X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১
মৃত্যুদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি

ভার্জিনিয়া উলফের আত্মহনন এবং প্রিয়তম স্বামীকে লেখা সেই চিঠি

বিদেশ ডেস্ক
২৮ মার্চ ২০১৬, ১৯:৫০আপডেট : ২৮ মার্চ ২০১৬, ১৯:৫০
image







ভার্জিনিয়া উলফ এবং তার সুইসাইড নোট অর্ধশতকেরও বেশি সময় আগে আত্মহত্যা করেন ইংরেজি ভাষার প্রখ্যাত কবি ভার্জিনিয়া উলফ। তার মৃত্যুও কাব্যিক ব্যঞ্জনার। নিজের ওভারকোটের পকেটে নুড়ি পাথর বোঝাই করে হেঁটে নেমে গিয়েছিলেন খরস্রোতা পাথুরে নদীতে। আর কোনদিন ফিরে আসেননি।
এ্যাডেলাইন ভার্জিনিয়া উলফের জন্ম ১৮৪২ সালে। ঊনিশ শতকে মডার্নিজম চর্চাকারী ব্রিটিশ লেখকদের মধ্যে তিনি অন্যতম। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়কালে তিনি লন্ডর লিটারেসি সোসাইটি এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনা হল, মিসেস ডাল্লাওয়ে (১৯২৫), টু দ্যা লাইটহাউজ (১৯২৭), ওরলান্ডো (১৯২৮)। ভার্জিনিয়ার বিখ্যাত উক্তি ‘নারী যখন ফিকশন লেখে তখন তার একটি কক্ষ আর কিছু অর্থ খুব প্রয়োজন।’ ৫৯ বছরের জীবনে উলফ বেশ কয়েকবার মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন উলফ। তার রোগের নাম ছিল ডিপোলার ডিজঅর্ডার। তিনি ১৯৪১ সালের ২৮ মার্চ আত্মহত্যা করেন।
শেষ বিদায়ের আগে প্রিয়তম স্বামীর উদ্দেশে এক চিঠি লিখে যান ভার্জিনিয়া। চিঠিটি সম্ভবত সবচেয়ে বেশি পড়া সুইসাইড নোটগুলোর একটি। অত্যন্ত মর্মস্পর্শী ওই চিঠিটি এখনও পড়েন বিশ্বের সাহিত্যপ্রেমীরা, উলফের পাঠকরা। চিঠিতে ভার্জিনিয়া লেখেন:


প্রিয়তম,
আমি বুঝতে পারছি, আমি আবারও পাগল হয়ে যাচ্ছি। আমি বুঝতে পারছি এবার হয়তো আমাদের এই কঠিন সময় অতিক্রান্ত হবে না। আমি নানা রকম স্বর শুনতে পাচ্ছি, কিছুতেই মনঃসংযোগ করতে পারছি না। তাই যা সবচেয়ে ভালো মনে হচ্ছে তা-ই করতে যাচ্ছি আমি।
তুমি আমাকে যতটুকু সম্ভব সুখী করেছ। তুমি সে সবই করেছ যা যা কোনও মানুষের তরফে করা সম্ভব। আমার মনে হয় না দুইজন মানুষ মিলে তোমার-আমার চেয়ে বেশি সুখী হতে পারতো, যতদিন না আমার এই ভয়ঙ্কর রোগটা দেখা দেয়। আমি আর এর সাথে যুদ্ধ করতে পারছি না। আমি জানি আমি তোমার জীবনটা নষ্ট করে ফেলছি, আমি না থাকলেই তুমি কাজ করতে পারবে। এবং তুমি করবেও, আমি জানি তা।
এই দেখ, এই চিঠিটাও আমি ঠিকভাবে লিখতে পারছি না। আমি পড়তে পারি না। আমি সর্বার্থে বলতে চাই, আমার জীবনের সমস্ত সুখের জন্য আমি তোমার কাছে ঋণী। তুমি আমার সঙ্গে চরম সহিষ্ণুতা দেখিয়েছ, অসাধারণ সহৃদয় আচরণ করেছ। আমি বলতে চাই- এ সত্য সকলেই জানে। কেউ যদি আমাকে বাঁচাতে পারতো, সেটা হতে তুমিই। তুমি এত ভালো!- আমি তোমার জীবনটা এভাবে নষ্ট করতে পারি না।
আমার মনে হয় না আমাদের দুজনের চেয়ে বেশি সুখী আর কেউ হতে পারবে।

