ইউরোপে পৌঁছার পর অন্তত ১০ হাজার অভিভাবহকীন শরণার্থী শিশু নিখোঁজ রয়েছে। তাদের কোনও সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অপরাধ গোয়েন্দা এজেন্সি ইউরোপোল এ তথ্য জানিয়েছে।
আশঙ্কা করা হচ্ছে, নিখোঁজ হওয়া এসব শিশুর অনেকেই সংঘবদ্ধ পাচারকারী সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে। তারা এই শিশুদের যৌনকাজে ও ক্রীতদাস হিসেবে ব্যবহার করছে।
দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, হাজার হাজার বিপন্ন শিশু ইউরোপের বিভিন্ন দেশে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর তাদের আর হদিস মিলছে না। ইউরোপোল চিফ অব স্টাফ ব্রায়ান ডোনাল্ড অবজারভার পত্রিকাকে বলেন, ইউরোপোলের প্রদত্ত তথ্য অভিবাসী সঙ্কটের সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থাকেই তুলে ধরেছে। কেননা, হাজার হাজার বিপন্ন শিশু সরকারিভাবে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর নিখোঁজ রয়েছে।
ইউরোপোল প্রধান বলেন, কেবল ইতালিতেই ৫ হাজার শিশু নিখোঁজ রয়েছে। আর এক হাজার লাপাত্তা সুইডেনে। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, অত্যাধুনিক একটি প্যান ইউরোপীয়ান অপরাধী চক্র শরণার্থী শিশুদের টার্গেট করেছে। আর এর শিকার হওয়া শিশুদের সংখ্যা এখন ১০ হাজারের অধিক হবে। আমরা জানি না,নিখোঁজ শিশুরা কোথায় আছে,কি করছে এবং কাদের সঙ্গে রয়েছে।
অভিবাসী সঙ্কটে অভিভাবকহীন শিশুরা এখন অন্যতম প্রধান আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। গত সপ্তাহে ব্রিটেন সিরিয়া এবং অন্যান্য বিরোধপূর্ণ অঞ্চল থেকে আরও অধিক হারে শরণার্থী শিশুদের আশ্রয় দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
সেভ দ্য চিলড্রেনের মতে, গত বছর ইউরোপে প্রায় ২৬ হাজার শিশু শরণার্থীর আগমন ঘটেছে। ধারণা করা হচ্ছে এদের ২৭ শতাংশই খুব কম বয়সী।
ইউরোপোল চিফ অব স্টাফ ব্রায়ান ডোনাল্ড বলেন, তালিকাভুক্ত হোক আর নাই হোক; দুই লাখ ৭০ হাজার শিশুর কথা আমাদের বলতেই হচ্ছে। এদের সবাই না হলেও এর একটা বড় অংশ অভিভাবকহীন। তিনি ইঙ্গিত দেন এই সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি হবে। ইউরোপে প্রবেশের পর থেকেই তারা অদৃশ্য হয়ে যায়।
গত অক্টোবরে দক্ষিণ সুইডেনের ট্রেলেবর্গ শহরের কর্মকর্তারা প্রায় এক হাজার অভিভাবকহীন শিশুর নিখোঁজ হওয়ার কথা জানান। তারা কয়েক মাস আগে ওই শহরটিতে আশ্রয় নেয়। গত মঙ্গলবারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব শিশুর অনেকেই এরই মধ্যে হারিয়ে গেছে। তাদের সম্পর্কে কোনও তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।
খবরে বলা হয়েছে, গত ১৮ মাসে অভিভাবকহীন এসব শিশু অপরাধ চক্রের কবলে পড়েছে। আর এই সময়টাতে সিরিয়া ও ইরাক থেকে লাখ লাখ শরণার্থী ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমায়। আর পাচারকারী চক্রের সদস্যরা এর সুযোগ নেয়।
অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন ইন ই্উরোপ (ওএসসিই)-এর কর্মকর্তা ম্যারিয়ানা বার্কেট বলেন, বিরোধপূর্ণ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা অভিভাবকহীন শিশুরা একেবারেই বিপন্ন অবস্থায় আশ্রয় নিয়েছে। তাদের অবস্থা বিপন্ন দেখেই অনেক বাবা-মা তাদেরকে ইউরোপে ঠেলে দিয়েছেন। কেউ কেউ আবার পরিবারের কোনও সদস্যদের সঙ্গেও পালিয়ে আসে। জার্মানি ও হাঙ্গেরিতেই বেশিরভাগ শরণার্থী আশ্রয় নেন।
ইউরোপোল প্রধান ডোনাল্ড বলেন, তার সংস্থার সদস্যরা ইতোমধ্যে নিখোঁজ শিশুদের যৌনকাজে ব্যবহারের তথ্য প্রমাণ হাতে পেয়েছে। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।
/এমপি/এমএসএম/