ত হয়েছে সমুদ্র

চলতি বছরের এপ্রিলে নেচার জিওসায়েন্সে প্রকাশিত ইউকে সেন্টার ফর পোলার অবজারভেশন অ্যান্ড মডেলিং-এর এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, পানির উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে ২০১০-২০১৬ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি সাগরের তলদেশে থাকা বরফগুলো ১,৪৬৩ বর্গ কিলোমিটার সংকুচিত হয়েছে; যার আয়তনের দিক দিয়ে গ্রেটার লন্ডনের সমান। ইউকে সেন্টার ফর পোলার অবজারভেশন অ্যান্ড মডেলিং এর পক্ষ থেকে তখনই বলা হয়েছিল, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অ্যান্টার্কটিকার উপর আগের চেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে। সেকারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি নিয়ে বৈশ্বিক পর্যায়ে যে আভাস রয়েছে তা পাল্টে আগের চেয়ে আরও বাড়ানোর প্রয়োজন হতে পারে। নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, গত ২৫ বছরে বিজ্ঞানীদের ধারণার চেয়েও প্রতি বছর ৬০ শতাংশ হারে সমুদ্রের উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পার্থক্যের মূল কারণ হলো সূর্যের আলো থেকে ও পৃথিবীর পরিবেশে সৃষ্ট তাপ। জ্বালানি ব্যবহারের কারণে সৃষ্ট তাপের চেয়ে এটি আটগুণ বেশি।

ন্যাচার জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণা প্রতিবেদনে বিজ্ঞানীরা একে মানবসৃষ্ট পরিস্থিতি আখ্যা দিয়েছেন। তারা বলেছেন, নতুন এই পরিসংখ্যান আমাদের হিসেবকে পাল্টে দিয়েছে। গ্রিন হাউস গ্যাসের কারণে আগের চেয়ে অনেক বেশি বাড়ছে কার্বন ডাই অক্সাইড। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা বাড়লে অক্সিজেন কমে যাবে এবং উচ্চতা বাড়বে। পরিবেশের উষ্ণতাই বৃদ্ধি পাবে। এতে করে ভবিষ্যতে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা আরও কঠিন হয়ে যাবে।

সমুদ্রর উষ্ণতা বাড়লে এর উচ্চতা বৃদ্ধি পায়, একইসঙ্গে কমে যায় অক্সিজেন

জলবায়ু ইস্যুতে কয়েক বছর পর পরই প্রতিবেদন দেয় জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক আন্তঃরাষ্ট্রীয় প্যানেল (আইপিসিসি)। চলতি বছরের অক্টোবরে আইপিসিসি-এর পক্ষ থেকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং অব ১.৫ ডিগ্রি শিরোনামে ৭২৮ পৃষ্ঠার বিশেষ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে ধরে রাখার জন্য খুব বেশি সময় হাতে নেই। গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ থেকে ২০৫২ সালের মধ্যে উষ্ণতা বৃদ্ধির হার শিল্প বিপ্লব পূর্ববর্তী সময়ের সাপেক্ষে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করবে। এই ভয়াবহ পরিস্থিতি এড়াতে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণের হার ২০১০ সালের তুলনায় ৪৫ শতাংশ কমিয়ে আনতে হবে। আর ২০৫০ সাল নাগাদ কার্বন নিঃসরণের হার শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে। এক্ষেত্রে জ্বালানি, শিল্প, ভবন, পরিবহন ও শহরগুলোতে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে।’ তবে নতুন গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ধরে রাখতে গেলেই কার্বন নিঃসরণ সীমিতকরণের হার ২৫ শতাংশ বাড়াতে হবে। 

