X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভবানীপুর কি মমতার ভারত জয়ের রাস্তাও সুগম করবে?

রঞ্জন বসু, দিল্লি প্রতিনিধি
০৪ অক্টোবর ২০২১, ০৯:০০আপডেট : ০৪ অক্টোবর ২০২১, ১০:৫১

ভারতের কোনও একটি অঙ্গরাজ্যে একটি বিধানসভা আসনের উপনির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক মাতামাতি খুব একটা দেখা যায় না বললেই চলে। এক-আধটি আসনের ফলাফলে রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদল হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে না, ফলে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের ভোটচর্চায় এই উপনির্বাচনগুলো সাধারণত ফুটনোট বা পাদটীকা হিসেবেই রয়ে যায়।

সেই দিক থেকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর কলকাতার ভবানীপুর আসনে যে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হল, তা ছিল সব দিক থেকেই বিরাট ব্যতিক্রম। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর পদ ধরে রাখতে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই আসনে জিততেই হতো – কিন্তু সেটাই ভবানীপুরকে ঘিরে আকর্ষণের একমাত্র কারণ ছিল না। ভবানীপুর কি মমতার ভারত জয়ের রাস্তাও সুগম করবে?

২০২৪-এ ভারতের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপিকে বিরোধীরা যে ঐক্যবদ্ধ চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে চাইছে, সেই লক্ষ্য পূরণের রাস্তায় এই ভবানীপুরের উপনির্বাচন ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। আর সে পরীক্ষায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ সসম্মানে ও রেকর্ড-ভাঙা গৌরবে উত্তীর্ণ।

কিন্তু কেন এই একটি আসনের উপনির্বাচনকে ভারতের জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটেও এতটা গুরুত্ব দিতে হচ্ছে?

নন্দীগ্রামের ক্ষত শুকোল

প্রথমত, মাসকয়েক আগে পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ নির্বাচনে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে নন্দীগ্রাম আসন থেকে লড়েছিলেন, সেখানে তিনি অল্প ভোটে হেরে যান তারই এককালের লেফটেন্যান্ট ও বর্তমানে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর কাছে। যে মমতা নিজেকে জাতীয় স্তরে নরেন্দ্র মোদির প্রধান চ্যালেঞ্জার হিসেবে তুলে ধরতে চাইছেন, তিনি নিজের রাজ্যেই কোনও আসনে হেরে যাচ্ছেন, সেটা যথারীতি সর্বভারতীয় পর্যায়ে খুব ভালো সংকেত দেয় না।

ফলে নন্দীগ্রাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য একটা অস্বস্তির কাঁটা বয়ে এনেছিল তাতে কোনও সন্দেহ নেই। গোটা রাজ্যে তৃণমূলের বিপুল বিজয়ও সেই ক্ষত পুরোপুরি নিরাময় করতে পারেনি – কিন্তু অবশেষে ভবানীপুরের উপনির্বাচনে প্রায় ৬০ হাজার ভোটের রেকর্ড ব্যবধানে জয় সেই ক্ষতস্থানে অনেকটাই প্রলেপ দিল। মমতার নিজের ভাষায়, ‘নন্দীগ্রামের চক্রান্তের জবাব দিল ভবানীপুর!’

মমতা বাঙালির, অবাঙালিরও

দ্বিতীয়ত, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল বনাম বিজেপির লড়াই যে একটা সাংস্কৃতিক লড়াই হয়ে উঠেছিল তাতেও কোনও সন্দেহ নেই। গুজরাট বা উত্তর ভারত থেকে আসা বিজেপি নেতাদের তৃণমূল বারেবারে ‘বহিরাগত’ বলে আক্রমণ করেছে এবং বিজেপির সংস্কৃতির সঙ্গে যে বাঙালিয়ানার বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই প্রচারে সেটাও বারেবারে তুলে ধরেছে। তৃণমূলকে বিপুল ভোটে জিতিয়ে পশ্চিমবঙ্গের ভোটাররাও প্রমাণ করে দিয়েছিলেন, ‘বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়’।

