বেতনভাতা বাড়ানো ও কর্ম পরিবেশের উন্নয়নের দাবিতে দ্বিতীয় দফায় ২৪ ঘণ্টার ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছেন ইংল্যান্ডের জুনিয়র চিকিৎসকরা। ধর্মঘটের কারণে বাতিল হয়ে গেছে প্রায় তিন হাজার রোগীর অপারেশনের কার্যক্রম। এছাড়া অতি প্রয়োজনীয় নয় এ ধরনের বিভিন্ন কার্যক্রমও বাতিল করা হয়েছে। তবে চালু রাখা হয়েছে ২৪ ঘণ্টার জরুরি চিকিৎসাসেবা।
শনিবারে দায়িত্ব পালনের জন্য ভাতা বাড়ানোর দাবিসহ বিভিন্ন দাবিতে ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেরেমি হান্টের সঙ্গে মতৈক্য না হওয়ায় বুধবার দ্বিতীয় দফায় ২৪ ঘণ্টার ধর্মঘটে নামেন ইংল্যান্ডের ৪৫ হাজার জুনিয়র চিকিৎসক।
চিকিৎসকরা বলছেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর চাপিয়ে দেওয়া নতুন এক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই আন্দোলনে নামছেন তারা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়, ধর্মঘট শুরু হওয়ার আগে অতি প্রয়োজনীয় নয় এমন দুই হাজার ৮৮৪টি অপারেশন বাতিল করা হয়েছে।
ব্রিটিশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন জানায়,কনিষ্ঠ ও শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের ওভারটাইম ভাতা,ছুটির দিনে দায়িত্ব পালন ভাতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মতৈক্য না হওয়ায় তারা এই কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হয়েছেন। গত নভেম্বরে এ বিষয়ে মতামত নেওয়া হলে ৯৮ শতাংশ চিকিৎসক ধর্মঘটে যাওয়ার পক্ষে ভোট দেন।
বুধবারের ধর্মঘটের আগে আলোচনায় বসে ব্রিটিশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন, ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের কর্মী এবং ব্রিটিশ স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু ওই বৈঠকে ঐকমত্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হন সংশ্লিষ্টরা। কয়েকটি শনিবার নাকি সবকটি শনিবার ট্রেইনি চিকিৎসকদের সাপ্তাহিক কার্যসপ্তাহের আওতাভুক্ত হবে তা নিয়ে আলোচনায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়।
আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে একটি চুক্তির বিষয়ে মধ্যস্থতা করেছিলেন স্যালফোর্ড রয়েল এনএইচএস ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের প্রধান নির্বাহী স্যার ডেভিড ডালটন। ব্রিটিশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি, ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের কর্মীদের সঙ্গেও তিনি কথা বলেন।
স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, অনানুষ্ঠানিক ওই আলোচনা মঙ্গলবার শেষ হয়েছে। তবে ব্রিটিশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, তাদের এই কর্মসূচি পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী পরিচালিত হবে।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বুধবার সকাল ৮টা থেকে ২৪ ঘণ্টার ধর্মঘটে যান জুনিয়র চিকিৎসকরা।
ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের একটি নথি ফাঁসের পর এ আন্দোলন গতি পায়। ওই নথিতে ক্রমবর্ধমান তরুণ জুনিয়র চিকিৎসকদের সংখ্যা বৃদ্ধিতে তাদেরকে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। ওই নথিকে বেশ বাজে বিষয় হিসেবে উল্লেখ করেন চিকিৎসক নেতারা। যেখানে বিশেষ করে, কিছু এলাকায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসাকর্মীর অভাব রয়েছে।
এক হিসাবে দেখা গেছে, হেলথ এডুকেশন ইংল্যান্ড, ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের মেডিক্যাল ট্রেনিং-এর জন্য আগামী আগস্ট থেকে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের ট্রেনিং-এর জন্য আবেদন করেছেন মাত্র ১৫ হাজার ৮৫৫ জন। এ সংখ্যা ২০১৩ সালের চেয়ে ১২৫১ জন কম। অর্থাৎ প্রশিক্ষণপ্রার্থীর হার কমেছে ৯ দশমিক ২ শতাংশ। আর ২০১৫ সালের তুলনায় এ সংখ্যা ৪৫৩ জন কম। গতবছর এ সংখ্যা ছিল ১৬ হাজার ৩০৮। এক্ষেত্রে প্রশিক্ষণপ্রার্থীর হার কমেছে ২ দশমিক ৮৩ শতাংশ।
এদিকে কনিষ্ঠ চিকিৎসকদের এই কর্মসূচির সমালোচনা করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। তার ভাষায়, ‘এই ধর্মঘটের প্রয়োজন ছিল না; এটা ক্ষতিকর। চিকিৎসকদের এই মাত্রার ধর্মঘট রোগীদের ক্ষতি না করে পারে না।’ সূত্র: গার্ডিয়ান।
/এমপি/এফইউ/