সম্প্রতি আইপিসিসি জানিয়েছে কার্বন নিঃসরণের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যেই উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করে যাবে। তারা এই তাপামাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সব দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলো। নতুন এই প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে,পরিস্থিতি এখন আরও কঠিন। প্রতিবেদনের প্রধান গবেষক ড. লরে রেসপ্লান্দি বলেন, এটা উদ্বেগের বিষয়। তিনি বলেন,‘আপনি যদি আইপিসিসির ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস আশঙ্কার কথা ভাবেন তাহলে বুঝবেন সামনে কত কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। আর আমাদের এই গবেষণার পর তে পরিস্থিতি আর কঠিন হয়ে গেছে। গবেষণা প্রতিবেদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গবেষকরা বলেন, নতুন করে প্রাপ্ত এই তথ্যের কারণে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা আরও কঠিন হয়ে গেল। তারা বলেন, প্যারিস চুক্তিতে বিভিন্ন দেশের সরকার যেই পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তার মাধ্যমে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা কঠিন।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, তারা যতটা ভেবেছিলেন তার চেয়ে বেশি গতিতে বাড়ছে সমুদ্রের উচ্চতা

২০০৭ সাল থেকে সমুদ্রের উষ্ণতা ও লবণাক্ততা পরিমাপের জন্য ৪ হাজার ‘আরগো ফ্লোট’ ব্যবহার করতো। এখন গবেষকরা আরও নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে বলে দাবি করছেন। এতে করে বাতাসে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইড পরিমান করে সমুদ্রের উষ্ণতা পরিমাপে আরও নিখুঁত ফলাফল পাওয়া সম্ভব বলে দাবি তাদের।  মূলত সমুদ্রের পানি গরম হলে বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড ও অক্সিজেন নির্গত হয়। ড. রেসপ্লান্দি বলেন, সমুদ্রের উষ্ণতা বৃদ্ধি পলে গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে আর সমুদ্রে এর পরিমাণ কমতে থাকে। তাই আমরা পরিবর্তন হিসেব করে একটা আন্দাজ করতে পারি। এই পরিস্থিতির পরিবর্তনে সম্ভব কি না এমন প্রশ্নে ড. রেসপ্লান্দি বলেন, আমরা এখন কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠ ঠান্ডা করলেও একসময় জমা থাকা এই উষ্ণতা ঠিকই বের হয়ে আসবে। তবে সেটা অনেক সময়ের ব্যাপার।

যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল অশিওনোগ্রাফি সেন্টারের অধ্যাপক সিব্রেন দ্রিজহোত বলেন, গবেষকরা খুবই নিখুঁতভাবে তথ্য উপস্থাপন করেছেন। ফলে এটি বিশ্বাসযোগ্য। তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি থেকে ২ ডিগ্রি পর্যন্ত কিভাবে নিয়ন্ত্রণে থাকবে সেটাই এখন উদ্বেগের বিষয়।

 

/এমএইচ/বিএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
শ্রমিকের অধিকার সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপের আহ্বান
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলটেবিলশ্রমিকের অধিকার সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপের আহ্বান
কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে শিলাবৃষ্টিতে ভেঙেছে ঘরবাড়ি, ধানের ক্ষতি
কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে শিলাবৃষ্টিতে ভেঙেছে ঘরবাড়ি, ধানের ক্ষতি
বিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন রেকর্ড
বিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন রেকর্ড
অষ্টম শ্রেণির স্কুল বাড়াতে চায় সরকার
অষ্টম শ্রেণির স্কুল বাড়াতে চায় সরকার
সর্বাধিক পঠিত
বেতন বৈষম্যে উচ্চশিক্ষার মান হারাচ্ছে বেসরকারি কলেজগুলো
বেতন বৈষম্যে উচ্চশিক্ষার মান হারাচ্ছে বেসরকারি কলেজগুলো
চুয়াডাঙ্গা জেলায় ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুয়াডাঙ্গা জেলায় ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
সিস্টেম লস কমাতে সার্বক্ষণিক ম্যাজিস্ট্রেট চায় পেট্রোবাংলা
সিস্টেম লস কমাতে সার্বক্ষণিক ম্যাজিস্ট্রেট চায় পেট্রোবাংলা
এক ফ্রেমে এত ‘সুন্দরী’, স্মৃতিকাতর সকলেই!
এক ফ্রেমে এত ‘সুন্দরী’, স্মৃতিকাতর সকলেই!
আজকের আবহাওয়া: তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকার আভাস