বছর কয়েক আগে বিয়াট্রিস মুঙ্গাইয়ের বাড়িতে বলপূর্বক প্রবেশ করেন এক তরুণ। ৮১ বছর বয়সী ওই নারী একটুও ঘাবড়ে না গিয়ে অনুপ্রবেশকারীর পুরুষাঙ্গে একের পর এক লাথি মারতে থাকেন। সহ্য করতে না পেরে মাটিতে পড়ে কাতরাতে কাতরাতে নিজের প্রাণভিক্ষা করতে থাকেন ওই ব্যক্তি। জবাবে মুঙ্গাইর বলেন, আগেই সাবধান করেছিলাম!
কেনিয়াতে নারীরা বহুবছর ধরেই সহিংসতার শিকার হয়ে আসছেন। দেশের আইন তাদেরকে রক্ষার্থে যথেষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না। এজন্য মুঙ্গাইর মতো অনেকেই আত্মরক্ষার্থে রুখে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানা গেছে।
দেশটির রাজধানী শহর নাইরোবিতে নিয়মিত প্রশিক্ষণ করেন একদল নারী। শহরের কোরোগোচো এলাকায় একাধিক নারী ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হলে প্রায় ২৫ বছর আগে এই প্রশিক্ষণ শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন এক মার্কিন দম্পতি। শাইনিং হোপ ফর কমিউনিটিস নামের অলাভজনক এই সংস্থাটি কেবল গত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর সময়ের মধ্যে লিঙ্গ ভিত্তিক নৃশংসতার শিকার ৩০৭ জন নারীকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করেছে।
পুলিশের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কেবল গত বছরের আগস্ট থেকে অক্টোবরেই অন্তত ৯৭ জন নারী ফেমিসাইডের (লিঙ্গ বৈষম্যের কারণে ইচ্ছাকৃত হত্যাকাণ্ড) শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে আছেন নিজের অ্যাপার্টমেন্টে নৃশংস হত্যার শিকার নারী থেকে প্রেমিকের আগুনে প্রাণ হারানো অলিম্পিক দৌড়বিদ।
আগের বছরগুলোর তথ্য নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কোনও পর্যালোচনা পুলিশের পক্ষ থেকে না পাওয়া গেলেও, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে একটি পরিসংখ্যান তৈরি করেছে আফ্রিকা ডেটা হাব। সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২৩ সালে অন্তত ৭৫ এবং আগের বছর অন্তত ৪৬ নারী ফেমিসাইডের শিকার হয়েছেন।
নাইরোবির ওই সংস্থায় নিয়মিত প্রশিক্ষণার্থীদের একজন হলেন ৯৩ বছর বয়সী ম্যারি ওয়াইনাইনা। তিনি আরেক প্রশিক্ষণার্থীর সঙ্গে চর্চা চালিয়ে যাচ্ছিলেন, যিনি পুরুষ আক্রমণকারীর ভূমিকায় অভিনয় করছিলেন। এখানকার বয়স্ক প্রশিক্ষণার্থীরা নিজেদের অভিহিত করেন 'কুকু জুগিনচে' বলে। সোয়াহিলি এই শব্দের ভাষান্তর করা যেতে পারে- 'নানি, নিজেকে বাঁচান'।
ওয়াইনিনা জানান, কয়েক বছর আগে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে একদল পুরুষ। তাদেরকে আত্মরক্ষার কৌশল ব্যবহার করে প্রতিহত করতে সক্ষম হন তিনি।
গবেষকরা বলেছেন, পিতৃতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি, আর্থসামাজিক বৈষম্য এবং অপর্যাপ্ত আইনি সুরক্ষার কারণে দেশটিতে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ক্যান্সারের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। যেমন, কেনিয়াতে আইনগত সঙ্গীর সঙ্গে বলপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করাকে ধর্ষণ বলে গণ্য করা হয় না।
নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিহত করায় সম্প্রতি নিজেদের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন পুলিশের এক মুখপাত্র।
এই পরিস্থিতিতে নিজের নিরাপত্তা নিজেদেরই নিশ্চিত করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন কুকু জুগিনচেরা। ৮২ বছর বয়সী এশথার মুইরুইরি বলেছেন, কমবয়সী নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা নিয়ে আমরা আতঙ্কিত। তাই প্রশিক্ষণই শেষ ভরসা।