X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৮ বৈশাখ ১৪৩১

পুতিনের দিল্লি সফর কী বার্তা দিচ্ছে বিশ্বকে? 

লুৎফর কবির
০৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১৭:৩০আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১৮:৫৯

পুরো দুনিয়ার নজর এখন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ভারত সফরের দিকে। এই সফরে দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা খাতে বড় ধরনের চুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে। দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রকে পাশ কাটিয়ে হঠাৎ মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের চেষ্টায় মত্ত দিল্লি। অন্যদিকে আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের আগের সম্পর্কে ফিরিয়ে আনতে রাশিয়া ভূমিকা রাখতে পারে। সব মিলিয়ে পুতিনের দিল্লি সফর বিশ্বকে নতুন করে কী বার্তা দিতে যাচ্ছে এটিই দেখার বিষয়। 

ইউক্রেন ইস্যুতে দীর্ঘদিন ধরেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কে টানাপড়েন চলছে রাশিয়ার। সম্প্রতি এই টানাপড়েন তীব্র রূপ নিয়েছে। তারপরও দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে যে সম্পর্ক রয়েছে, সেটিকে বৈশ্বিক কূটনীতিতে বড় ধরনের সফলতা বলা যায়। এমন পরিস্থিতিতে সোমবার মোদির দেশে পা রাখছেন ভ্লাদিমির পুতিন।

ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক এবং চীন ফ্যাক্টর

একদিকে দিল্লি-মস্কোর সম্পর্ক জোরদার হচ্ছে। অন্যদিকে দিল্লি-ওয়াশিংটনের সম্পর্ক ক্রমাগত খারাপের দিকে যাচ্ছে। গত এক দশকে এই বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দিল্লিতে আমন্ত্রণ জানিয়ে বড় ধরনের অভ্যর্থনার আয়োজন করে বিশ্বকে একটা বার্তা দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এটি ভারতের প্রতি ওয়াশিংটনের সমর্থনের বড় একটি প্রাণবন্ত প্রদর্শনী ছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের এমন সম্পর্ক নিয়ে কিছুটা বিরক্ত হলেও বিষয়টি এড়িয়ে গেছে রাশিয়া।

যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে জাপান, অস্ট্রেলিয়ার পাশাপাশি ভারতও যখন কোয়াড জোটে যোগ দেয় তখন এটা নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। কোয়াড জোটের দাবি, এটি সম্পূর্ণ বেসামরিক জোট। এমনকি কোনও দেশকে টার্গেট করে এটি গঠন করা হয়নি। তবে এমন বক্তব্য মানতে রাজি নন ল্যাভরভ। 

তিনি বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো কৌশলে ভারতকে চীনবিরোধী খেলায় জড়ানোর চেষ্টা করছে। এ নিয়ে কথা বলেছেন সাবেক ভারতীয় কূটনীতিক অনিল ত্রিগুনায়াত। তিনি বলেন, কোয়াড জোট রাশিয়ার জন্য একটি রেড লাইন। আর পুতিনের দিল্লি সফরে এই বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই মোদির সঙ্গে আলোচনা হবে। 

কোয়াড নিয়ে যে মস্কোর ভীষণ উদ্বেগ রয়েছে তা বোঝার বাকি নেই। কারণ, বেইজিংয়ের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক থেকেই আঁচ করা যায় যে রাশিয়া কোয়াড জোট নিয়ে স্বস্তিতে নেই।

কোয়াড জোট নেতারা

ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত ত্রিগুনায়াত বলেন, রাশিয়া এশিয়ায় তার অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ সুরক্ষায় চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করতে বাধ্য হয়েছে এই কারণে যে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা দেশগুলো এই অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করতে চায়।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি বেইজিং ও মস্কোকে পরস্পরের আরও কাছে টানছে। লাদাখ সীমান্তে চীন ও ভারতীয় সেনাদের রক্তক্ষয়ী সংঘাত বিষয়টিকে আরও জটিল করে তোলে। চীনা সেনাদের হামলায় ২০ ভারতীয় সেনা নিহত হয়। পরে বেইজিং স্বীকার করে তাদেরও কিছু সেনা হতাহত হয়েছে।

আলোচিত ওই ঘটনার পর দিল্লি-বেইজিং সম্পর্কের তিক্ততা চরম পর্যায়ে পৌঁছায়। এ নিয়ে এখনও দুই দেশের মধ্যে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।

