সাইবেরিয়ায় ইউক্রেনের সাম্প্রতিক হামলার আঘাত মস্কোকে বহুদিন ভোগাতে পারে। পশ্চিমা সামরিক উড্ডয়ন বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন, ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন বোম্বার প্রতিস্থাপনে রাশিয়ার কয়েকবছর পার হয়ে যাবে। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
সাইবেরিয়ায় হামলার শিকার বিমানবন্দরের স্যাটেলাইট ছবি যাচাই করে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আলামত দেখা গেছে বলে দাবি করেছেন পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরা। একাধিক এয়ারক্র্যাফট পুড়ে গেছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত বা পুরোপুরি ধ্বংসপ্রাপ্ত এয়ারক্র্যাফটের সংখ্যা নিয়ে একেক পক্ষ পৃথক দাবি করছে।
ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির দাবি, অন্তত ৪০টি এয়ারক্র্যাফট তাদের হামলার শিকার হয়েছে। আর দুই মার্কিন কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, সর্বোচ্চ ২০টি এয়ারক্র্যাফট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যার মধ্যে ১০টি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।
অবশ্য কোনও এয়ারক্র্যাফট ধ্বংস হওয়ার খবর অস্বীকার করে রুশ সরকার দাবি করেছে, ক্ষয়ক্ষতি দ্রুতই সামলে নেওয়া যাবে। তবে তাদের দাবি খারিজ করে দিয়েছেন রুশ সামরিক ব্লগাররা। সামরিক নেতৃত্বের ওপর অবহেলার অভিযোগ তুলে তারা বলেছেন, ডজনখানেক উড়োজাহাজ ধ্বংসপ্রাপ্ত বা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইউক্রেনীয় গোয়েন্দাদের তত্ত্ববধানে প্রায় ১৮ মাস প্রস্তুতির পর এই অভিযান চালানো হয়। মাকড়সার জাল (স্পাইডারস ওয়েব) নামের অভিযানের জন্য নির্ধারিত বিমানঘাঁটির কাছে ড্রোনবাহী ট্রাক গোপনে রেখে আসা হয়। পরে ওই ট্রাক থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ড্রোন পাঠিয়ে ব্যাপক হামলা চালায় কিয়েভ।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের তিন বছর ধরে পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার নিয়ে জেলেনস্কির মিত্রদের কিছুটা তটস্থ করে রেখেছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মস্কোর পারমাণবিক সক্ষমতা মূলত ভূমি ও সমুদ্র নির্ভর। তাই বোম্বার ধ্বংস করায় ক্রেমলিনের ক্ষমতায় কোনও প্রভাব পড়বে না।
তবে সাইবেরিয়ায় হামলার প্রতীকী প্রভাব অনেক বেশি। যুদ্ধের মূল ফ্রন্টলাইন থেকে প্রায় সাড়ে চার হাজার কিলোমিটার দূরে পারমাণবিক শক্তিধর একটা দেশের বিমানঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে ক্রেমলিনের আঁতে ঘা দিয়েছে কিয়েভ।
লন্ডনভিত্তিক চিন্তক সংস্থার (থিংক ট্যাংক) বিশেষজ্ঞ জাস্টিন ব্রংক বলেছেন, হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল টিইউ-৯৫ এমএস বেয়ার-এইচ এবং টিইউ-২২ এমথ্রি ব্যাকফায়ার বোম্বার। যুদ্ধের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ওই ফ্লিটের ১০ শতাংশের বেশি খুইয়েছে মস্কো।
রয়টার্সকে ব্রোংক বলেছেন, রুশ বিমানবাহিনী প্রথম থেকেই সর্বোচ্চ সক্ষমতায় অভিযান চালাচ্ছিল। এই ক্ষয়ক্ষতির কারণে তাদের ওপর চাপ স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি পাবে।
পুরো বিষয়ে রাশিয়ার বক্তব্য জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল রয়টার্স। তবে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে রয়টার্সের অনুরোধে তাৎক্ষণিকভাবে কোনও সাড়া দেওয়া হয়নি।