X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতের ভুলে যাওয়া শিক্ষা: নির্বাচনি সমাবেশে ছড়াচ্ছে ওমিক্রন

বিদেশ ডেস্ক
০৮ জানুয়ারি ২০২২, ১৯:২৮আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০২২, ১৯:২৮

ভারতে বিদ্যুৎগতিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। উচ্চ সংক্রমণশীল ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের দাপটে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার ধীরে ধীরে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করছে। রাতের কারফিউ ফিরে এসেছে। রেস্তোরাঁ ও বারগুলোকে তাদের অর্ধেক সামর্থ্য নিয়ে চলছে। কিছু রাজ্যে স্কুল ও চলচ্চিত্র প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ করে দিয়েছে। বড় জনসমাবেশ কমিয়ে আনা হচ্ছে। কিন্তু ভারতের রাজনীতিক নেতারা ব্যস্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য নির্বাচনের প্রচারণায়। একের পর এক লাখো মানুষের সমাবেশ আয়োজন হচ্ছে, যেখানে উপস্থিত মানুষদের বেশিরভাগেরই মাস্ক নেই। মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি’র এক প্রতিবেদনে এমন পরিস্থিতির কথা উঠে এসেছে।

পরিস্থিতি গত বছরের নির্বাচনি মৌসুমের মতো। যখন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ভারতজুড়ে তাণ্ডব চালায়। প্রাদুর্ভাব এত ভয়াবহ ছিল ভারত বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ আক্রান্ত দেশে পরিণত হয়। কিছু রাজনৈতিক দল তাদের প্রচারণা কমিয়ে আনছে কিংবা কয়েকটি সমাবেশ বাতিল করছে। কিন্তু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, গত বছর সংক্রমণ যে শিক্ষা দিয়েছে তা হয়ত এরই মধ্যে ভুলে যাওয়া হয়েছে।

 ভারতীয় ভাইরোলজিস্ট ড. টি. জ্যাকব জন বলেন, উচ্চ সংক্রমামক ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট মানুষের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে এবং আক্রান্ত করছে। কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক নেতারা সমাবেশ করে এটিকে আলিঙ্গণ করে স্বাগত জানাচ্ছেন। আমার ভয় হচ্ছে যে, গত বছরের মতো পরিস্থিতির সূত্রপাত হতে যাচ্ছে।

গত বছর বিপর্যয়কর সংক্রমণ ছড়িয়েছিল ভারতে। বিশাল বিশাল রাজনৈতিক সমাবেশ এই সংক্রমণ ছড়াতে ভূমিকা রেখেছিল। এসব সমাবেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ রাজনৈতিক নেতারা মাস্ক ছাড়াই হাজির হয়েছেন, বক্তব্য দিয়েছেন।

ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। অক্সিজেন ও হাসপাতালের বেডের জন্য মানুষকে হা-হুতাশ করতে শুরু করে এবং শশ্মাণগুলোতে স্থান সংকুলান হচ্ছিল না। সংক্রমণ চূড়ায় পৌঁছালে দৈনিক মৃত্যু ৪ হাজার ছাড়িয়ে যায়। মার্চ ও মে মাসে অন্তত ২ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। যদিও প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হয়।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন সংক্রমণে আগের চেয়ে মৃত্যু হচ্ছে কম এবং অনেক আক্রান্তের কোনও উপসর্গ নেই। কিন্তু ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টকে হালকাভাবে নেওয়ার বিরুদ্ধে সতর্ক করছেন তারা। বলছেন, মৃদু হলেও আক্রান্তের সংখ্যা বিশাল হলে দেশটির ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় চাপ তৈরি করতে পারে।

সর্বোপরি, গত সপ্তাহে ভারতে দৈনিক শনাক্ত প্রায় চারগুণ বেড়েছে। হাসপাতালে ভর্তি বাড়ছে এবং কিছু রাজ্যে স্বাস্থ্যকর্মীদের শীতকালীন ছুটি কমিয়ে কাজে যোগ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।  

ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইসহ বড় শহরগুলোতে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগামীতা বেশি। অতীতের দৈনিক শনাক্তের রেকর্ড ভাঙছে। তুমুল নির্বাচনি প্রচারণা চলা পাঁচটি রাজ্য উত্তর প্রদেশ, পাঞ্জাব, উত্তরাখন্ড, গোয়া ও মনিপুরে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা।

শনিবার ভারতীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ১ লাখ ৪১ হাজার ৯৮৬ জন আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন। যা আগের দিনের তুলনবায় ২১ শতাংশ বেশি।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চরম ভীড়ের রাজনৈতিক সমাবেশগুলো ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া তরান্বিত করছে। 

ভাইরোলজিস্ট জন বলেন, এই বছরের এসব সমাবেশের কারণে সংক্রমণ চক্র শুরু হয়েছে এবং স্থিমিত হতে মাস খানেক লাগবে।

গত কয়েক সপ্তাহে বেশ কয়েকটি শহরে বিশাল বিশাল সমাবেশে ভাষণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) শাসিত সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তর প্রদেশে অনেক সমাবেশ করেছেন তিনি। বিজেপির রাজনৈতিক বিরোধীরাও স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গ করে নির্বাচনি সমাবেশ করছে।  

এই সপ্তাহের শুরুতে কংগ্রেস পার্টি হাজারো মানুষের একটি ম্যারাথন আয়োজন করে। এই প্রতিযোগিতা মাস্ক না পরে ও একে অন্যের সঙ্গে গায়ে লেগে অংশগ্রহণ করে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বিভিন্ন রাজ্যে রাজনৈতিক মিছিল-সমাবেশে অংশগ্রহণের পর করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

সংক্রমণের দ্রুত বৃদ্ধির কারণে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের হুঁশিয়ারি এবং গত বছর সংক্রমণ চূড়ায় থাকার সময়ের তুলনায় দ্রুত ভাইরাসের বিস্তারের তথ্য হাজির হওয়াতে বেশ কিছু রাজনৈতিক দল তাদের প্রচার কর্মসূচিতে সংশোধন করতে শুরু করেছে। কংগ্রেস বলছে, তারা উত্তর প্রদেশে সমাবেশ বন্ধ রাখবে এবং ভার্চুয়াল প্রচার শুরু করবে। মোদির দল বিজেপিও একই পথ ধরছে। তবে এটি স্পষ্ট নয়, সূচিতে থাকা সমাবেশগুলো বাতিল করা হবে কিনা।

বুধবার সরকারের করোনাভাইরাস মোকাবিলায় নিয়েঅজিত চিকিৎসক ভি.কে. পাল বলেন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় চাপ পড়বে। রাজনৈতিক কর্মসূচি ও সমাবেশ সীমিত করতে নির্বাচন কমিশনকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

নির্বাচন কমিশন বলছে, রাজনৈতিক দলগুলো সমাবেশ করতে চায়।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার এস.ওয়াই. কুরাইশি মনে করেন, কমিশন চাইলে নির্বাচনি প্রচার নিষিদ্ধ বা সীমিত করতে পারে। বলেন, কিন্তু তাদের ইচ্ছে নাই। সারা দেশে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সমাবেশ নিষিদ্ধ কী অর্থ থাকতে পারে?

ভাইরোলজিস্ট জন বলছেন, আসন্ন নির্বাচন নিয়ে রাজ্য কর্মকর্তারা কারফিউ ও দৈনন্দিন জীবনে বিধিনিষেধ আরোপ করছেন। কিন্তু বড় সমাবেশ আয়োজনের অনুমতি দিচ্ছেন। যা সাংঘর্ষিক।

তার কথায়, সরকার আরেকবার বার্তা দিলো যে, স্বাস্থ্যের চেয়ে রাজনীতি বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

 

/এএ/
সম্পর্কিত
সিলেটে আবারও শুরু হচ্ছে করোনাভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রম
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে
লোকসভা নির্বাচন: প্রথম ধাপে পশ্চিমবঙ্গের ৩ আসনে ভোট আজ
সর্বশেষ খবর
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