গত বছরে লাদাখ সীমান্তে চীন-ভারত সেনাদের সংঘাত

উইলসন সেন্টারের নীতিনির্ধারকমণ্ডলীর উপ-পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন মিশেল কুগেলম্যান। তার মতে, নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা ‘ভারত-রাশিয়া সম্পর্কের জন্য সম্ভাব্য হুমকি’। আপাত দৃষ্টিতে দিল্লির সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক গড়ে তোলাটাই এখন মস্কোর প্রধান উদ্দেশ্য। কিন্তু ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অন্য কিছু ইঙ্গিত বহন করে।

দুই দেশের মধ্যে একাধিক ইস্যুতে আলোচনার সুযোগ রয়েছে। আফগানিস্তানের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে আলোচনা হতে পারে। কারণ, কাবুলে তালেবান সরকার ক্ষমতায় বসার পর দিল্লির সঙ্গে দেশটির টানাপড়েন শুরু হয়েছে। 

অন্যদিকে ভারতের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান এখন আফগানিস্তানে কৌশলগতভাবে দুর্দান্ত অবস্থানে রয়েছে। দেশটা এই অঞ্চলে রাশিয়া, ইরান ও চীনের সঙ্গে একটি অনানুষ্ঠানিক জোট গঠন করেছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এক্ষেত্রে দিল্লি কিছুটা একা হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। কাবুলে হারানো মাঠ পুনরুদ্ধারে এক্ষেত্রে দিল্লিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে পারে মস্কো। বিতর্কিত সীমান্তে শান্তি বজায় রাখতে দিল্লি ও বেইজিংয়ের মধ্যে রাশিয়া তার প্রভাব বিস্তার করতে পারে।

বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা

ভারতে পুতিনের সফরের আরও একটি উল্লেখযোগ্য কারণ রয়েছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার হুমকি উপেক্ষা করে রুশ নির্মিত অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা এস-৪০০ ক্রয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদি সরকার। এটি একসঙ্গে ৮০টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার সক্ষমতা রাখে বলে জানা গেছে। চীন ও পাকিস্তানের মতো পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী দেশ থেকে নিরাপত্তার সুরক্ষায় বেশ কাজে দেবে এটি।

এস-৪০০

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারক দেশ ভারত। প্রতিরক্ষা বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপ্রির তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতিরক্ষা খাতে যত বাণিজ্য হয়, তার ১০ শতাংশ করে ভারত। 

দিল্লি যদিও এখন তাদের অস্ত্রসম্ভারে বৈচিত্র্য আনার জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে অস্ত্র কিনছে এবং নিজ দেশে উৎপাদন শুরু করেছে। তারপরও মস্কো ভারতের সবচেয়ে বড় সমরাস্ত্র সরবরাহকারী দেশ হতে যাচ্ছে, যদিও দেশটিতে তাদের রফতানি ৭০ শতাংশ থেকে নেমে এখন ৪৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বিবিসি অবলম্বনে

/এমপি/এমওএফ/
সম্পর্কিত
যুক্তরাষ্ট্রে ৩০০ ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারী আটক
হংকংয়ে টানা ১০ হাজার বজ্রাঘাত
ভারতের জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আ.লীগকে আমন্ত্রণ বিজেপির
সর্বশেষ খবর
ঘরের মাঠে পিএসজিকে হারিয়ে এগিয়ে থাকলো ডর্টমুন্ড
চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালঘরের মাঠে পিএসজিকে হারিয়ে এগিয়ে থাকলো ডর্টমুন্ড
ইজিবাইক ছিনতাইয়ের সময় স্থানীয়দের পিটুনিতে একজনের মৃত্যু
ইজিবাইক ছিনতাইয়ের সময় স্থানীয়দের পিটুনিতে একজনের মৃত্যু
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে শ্রমিকরাও অংশীদার হবে: এমপি কামাল
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে শ্রমিকরাও অংশীদার হবে: এমপি কামাল
মোস্তাফিজের শেষ ম্যাচে চেন্নাইয়ের হার
মোস্তাফিজের শেষ ম্যাচে চেন্নাইয়ের হার
সর্বাধিক পঠিত
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
মিল্টন সমাদ্দার আটক
মিল্টন সমাদ্দার আটক
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
সিয়াম-পরীর গানের ভিউ ১০০ মিলিয়ন!
সিয়াম-পরীর গানের ভিউ ১০০ মিলিয়ন!