ইসরায়েলের গাজা অভিযানে হতাহতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রধান কূটনীতিক কায়া কাল্লাস বলেছেন, হামাস দমন অভিযানের চেয়েও বেশি মাত্রায় গাজায় হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। এক বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, এ ধরনের আক্রমণ অপ্রয়োজনীয় ও বেসামরিক জনগণের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমর্থনে গঠিত নতুন মানবিক সহায়তা বণ্টনব্যবস্থার বিরুদ্ধেও অবস্থান নিয়েছে ইইউ। কাল্লাস স্পষ্ট বলেন, মানবিক সহায়তা বেসরকারিকরণ সমর্থনযোগ্য নয়। সাহায্যকে কখনোই রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মার্চে যুদ্ধ পুনরায় শুরুর পর থেকে ইসরায়েলের বিমান হামলা ও সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৯২৪ জন নিহত হয়েছেন। পুরো যুদ্ধের সময়ে নিহতের সংখ্যা ৫৪ হাজার ছাড়িয়েছে।
সম্প্রতি দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে এক ফিলিস্তিনি চিকিৎসকের ১০ সন্তানের মধ্যে ৯ জন নিহত হয় এবং উত্তর গাজায় একটি স্কুলে আশ্রয় নেওয়া অন্তত ৩৫ জনের মৃত্যু ঘটে।
ইউরোপীয় কূটনীতিকদের বক্তব্যে ইসরায়েলবিরোধী অবস্থান স্পষ্ট। জার্মানির নতুন চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস বলেন, বর্তমানে গাজার পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের কার্যক্রম আর বোঝা যাচ্ছে না। বেসামরিক মানুষের ওপর যেভাবে প্রভাব পড়ছে, তা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই হিসেবে আর গ্রহণযোগ্য নয়।
ইইউ দীর্ঘদিন ধরে গাজায় মানবিক সহায়তার অন্যতম প্রধান অর্থদাতা হলেও অধিকাংশ সাহায্য গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না বলে অভিযোগ করেন কাল্লাস। তিনি বলেন, সাহায্যের অধিকাংশ ইউরোপ থেকে এলেও তা ইসরায়েলি অবরোধের কারণে আটকে থাকছে। মানুষের কষ্ট এখন সহনীয় মাত্রার বাইরে।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লিয়েন গাজায় সাম্প্রতিক হামলাকে ‘ঘৃণ্য’ ও ‘অতিরঞ্জিত’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। ব্রিটেন, ফ্রান্স ও কানাডাও প্রথমবারের মতো একসঙ্গে ইসরায়েলের অভিযান বন্ধের দাবি জানিয়েছে। এমনকি যুক্তরাজ্য ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিজস্ব বাণিজ্য চুক্তিও পর্যালোচনা করতে যাচ্ছে বলে জানান কাল্লাস। আগামী ২৩ জুন ব্রাসেলসে ইউরোপীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে তিনি এ বিষয়ে বিকল্প প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন।
জাতিসংঘ ইতোমধ্যে সতর্ক করে বলেছে, গাজার ২১ লাখ মানুষ প্রায় তিন মাসব্যাপী অবরোধের কারণে অভাবনীয় দুর্ভিক্ষের মুখে পড়েছে। গত সপ্তাহে কিছু সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল নতুন এক বিতর্কিত সাহায্য সংগঠন গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন বা জিএইচএফ-এর মাধ্যমে ত্রাণ বণ্টনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। এই পদ্ধতিতে জাতিসংঘকে বাদ দিয়ে মার্কিন নিরাপত্তা ঠিকাদারদের ব্যবহারের ফলে সংস্থাটি একে ‘অনৈতিক ও অকার্যকর’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
অন্যদিকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজার পুরো জনগণকে দক্ষিণাঞ্চলের একটি ‘স্টেরাইল জোন’-এ স্থানান্তরের পরিকল্পনা পুনরায় ঘোষণা করেছেন। তিনি এটিকে ‘স্বেচ্ছামূলক স্থানান্তর’ বললেও অনেকেই একে জোরপূর্বক উৎখাত হিসেবে দেখছেন।
গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলায় ইসরায়েলে প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষ নিহত ও ২৫১ জন অপহৃত হয়। এরপরই ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে, যার পরিণতিতে এখন অঞ্চলজুড়ে মৃত্যুর মিছিল চলছে।