ভারতের আহমেদাবাদে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার স্থান পরিদর্শনে শুক্রবার (১৩ জুন) সেখানে গেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পাশাপাশি উড়োজাহাজের একমাত্র জীবিত আরোহীর সঙ্গে দেখা করতে হাসপাতালে যান তিনি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এ খবর জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সর্দার বল্লবভাই প্যাটেল বিমানবন্দরে নেমেই মেঘানিনগরের কাছে দুর্ঘটনাস্থলে চলে যান। তার সঙ্গে ছিলেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ভুপেন্দ্র প্যাটেল।
গুজরাট অঙ্গরাজ্যের আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মাথায় ভেঙে পড়ে এয়ার ইন্ডিয়ার যাত্রীবাহী বিমান বোয়িং ৭৪৭ ড্রিমলাইনার। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় দুপুরে ঘটেছে দুর্ঘটনাটি।
বিমানটিতে মোট ২৪২ জন আরোহী ছিলেন। এর মধ্যে ২১৭ জন প্রাপ্তবয়স্ক, ১১ শিশু এবং ২ জন নবজাতক ছিল। কেবল একজন আরোহীকে জীবিত উদ্ধার করা গেছে। বিশ্বাসকুমার রমেশ নামের ওই যাত্রী হলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক। হিন্দুস্তান টাইমসকে তিনি বলেন, উড্ডয়নের ৩০ সেকেন্ড পর বিকট শব্দ শুনি, তারপরই সবকিছু তছনছ হয়ে যায়। চারপাশে শুধু লাশ আর বিমানের ধ্বংসাবশেষ। আমি কোনোমতে উঠে দাঁড়িয়ে দৌড় দিই, এরপর কেউ একজন আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
হাসপাতালে গিয়ে কুমারের সঙ্গে দেখা করেছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী।
দুর্ঘটনার খবর শোনার পর তিনি হতবাক হয়ে যান বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে জানিয়েছেন মোদি। তিনি লিখেছেন, পুরো ঘটনাটি এতোটাই হৃদয়বিদারক, যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। এই দুঃখের সময়ে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত সবার পাশে আমি রয়েছি। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় নিয়োজিত মন্ত্রীবর্গ এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমি নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি।
বৃহস্পতিবার দুর্ঘটনার পরই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও বেসামরিক বিমান পরিবহনমন্ত্রী রাম মোহন নাইডু কিনজারাপু। তিনি জানান, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কেন্দ্র সরকার।
দুর্ঘটনার শিকার উড়োজাহাজটি শহরের বিখ্যাত বিএম মেডিক্যাল কলেজের হোস্টেলের ওপর আছড়ে পড়ে। এতে কয়েকজন শিক্ষার্থীও মারা গেছেন বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম। রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব ধনঞ্জয় দ্বিবেদী জানান, বিমানটি ভেঙে পড়েছে সিভিল হাসপাতাল ছাত্রাবাস ও কর্মচারী কোয়ার্টার সংলগ্ন এলাকায়। ওইসব ভবনের বাসিন্দারাও আহত হয়েছেন।
ঘটনাস্থলে বিমানের বিভিন্ন অংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। বিমানের লেজ আটকে আছে ভবনের ছাদের ওপর। ভারতের এনডিটিভি ও সিএনএন-নিউজ১৮-এর খবরে বলা হয়েছে, বিমানের প্রধান অংশটি পড়ে হোস্টেলের ডাইনিং হলের ওপরেই, যেখানে অনেক শিক্ষার্থী খাবার খাচ্ছিলেন।
পুলিশ কর্মকর্তা বিধি চৌধুরী বলেন, ১১এ নম্বর আসনের যাত্রী রমেশকে জীবিত পাওয়া গেছে। আহত অবস্থায় আরও কয়েকজনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে, তাদের মধ্যেও কেউ কেউ বেঁচে থাকতে পারেন।
দুর্ঘটনাকবলিত বিমানটি ছিল বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার, যা ২০১৩ সালে প্রথম উড়েছিল। ২০১৪ সালে এয়ার ইন্ডিয়ার কাছে এটি হস্তান্তর করা হয়। বোয়িংয়ের মতে, ড্রিমলাইনার মডেলের এটিই প্রথম বড় দুর্ঘটনা। বিমানটি আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে দুপুর ১টা ৩৯ মিনিটে উড্ডয়ন করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই মেইডে সংকেত পাঠায় এবং তারপর থেকেই আর যোগাযোগ ছিল না।
বিমানটিতে থাকা ২৪২ আরোহীর মধ্যে ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ, ৭ জন পর্তুগিজ এবং ১ জন কানাডীয় নাগরিক ছিলেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সি.আর. পাতিল জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে গুজরাটের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানিও রয়েছেন।
দুর্ঘটনাকবলিত এয়ার ইন্ডিয়া বর্তমানে টাটা গ্রুপের মালিকানাধীন। ২০২২ সালে সরকার থেকে অধিগ্রহণের পর ২০২৪ সালে ভিস্তারার সঙ্গে একীভূত হয় এয়ারলাইনটি। টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান এন. চন্দ্রশেখরন জানিয়েছেন, নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। আহতদের চিকিৎসার সব ব্যয় বহন করা হবে এবং হোস্টেল পুনর্নির্মাণেও সহায়তা করা হবে।
এর আগে ২০২০ সালে কেরালার কোঝিকোড় বিমানবন্দরে একটি এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস ফ্লাইট দুর্ঘটনায় পড়ে ২১ জন নিহত হন। ওই ঘটনাটির চার বছর পর ফের বড় ধাক্কা খেলো ভারতের বিমান পরিবহন খাত।