ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ১২ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাত শেষ হওয়ার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এটিকে ‘সবার জন্য বিজয়’ বলে ঘোষণা করেছেন। তবে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার প্রাথমিক মূল্যায়নে দেখা গেছে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির অগ্রগতি হয়তো কেবল কয়েক মাসের জন্য পিছিয়ে গেছে। অবশ্য এই মূল্যায়নকে ‘অনিশ্চিত’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
বুধবার নেদারল্যান্ডসের হেগে অনুষ্ঠিত ন্যাটো সম্মেলনে বক্তব্য দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সেখানে তিনি বলেন, আমরা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে যে হামলা করেছি, তা ছিল অত্যন্ত ধ্বংসাত্মক। এটা পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমি নিশ্চিত, তারা এখন কিছু গড়তে চায় না। তারা পুনরুদ্ধার করতে চায়, শান্তি চায়। পারমাণবিক কর্মসূচি পুনরায় শুরু করার মতো কিছু তারা এখন ভাবছে না। যদি ভাবে, তাহলে আমরা তা হতে দেবো না, সামরিকভাবেও না।
ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে নতুন এক সম্পর্ক তৈরি হতে পারে, যা দ্বিপাক্ষিক পুনর্মিলনের পথ খুলে দিতে পারে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা (ডিআইএ) বলছে, ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা ‘কয়েক মাসের জন্য’ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবে স্থায়ীভাবে নয়। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বলেন, ইরান পারমাণবিক প্রযুক্তির জ্ঞান ও শিল্প-সক্ষমতা ধরে রেখেছে। সে কারণে তদন্ত ও আন্তর্জাতিক পরিদর্শন আবার শুরু করতেই হবে।
ইরানের পার্লামেন্ট বুধবার আণবিক শক্তি সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে, যদিও তা কার্যকর হতে হলে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন লাগবে।
ইরান ও ইসরায়েল দুই দেশেই যুদ্ধবিরতির পর সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি ও সংশয় মিলেমিশে আছে। তেহরানের বাসিন্দা ৬৭ বছর বয়সী ফারাহ জানান, ইসরায়েলি বোমা হামলা থেকে বাঁচতে তিনি রাজধানীর বাইরে লাভাসানে আশ্রয় নিয়েছিলেন। যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পর ফিরে এসেছেন। মানুষ খুশি, কিন্তু কেউ জানে না এরপর কী হবে।
তেল আবিবে ৩৮ বছর বয়সী রনি হোতার-ইশাই মেয়ার বলেন, আমাদের সন্তানরা আবার স্কুলে যেতে পারছে, স্বাভাবিক জীবন ফিরেছে, কিন্তু আমরা সবাই মানসিকভাবে ক্লান্ত। দুই সপ্তাহে যা হয়েছে, তা ছিল ধ্বংসাত্মক।
যুদ্ধের সময় ইসরায়েলের আক্রমণে ইরানের শীর্ষ সামরিক নেতাদের হত্যা করা হয়, মারা যান কয়েকজন প্রধান পরমাণু বিজ্ঞানী। ইরান পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে প্রথমবারের মতো ব্যাপকভাবে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করতে সক্ষম হয়।
ইরান বলছে, ইসরায়েলি হামলায় ৬১০ জন নিহত এবং প্রায় ৫ হাজার মানুষ আহত হয়েছে। তবে স্বতন্ত্রভাবে এই তথ্য যাচাই করা যায়নি। কারণ যুদ্ধ চলাকালে দেশটিতে সংবাদমাধ্যমে কঠোর নিয়ন্ত্রণ ছিল। ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন ২৮ জন।
যুদ্ধ শেষে ইরান সরকার শক্ত অবস্থান নিয়েছে। বুধবার দেশটির বিচার বিভাগ জানায়, ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে তিন ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে তা কার্যকর করা হয়েছে। এছাড়া যুদ্ধ চলাকালে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার অভিযোগে ৭০০ জনকে গ্রেফতার করেছে ইরান।
যুদ্ধ চলাকালে ট্রাম্প ও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, এই সংঘাতের পর ইরানের ধর্মীয় শাসনব্যবস্থা পতনের মুখে পড়তে পারে। তবে যুদ্ধবিরতির পর ট্রাম্প বলেন, আমি ইরানে শাসন পরিবর্তন চাই না। আমি স্থিতিশীলতা চাই। এখন বিশৃঙ্খলা ইরান বা ওই অঞ্চলের জন্য ভালো নয়।
ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ মঙ্গলবার রাতে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে আলোচনা আশাব্যঞ্জক এবং ওয়াশিংটনের লক্ষ্য একটি দীর্ঘস্থায়ী শান্তিচুক্তি, যা ইরানকে পুনর্গঠনের সুযোগ দেবে।