X
মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫
৩ আষাঢ় ১৪৩২

হামাসের লড়াই কি অধিকারের? পেছনের শক্তি কারা?

নাছির আহমেদ
১৬ অক্টোবর ২০২৩, ০৬:০০আপডেট : ০৪ জুলাই ২০২৪, ১৬:০৭

ইসরায়েলের বেশির ভাগ মানুষ তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। দিনটি ছিল শনিবার, ইহুদিদের পবিত্র উৎসব সাব্বাত। এই উপলক্ষে তারা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আবার কেউ কেউ বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই একঝাঁক রকেট হামলায় কিম্ভূতকিমাকার অবস্থা।

গাজা থেকে ইসরায়েলের তেল আবিবে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় এই হামলা চালিয়েছে হামাস। এই হামলার মাধ্যমে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নতুন করে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী এই সংগঠন।

এত দিন ইসরায়েলি হামলার প্রতিক্রিয়ায় পাল্টানাছির হামলা চালালেও এবার সরাসরি ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামলা করে বসে তারা। প্রতিবাদে ইসরায়েলও পাল্টা হামলা শুরু করে। দুপক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলায় কমপক্ষে পাঁচ শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে। কিন্তু সবার প্রশ্ন, হামাসকে সমর্থন দিচ্ছে কারা?

যেভাবে হামাসের যাত্রা শুরু
হামাস অর্থ ‘উদ্যম’। এটি হারাকাত আল-মুকাওয়ামাহ আল-ইসলামিয়া বা ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত রূপ। দখলদার ইসরায়েলিদের কাছে বাস্তুচ্যুত অনেক ফিলিস্তিনি মিসরে শরণার্থী হিসেবে বসবাস করেছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই মিসরের ইসলামি রাজনৈতিক দল মুসলিম ব্রাদারহুডের আদর্শে দীক্ষা নেন। ১৯৮৭ সালে এমনই দুজন আহমেদ ইয়াসিন ও আব্দেল আজিজ আল-রানতিসি প্রতিষ্ঠা করেন হামাস।

২০১৭ সালে হামাস নতুন একটি ধারা প্রকাশ করে, যা ফাতাহর সম্পূর্ণ বিপরীত। ইসরায়েলের রাষ্ট্রকে সম্পূর্ণ অস্বীকৃতি জানিয়ে বলা হয়, ‘হামাস বিশ্বাস করে যে ‘ইসরায়েল’ প্রতিষ্ঠা সম্পূর্ণ ‘অবৈধ’। হামাস হচ্ছে ‘হারকাত আল-মুকাওয়ামা আল-ইসলামিয়া’-এর সংক্ষেপ, যার অর্থ ইসলামি নবজাগরণের আন্দোলন।

হামাসের লক্ষ্য
হামাস শব্দের অর্থ উদ্দীপনা ও গভীর দেশপ্রেম। তাদের সাংগঠনিক সনদ অনুযায়ী, দখলদার ইসরায়েলি রাষ্ট্রকে উৎখাত করে একটি ইসলামি রাষ্ট্র গঠন করাই হামাসের লক্ষ্য। পরে অবশ্য সংগঠনটি বলেছে, ইসরায়েল ১৯৬৭ সালের যুদ্ধপূর্ব সীমানায় ফিরে গেলে অর্থাৎ ওই যুদ্ধের সময়ে অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভুখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের সেখানে ফিরতে দিলে তারা ব্রাদারহুডের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে। কিন্তু ইসরায়েল এ প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করে দেয়।

হামাসের সাংগঠনিক কাঠামো
হামাসের প্রধান শাখা দুটি। এর একটি সাংস্কৃতিক, যার নাম দাওয়াহ। সামরিক শাখার নাম ইজ্জ আদদ্বীন আল-কাসসাম ব্রিগেডস।

