ভারতে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে যথেষ্ঠ সংখ্যক মাস্কের জোগান না থাকায় কোনও কোনও রাজ্য এখন মুখে গামছা জড়িয়েই কাজ চালানোর পরামর্শ দিচ্ছে। আদিবাসী অধ্যুষিত কোনও কোনও এলাকায় আবার স্থানীয় মানুষরা গাছের পাতা দিয়ে নিজেরাই মুখোশ বানিয়ে তা পরছেন।
মুখোশের বদলে আপাতত গামছা মুখে জড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব।
শুক্রবার নিজের টুইটার হ্যান্ডল থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব নিজেই একটি ‘ডেমো’ দিয়ে দেখিয়েছেন, এই মহামারির আশঙ্কার মধ্যে কীভাবে কাঁধে একটা গামছা ফেলে রাখলে ও দরকারে মুখের ওপর জড়িয়ে নিলে তা দিয়ে মাস্কের কাজ হতে পারে।
ওই ভিডিওতে তাকে বাংলায় বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘আমাদের প্রত্যেকের বাড়িতেই তো ‘গামছা’ বা ‘জল গামছা’ থাকে। এখন বাইরে বেরোনোর সময় ওই গামছা দিয়েই যদি মুখটা ঢেকে নেন তাহলে কিন্তু সেটা আমাদের মাস্কের কাজ অনেকটাই করে দেবে।’
‘তবে হ্যাঁ, গামছাটা আপনার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। পুরনো গামছা হলে বা রঙ চটে গেলে কোনও ক্ষতি নেই।’
‘কলকাতা বা গৌহাটির মতো বড় শহর থেকে মাস্ক আসতে অনেক সময় লাগবে। ততক্ষণ অপেক্ষা না-করে ত্রিপুরাবাসী যদি নিজেদের বাড়ির গামছাটাই এভাবে কাজে লাগায় তাতে অনেক উপকার হবে।’ ওই ভিডিওতে এভাবেই বলেছেন বিপ্লব কুমার দেব।
ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তার এই বার্তা গোটা রাজ্যজুড়ে জোরেশোরে প্রচার করা শুরু হয়ে গেছে।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ভারতে যে উপযুক্ত মানসম্মত মাস্কের অভাব আছে – কিংবা চাহিদার তুলনায় তা একেবারেই পর্যাপ্ত নয় – তা ত্রিপুরা সরকারের এই বার্তা থেকেই স্পষ্ট।
ওদিকে ভারতের আদিবাসী-প্রধান রাজ্য ছত্তিশগড়ের বহু গরিব মানুষ প্রশাসন বা স্বাস্থ্য দফতরের ভরসায় বসে না-থেকে নিজেরাই পাতা দিয়ে এক ধরনের মুখোশ বানিয়ে পরতে শুরু করেছেন।
বিবিসি-র হিন্দি বিভাগ ছত্তিশগড়ের বস্তার জেলা থেকে পাঠানো এক ভিডিও প্রতিবেদনে দেখিয়েছে, কীভাবে আদিবাসী নারী-পুরুষরা বুনো গাছের সবুজ পাতা দিয়ে মুখোশ বানিয়ে তা দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে সেটাকেই মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
এই বিশেষ ধরনের মুখোশগুলো সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ও বনজ উপাদানে তৈরি, এমন কী সেগুলো মুখে বাঁধার জন্যও গাছেরই সরু লতানো অংশ কাজে লাগানো হচ্ছে। প্লাস্টিক বা কোনও কৃত্রিম রাসায়নিক সেখানে একেবারেই ব্যবহার করা হয়নি।
প্রশ্ন হলো, বিজ্ঞানসম্মত মাস্কের বদলে কেউ যদি এ ধরনের গামছা বা পাতার মুখোশ ব্যবহার করেন, সেটা করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কতটা কার্যকরী হবে?
দিল্লিতে নামী ভাইরোলজিস্ট ড. অর্ণব সরকার এ প্রশ্নের জবাবে বাংলা ট্রিবিউনকে বলছিলেন, ‘দেখুন এগুলো ভাইরাস কতটা ঠেকাতে পারবে সেটা ওই গামছার বা পাতার মুখোশের কোয়ালিটি না-দেখে বলা সম্ভব নয়। তবে সাধারণভাবে আপনার মুখে ওরকম কিছু একটা জড়ানো থাকলে ধুলোবালি কম ঢুকবে, আপনার সুস্থ থাকার সম্ভাবনা বাড়বে তা নিয়ে তো কোনও সন্দেহ নেই।
‘আর একটা জিনিস হল, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় একশো তিরিশ কোটি ভারতীয়কেই যে মাস্ক বা পিপিই (পার্সোনাল প্রোটেক্টিভ ইক্যুইপমেন্ট) পরে ঘুরে বেড়াতে হবে বিষয়টা তো সে রকম নয়। কাদের এগুলো লাগবে, কখন লাগবে - তার কিছু ক্যাটাগরিও আছে। ফলে আমি বলব, মুখে গামছা জড়িয়ে রাখলে বা পরিষ্কার একটা পাতার মুখোশ পরলে তাতে কোনও ক্ষতি নেই, বরং লাভ হতে পারে’, জানাচ্ছেন ড. সরকার।
ভারতে একটি কথা খুব চালু আছে – ‘জুগাড়’ – যা এখন ইংরেজিতেও আখছার ব্যবহৃত হয়। প্রয়োজনের জিনিসটা হাতের নাগালে না-থাকলে অন্য কোনওভাবে জোগাড়যন্ত্র করে সেটার কাজ চালিয়ে নেওয়ার স্বভাবসুলভ ভারতীয় দক্ষতাকেই বলে ‘জুগাড়’। এই করোনা-যুদ্ধের সময়ও গামছা বা বনের লতাপাতা দিয়েই মাস্কের ‘জুগাড়’ সারছে ভারত!
It's my appeal to every citizen of our State to always keep a Jal Gamcha and use it as a precaution alternative to mask in addition to maintaining social distance against spreading COVID-19. pic.twitter.com/ef2n912Cnq
— Biplab Kumar Deb (@BjpBiplab) March 27, 2020