ভার্জিনিয়া উলফের আত্মহনন এবং প্রিয়তম স্বামীকে লেখা সেই চিঠি
কিন্তু এই চিঠিটি প্রকাশিত হওয়ার পর ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম একে নিজের মত করে ব্যখ্যা করতে শুরু করে। শুধু তাই নয়, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সমালোচনাও প্রকাশিত হতে থাকে বিভিন্ন মাধ্যমে। সে বছর ২৭ এপ্রিল দ্য সানডে টাইমসে চিঠি লিখে উলফের মৃত্যুসংবাদের প্রতিবেদনের নিন্দা জানান লিঙ্কন নামের এক বিশপের স্ত্রী। মিসেস ক্যাথলিন হিকস নামের ওই নারী লেখেন, ‘প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, মিসেস উলফ ছিলেন পাশবিকতা সম্পর্কে স্পর্শকাতর ও সংবেদনশীল। এমন কথা লেখার মানে কী? যারা সাহসের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে অন্যদের জন্য বেঁচে থাকছে তারা কি সংবেদনশীল নয়? আমাদের ভালোবাসা ও বিশ্বাসের ভিত্তি তাহলে কোথায়? যে বলছে আমি আর পারছি না, তার প্রতি এত সহানুভূতির মানে কী?’
তবে স্ত্রীর চিঠি পড়ে অত্যন্ত প্রভাবিত হন ভার্জিনিয়ার স্বামী লিওনার্দো উলফ। তিনি পাল্টা একটি চিঠিতে লিখে জানান, ভার্জিনিয়া মোটেও দাবি করেননি তিনি আর পারছেন না। বরং তিনি এটাই বলতে চেয়েছেন, এবার হয়তো দুজনে মিলেও এই খারাপ সময় পাড় করা যাবে না।

ভার্জিনিয়া উলফের আত্মহনন এবং প্রিয়তম স্বামীকে লেখা সেই চিঠি
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য লিওনার্দোর এই চিঠির শিরোনামও প্রকাশের সময় পাল্টে দেওয়া হয়। এমনকি ভার্জিনিয়ার অল্প বয়সে বিষণ্ণতা ও মানসিক ভারসাম্যহীনতার খারাপ সময়কে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের খারাপ সময়কে বোঝাতে ব্যবহার করা হয়। ডিপ্রেশনের ভয়াবহতাকে চাপিয়ে ভার্জিনিয়ার আত্মহননকে দেখানো হয় ভীরুতা ও ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি হিসেবে। পরবর্তীতে ভার্জিনিয়ার বিখ্যাত বন্ধুরা যেমন টি এস এলিয়ট, এডিথ সিটওয়েল, এলিজাবেথ বোওয়েন প্রমুখ এই সকল ভুল ব্যখ্যা সম্বলিত সংবাদ পরিবেশনের বিরুদ্ধে কলম ধরেন। সূত্র: ব্রেইনপিকিং


/ইউআর/বিএ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
এবার যুক্তরাষ্ট্রের সুপার গ্র্যান্ডমাস্টারের সঙ্গে ড্র করে ফাহাদের চমক
এবার যুক্তরাষ্ট্রের সুপার গ্র্যান্ডমাস্টারের সঙ্গে ড্র করে ফাহাদের চমক
আমান উল্লাহ আমানকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিলেন আপিল বিভাগ
আমান উল্লাহ আমানকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিলেন আপিল বিভাগ
বুধবার থেকে ঢাবিতে ক্লাস ও পরীক্ষা সশরীরে
বুধবার থেকে ঢাবিতে ক্লাস ও পরীক্ষা সশরীরে
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতলে ১ লাখ ডলার পাবেন বাবররা!
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতলে ১ লাখ ডলার পাবেন বাবররা!
সর্বাধিক পঠিত
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?