হামাসকে কারা সমর্থন দিচ্ছে
হামাসের সবচেয়ে বড় পৃষ্ঠপোষক মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার। ২০১২ সালে প্রথম রাষ্ট্রনেতা হিসেবে হামাসের সঙ্গে বৈঠক করেন কাতারের আমির শেখ হামাদ বিন খলিফা আল-থানি। এ পর্যন্ত হামাসকে প্রায় ২০০ কোটি ডলার অর্থায়ন করেছে দেশটি। তবে বর্তমান পরিস্থিতির জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে কাতার।

এ ছাড়া হামাসকে সমর্থন দিচ্ছে ইরান ও ইরান-সমর্থিত সিরিয়ার সরকার এবং লেবাননের হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী। হামাসকে ক্ষেপণাস্ত্রসহ সমরাস্ত্র প্রযুক্তি দিয়ে সহায়তা করে ইরান। এই জোটের সদস্যরা মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন নীতির ঘোর বিরোধী। তুরস্ক হামাসের আরেক পৃষ্ঠপোষক। এ ছাড়া ফিলিস্তিনের অন্য গোষ্ঠীগুলোও হামাসকে অস্ত্র সহায়তা দেয়। সুদান ও মিসরের মাধ্যমে তারা গাজায় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র পাচার হয়ে থাকে।

তবে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, মিসর ও জাপান হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছে।

ইসরায়েলে হামলার পর ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, হামাসের এই হামলা ‘দখলকারীদের মুখে ফিলিস্তিনি জনগণের আস্থার’ প্রমাণ।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলী খামেনির উপদেষ্টা রহিম সাফাভি বলেছেন, ‘আমরা ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের অভিনন্দন জানাই, যতক্ষণ ফিলিস্তিন ও জেরুজালেমের স্বাধীনতা না আসে, আমরা ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের পাশে থাকবো।’

হামাসের এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘ইসরায়েলে হামলা করার পেছনে তাদের সহযোগী ইরানের সহায়তা রয়েছে।’ তবে আকস্মিক এই হামলার পেছনে কী কারণ রয়েছে, তা বিস্তারিত জানায়নি হামাস।

সাবেক মার্কিন গোয়েন্দা ও সামরিক কর্মকর্তারা বলছেন, হামাসের হামলার প্রাথমিক কারণ ইসরায়েল ও সৌদি আরবের মধ্যে আলোচনাকে ব্যাহত করা।

ন্যাটোর সাবেক কমান্ডার এবং নৌবাহিনীর সাবেক অ্যাডমিরাল জেমস স্ট্যাভরিডিস বলেন, হামাস এই হামলার মাধ্যমে ‘তাদের অদম্য শত্রু ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে’ চাইছে।

গাজায় মানবিক ত্রাণসহায়তা পাঠানো নিয়ে আব্বাসের সঙ্গে কথা বলেন বাইডেন  ছবি: সংগৃহীত

হামাস ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না: মাহমুদ আব্বাস
এদিকে গাজাভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠন হামাসের কর্মকাণ্ড ও নীতি ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না বলে মন্তব্য করেছেন ফিলিস্তিনি স্বশাসন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। তিনি যখন এই মন্তব্য করলেন, তখন ইসরাইলি বাহিনী গাজায় নির্বিচার মানুষ হত্যা করছে।

মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, হামাসের কর্মকাণ্ড ও নীতি ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না। বার্তা সংস্থা ওয়াফার বরাতে বিবিসি বলছে, ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সঙ্গে ফোনালাপে এই মন্তব্য করেছেন আব্বাস।

নিউজ আউটলেট অনুসারে, আব্বাস উভয় পক্ষের বেসামরিক লোকদের হত্যার প্রত্যাখ্যান নিশ্চিত করেছেন। এ ছাড়া উভয় পক্ষের বেসামরিক নাগরিক ও বন্দিদের মুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

মাহমুদ আব্বাস ২০০৪ সালের ১১ নভেম্বর থেকে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) সভাপতি এবং ২০০৫ সালের ১৫ জানুয়ারি থেকে ফিলিস্তিনের জাতীয় কর্তৃপক্ষের রাষ্ট্রপতি। তিনি ফাতাহ রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব করেন, যার সঙ্গে হামাসের তিক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে।

