অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ভূমি দিবস উপলক্ষে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নেমেছেন হাজার হাজার ফিলিস্তিনি। শনিবার গাজার ইসরায়েল সীমান্তে এই বিক্ষোভ হয়। উত্তাল বিক্ষোভ ও তা দমনে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিবর্ষণের কারণে গাজা উপত্যকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। ‘গ্রেট মার্চ অব রিটার্ন’ নামের এই বিক্ষোভ শুরু হওয়ার আগেই এক ফিলিস্তিনি তরুণকে গুলি করে হত্যা করে দখলদার বাহিনী।
শনিববার গাজা সীমান্তে ভূমি দিবসের কর্মসূচিতে জমায়েত হন প্রায় ২০ হাজার ফিলিস্তিনি। দখলদার বাহিনীর দাবি, এ সময় বিক্ষুব্ধ ফিলিস্তিনিরা তাদের অবস্থান লক্ষ্য করে পাথর ও জ্বলন্ত টায়ার নিক্ষেপ করেছে। তবে এতে কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
ভারী বৃষ্টির মধ্যেও সীমান্তের বিক্ষোভস্থল এলাকায় জড়ো হন মুক্তিকামী ফিলিস্তিনিরা। এ সময় লাউড স্পিকারে বাজতে থাকে ফিলিস্তিনের জাতীয় সংগীত। দখলদার বাহিনী যে কোনও সময়ে হামলে পড়তে পারে; এমন আশঙ্কায় আহতদের জরুরি সেবা দিতে আগে থেকেই গাজা সীমান্তে মেডিক্যাল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়।
এদিন বিক্ষোভ শুরুর আগেই ২১ বছরের এক ফিলিস্তিনি তরুণকে গুলি করে হত্যা করে ইসরায়েলি বাহিনী। নিহত তরুণের নাম মোহাম্মদ সাদ (২১)। ‘গ্রেট মার্চ অব রিটার্ন’-এর অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভের প্রাক্কালে তাকে হত্যা করা হয়।
১৯৭৬ সাল থেকে বছরের ৩০শে মার্চ ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের দখলদারিত্বের প্রতিবাদে ‘ভূমি দিবস’ পালন করছে। ওইদিন নিজেদের মাতৃভূমির দখল ঠেকাতে বিক্ষোভে নামলে ইসরায়েলি সেনাদের হাতে ৬ ফিলিস্তিনি নিহত হন। তাদের স্মরণে ওই বছর থেকেই ভূমি দিবস পালন করে আসছেন ফিলিস্তিনিরা। ২০০৭ সাল থেকে গাজা অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি দখলদারিত্বের অবসান এবং পূর্বপুরুষের ঘর-বাড়ি ফিরে পাওয়ার দাবিতে ২০১৮ সালের ৩০ মার্চ থেকে ‘গ্রেট মার্চ অব রিটার্ন’ নামের বিক্ষোভ শুরু করে ফিলিস্তিনিরা। এর অংশ হিসেবে ইসরায়েল সীমান্তে নিয়মিত আয়োজিত হতে থাকে প্রতিবাদ বিক্ষোভ। শনিবার ছিল ফিলিস্তিনিদের গ্রেট মার্চ অব রিটার্ন বা ভূমি দিবসের বর্ষপূর্তি। বরাবরের মতোই এদিনের কর্মসূচিতেও বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলে পড়ে দখলদার বাহিনী।
বিক্ষোভ দমনের নামে ২০১৮ সালে প্রায় ২০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। জাতিসংঘ মনে করে, এসব ফিলিস্তিনিকে হত্যার দায়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ আনা যেতে পারে। এমন অনেককে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী গুলি করেছে যারা স্পষ্টতই সহিংসতায় জড়িত নয়। এদের মধ্যে শিশুরা যেমন রয়েছে শিশু, তেমনি রয়েছে চিকিৎসাকর্মী ও সাংবাদিকরাও।
এ মাসেই জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের সংশ্লিষ্ট তদন্ত কমিটি ৩০০ জনেরও বেশি ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষাৎকার এবং ড্রোনের ভিডিও ফুটেজসহ প্রায় আট হাজার প্রমাণের ভিত্তিতে একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর কারণে এমন অনেক ফিলিস্তিনি হত্যার শিকার হয়েছে বা পঙ্গুত্ববরণ করেছে যাদেরকে গুলি করার সময় তারা কারও নিশ্চিত মৃত্যুর বা কাউকে গুরুতরভাবে আহত করার ঝুঁকি তৈরি করছিল না বা সরাসরি সহিংসতায় যুক্ত ছিল না।’ উল্লেখ্য, এ পর্যন্ত ‘গ্রেট মার্চ অব রিটার্ন’ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ১৮৯ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স।