কিছুদিন হলো ভারতে পেট্রোল-ডিজেলের দাম সেঞ্চুরি পার করেছে। মানে প্রতিটি রাজ্যে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম লিটারে ১০০ রুপি পার করেছে। সর্ষের তেলের দাম ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে প্রতি লিটারে আড়াইশ’র পথে। পেঁয়াজও অর্ধশত রান পার করেছে। কেজিতে দাম ৫০ রুপি বা তারও বেশি। এর মধ্যে দেওয়ালির ঠিক আগের দিন মোদি সরকারের তরফে ঘোষণা করা হয়, পেট্রোলের দাম লিটারে পাঁচ রুপি ও ডিজেলের দাম লিটারে দশ রুপি কমবে।
দীর্ঘদিন ধরে পেট্রোল-ডিজেলের দাম সমানে বাড়িয়ে গেছে মোদি সরকার। কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা সমানে দাম কমাবার দাবি করেছে। রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছে। সংসদে প্রশ্ন তুলেছে। কোনও ফল হয়নি।
মোদি সরকারের জবাব ছিল, তারা গরিবদের জন্য প্রচুর জনকল্যাণমূলক প্রকল্প হাতে নিয়েছে। পেট্রোল-ডিজেলের শুল্ক থেকে যে অর্থ পাওয়া যায়, তা দিয়ে জনকল্যাণমূলক কাজের খরচ মেটানো হয়। তাই আন্তর্জাতিক বাজারে যখন পেট্রোল-ডিজেলের দাম বেশ কম ছিল, তখনও ভারতে তা ছিল যথেষ্ট চড়া।
গত কয়েক মাসে সব হিসাব ছাড়িয়ে ১০০ পার করে দিয়েছে পেট্রোল-ডিজেলের দাম। দিল্লিতে এক লিটার পেট্রোলের দাম ছিল ১০৮ টাকারও বেশি।
তাহলে এখন হঠাৎ কেন দাম কমানো হলো? এর পেছনে আছে অন্য গল্প। সেটা ভোটের রাজনীতি। উত্তর প্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন। ভারতের রাজনীতিতে এই নির্বাচনের গুরুত্ব অপরিসীম। সেখানে বিধানসভায় শুধু ৪০০ আসন আছে তাই নয়, লোকসভায় ৮০টি আসন আছে। হিন্দি-বলয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য যার হাতে থাকে, সেই দল কেন্দ্রীয় রাজনীতিতেও প্রভাব বিস্তার করে।
বিজেপি সূত্র জানাচ্ছে, সম্প্রতি দলটির শীর্ষ নেতারা উত্তর প্রদেশের সব জেলায় স্থানীয় দলীয় নেতৃত্ব ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পরিস্থিতি জানতে চান। তারা যে রিপোর্ট দিয়েছেন তা হলো, এমনিতে পরিস্থিতি ভালো, কিন্তু গত বারের চেয়ে আসন দুই-একটা কমতে পারে। গতবার তিন শতাধিক আসন জিতেছিল বিজেপি। এবার জেলা পর্যায়ে দুই-একটা করে আসন কম হওয়া মানে প্রায় ১৫০-এর মতো আসন কমে যাওয়া। তাতেই দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে।
সমীক্ষা করে দেখা গেছে, উত্তর প্রদেশের মানুষ দুইটি বিষয়ে ক্ষুব্ধ। এক, পেট্রোল-ডিজেলের দাম মাত্রাছাড়া জায়গায় পৌঁছে যাওয়া। দুই, সর্ষের তেলের দাম ২০০ ছাড়িয়ে লিটারে ২৫০ টাকার কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া। সেই সঙ্গে অন্য জিনিসের দাম বাড়া এবং স্থানীয় কিছু সমস্যা আছে। তারপরই পেট্রোল-ডিজেলের দাম কমিয়ে এই দেওয়ালি উপহার দেয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
শুধু দাম কমানোই নয়, সেই সঙ্গে লাগাতার প্রচার শুরুর পরিকল্পনাও নিয়েছে বিজেপি। অমিত শাহ-সহ দলটির ছোট-বড় নেতারা টুইট করতে শুরু করেছেন যে, এই সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী মোদির সাধারণ মানুষের পাশে থাকার উদাহরণ। তার সংবেদনশীলতার পরিচয়। এই প্রচারটাই এবার দেশজুড়ে হবে।
বিজেপি সূত্র বলছে, সাধারণ মানুষ দীর্ঘদিন কোনও বিষয় মনে রাখে না। তাই ভোটের সময় তারা দাম কমানোর কথাটাই মনে রাখবে। দাম বাড়ার কথা নয়। এরপর সর্ষের তেলের দাম কমানো হবে। পেঁয়াজের দামে রাশ টানা হবে। আর সেই সব প্রচার তুঙ্গে উঠবে। দরকার হলে রান্নার গ্যাসের দামও সামান্য কমানো হতে পারে। এভাবেই মানুষের মনের ক্ষোভ দূর হবে।
সম্প্রতি দেশের ১৩টি রাজ্যে বেশ কিছু বিধানসভা কেন্দ্রে ও তিনটি লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন হয়েছে। তার ফলে দেখা গেছে, আসাম ও উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলো ছাড়া বিজেপি কোথাও ভালো ফল করতে পারেনি। তিনটির মধ্যে তারা মাত্র একটি লোকসভা আসনে জিতেছে। কংগ্রেস একটি ও শিবসেনা একটিতে জিতেছে। হিমাচলে তিনটি বিধানসভা আসনেই হেরেছে। কর্ণাটক ও মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস একটি করে আসনে জিতেছে। রাজস্থানে বিজেপি একটিও আসনে জিততে পারেনি। বিজেপি সূত্র বলছে, এই ফলের কারণ দ্রব্যমূল্য নিয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ। সূত্র: ডিডাব্লিউ।