গত ৭ অক্টোবর ক্ষমতাধর ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ভেদ করে ভোরে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী বাহিনী হামাস। আক্রমণের পরপরই ফিলিস্তিনের ভূরাজনীতিতে দলটির শক্ত অবস্থান প্রতীয়মাণ হয়ে উঠেছে। তবে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় হামাসের একচ্ছত্র রাজত্ব থাকলেও, পুরো ফিলিস্তিনের রাজনীতি আছে জটিল অবস্থায়। সবচেয়ে প্রভাবশালী দল ফাতাহ। তার পরেই আসে হামাসের নাম। হামাস ইসলামপন্থি আর ফাতাহ ধর্মনিরপেক্ষ।

মাহমুদ আব্বাসকে বাইডেনের ফোন
ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে ফোন করে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। অবরুদ্ধ গাজায় মানবিক ত্রাণসহায়তা পাঠানো নিয়ে বাইডেন কথা বলেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে বলেছেন, আমি তাকে আশ্বস্ত করেছি যে গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের কাছে মানবিক ত্রাণসহায়তা পৌঁছানো নিশ্চিত করতে এবং এই সংঘাত যেন আর ছড়িয়ে না পড়ে, সে জন্য ওই অঞ্চলের অংশীদারদের সঙ্গে আমরা কাজ করছি।

বাইডেন আরও বলেন, তিনি ইসরায়েলে হামাসের হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং হামাস যে ফিলিস্তিনের জনগণের ‘মর্যাদা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য লড়ছে না’, সে বিষয়টি বলেছেন তিনি।

তথ্যসূত্র: বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা

/এনএআর/
সম্পর্কিত
যুক্তরাষ্ট্রে সোশ্যাল মিডিয়াই এখন সংবাদের প্রধান উৎস
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতজি৭ শীর্ষ সম্মেলন ছেড়ে তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে যান ট্রাম্প
পঞ্চম দিনে ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: তেহরান ত্যাগের আহ্বান ট্রাম্পের
সর্বশেষ খবর
লিবিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন আরও ১৫৮ বাংলাদেশি
লিবিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন আরও ১৫৮ বাংলাদেশি
শিক্ষাগুরুর মর্যাদার গল্পে প্রশংসিত ‘সম্মান’
শিক্ষাগুরুর মর্যাদার গল্পে প্রশংসিত ‘সম্মান’
যুক্তরাষ্ট্রে সোশ্যাল মিডিয়াই এখন সংবাদের প্রধান উৎস
যুক্তরাষ্ট্রে সোশ্যাল মিডিয়াই এখন সংবাদের প্রধান উৎস
সুন্দরবন থেকে হরিণ শিকারের ৬০০ ফাঁদ জব্দ
সুন্দরবন থেকে হরিণ শিকারের ৬০০ ফাঁদ জব্দ
সর্বাধিক পঠিত
নগরভবনে সভা করছেন ইশরাক, নামের সঙ্গে ‘মাননীয় মেয়র’
নগরভবনে সভা করছেন ইশরাক, নামের সঙ্গে ‘মাননীয় মেয়র’
ইরানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা থেকে সরে দাঁড়ালো ভারত?
ইরানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা থেকে সরে দাঁড়ালো ভারত?
ক্রিকেটার সাকিবসহ ১৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
ক্রিকেটার সাকিবসহ ১৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
শপথের সুযোগ নেই, পরিপক্ব আচরণ প্রত্যাশা করি: আসিফ মাহমুদ
শপথের সুযোগ নেই, পরিপক্ব আচরণ প্রত্যাশা করি: আসিফ মাহমুদ
ইরানের ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা ‘অবমূল্যায়ন’ করেছে ইসরায়েল
ইরানের ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা ‘অবমূল্যায়ন’ করেছে ইসরায়েল