কিন্তু মধ্য কলকাতার ভবানীপুর আসনের চরিত্র বেশ আলাদা – মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই তথাকথিত খাসতালুকে অবাঙালি ভোটারদের সংখ্যা কিন্তু যথেষ্ঠই বেশি। গুজরাটি, মারোয়াড়ি-সহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের একটা বিরাট সংখ্যক জনগোষ্ঠী এই কেন্দ্রে বসবাস করেন। তাছাড়া অতীতে লোকসভা নির্বাচনে একাধিকবার ভবানীপুর কেন্দ্রে তৃণমূল পিছিয়ে ছিল, এমন ঘটনাও ঘটেছে। সেই জায়গায় এসে এবার কিন্তু দেখা গেল ভবানীপুরের অবাঙালি-গরিষ্ঠ ওয়ার্ডেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিপুল ভোটে জিতেছেন – যা প্রমাণ করে দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক আবেদন শুধু বাঙালিদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ভবানীপুর কি মমতার ভারত জয়ের রাস্তাও সুগম করবে?

কংগ্রেসের কফিনে পেরেক

তৃতীয়ত, ভারতের প্রধান বিরোধী দল এখনও অবশ্যই কংগ্রেস – কিন্তু ভবানীপুর উপনির্বাচনে তারা এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী পর্যন্ত দেয়নি। গত নির্বাচনে যারা তাদের জোটসঙ্গী ছিল, সেই বামপন্থীদের প্রার্থীর সমর্থনে কংগ্রেস রাস্তায় পর্যন্ত নামেনি। তৃণমূল যে শুধু পূর্ব বা উত্তর-পূর্ব ভারতেই কংগ্রেসকে গিলে খেতে উদ্যত তা-ই নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেশের নানা প্রান্তেই কংগ্রেসকে কার্যত গুরুত্বহীন করে তুলছেন – ভবানীপুরের ফলাফল সেই তালিকায় সবশেষ সংযোজন।

মাত্র গত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল আসামের কংগ্রেসের সিনিয়র নেত্রী সুস্মিতা দেবকে দলে টেনে এনেছেন, গোয়াতে কংগ্রেসের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লুইজিনহো ফেলেইরো-ও যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। মেঘালয়েও কংগ্রেসের বিদ্রোহী নেতা ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা অনুগামীদের নিয়ে তৃণমূলের দিকে পা বাড়িয়েই আছেন। ভবানীপুরের বিশাল বিজয় দেশের নানা প্রান্তে এই তৃণমূলমুখী স্রোতকেই আরও বেগবান করবে নিঃসন্দেহে। ভবানীপুর কি মমতার ভারত জয়ের রাস্তাও সুগম করবে?

বিরোধী ঐক্যের মুখচ্ছবি

চতুর্থত, তৃণমূলের এই জয়ের ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২৪-এর নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের মোট আসন সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়ে যাওয়াও অসম্ভব নয়। গত দুটো সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেসের আসনও ৫০ পেরোয়নি, কাজেই ঐক্যবদ্ধ বিরোধী সরকার গঠনের সম্ভাবনা তৈরি হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্যই নেতৃত্বের প্রধান দাবিদার হবেন। সর্বভারতীয় স্তরে কংগ্রেস ছাড়া আর কোনও বিরোধী দলের আসন সংখ্যা ৫০-এর আশেপাশে পৌঁছানোর কোনও সম্ভাবনা নেই, সেটাও বাস্তবতা। ভবানীপুর কি মমতার ভারত জয়ের রাস্তাও সুগম করবে?

ফলে আড়াই বছর পর দিল্লিতে যদি সত্যিই বিজেপি-বিরোধী সরকার গঠনের পথ প্রশস্ত হয় – তাহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অনেকেই হয়তো কংগ্রেস নেতাদের চেয়ে প্রধানমন্ত্রিত্বের দৌড়ে এগিয়ে রাখবেন। আজ ভবানীপুরে জয়ের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদবের অভিনন্দনেও সে বার্তা ছিল স্পষ্ট।

/এমপি/
সম্পর্কিত
ভারতে দ্বিতীয় দফায় ভোটপ্রচণ্ড গরমেও ভোটকেন্দ্রে ভোটার, ভোটদানের হার ৬১ শতাংশ
ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় কোনও পরিবর্তন হবে না: ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট
কেমন চলছে ভারতের লোকসভার দ্বিতীয় দফার ভোট?
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!