X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১
আগে রাম, পরে বাম 

পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ভোটে শাসকবিরোধী জোট!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১৪ ডিসেম্বর ২০২২, ১৯:৫২আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯:১৪

সামনেই পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগেই রাজ্যে কয়েকটি সমবায় সমিতির ভোটে দলীয় হুইপকে অস্বীকার করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিজেপিকে সঙ্গে নিয়ে অঘোষিত মহাজোট করে লড়াই শুরু করে দিয়েছে স্থানীয় পর্যায়ে সিপিএমসহ বামফ্রন্টের নেতা-কর্মীরা। যা নিয়ে প্রমাদ গুণতে শুরু করেছে আলিমুদ্দিন। গত বিধানসভা ভোটে নিশ্চিহ্ন হওয়ার পর ফের কয়েকটি পৌরসভা ও বিধানসভার উপনির্বাচনে দ্বিতীয় স্থানে চলে আসার পর পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির ময়দানে ফিরে আসার যে স্বপ্ন তারা দেখতে শুরু করেছিলেন তাতে ফের ভাটার টান শুরু হয়েছে। তাহলে কী উনিশের লোকসভা ভোটের মতোই আগে ‘রাম, পরে বাম’ এই তত্ত্বে পঞ্চায়েত ভোটে লড়াই করার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন স্থানীয় বাম নেতা-কর্মীরা? এই আশঙ্কায় এখন সিদুঁরে মেঘ দেখছে আলিমুদ্দিন।

সূত্রের খবর, গত সপ্তাহের বুধ ও বৃহস্পতিবার কলকাতায় সিপিএমের সদর দফতর আলিমুদ্দিনে রাজ্য কমিটির বৈঠকে এমনই আশঙ্কার কথা উঠে এসেছে জেলার নেতাদের কাছ থেকে। কয়েকজন জেলার সাফ জানিয়েছেন, যা পরিস্থিতি তাতে তৃণমূলের হাত থেকে রক্ষা পেতে এই মুহূর্তে ‘বেটার অপশন’ হিসেবে অঘোষিত জোটের পক্ষে কথা বলছেন নিচুতলার নেতা-কর্মীরা। এর ফলে পঞ্চায়েত ভোটে স্থানীয় পর্যায়ে বিজেপিকে সঙ্গে নিয়ে মহাজোট হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে যার প্রমাণ মিলেছে কয়েকটি সমবায় সমিতির ভোটে। এই ট্রেন্ড ক্রমাগত বাড়ছে নিচতুলায়।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের বিধানসভায় মোট ভোটের ২৯.৭১ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিল বামফ্রন্ট। কিন্তু ২০১৯-র লোকসভা ভোটে ২৩ শতাংশ ভোট কমে দাঁড়ায় মাত্র ৭ শতাংশে। অপরদিকে বিজেপির ভোট ১৭.০২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৪০ শতাংশে। এই অতিরিক্ত ২৩ শতাংশ ভোট যে বাম ভোট তা রামে চলে গিয়েছিল তা স্পষ্ট। কিন্তু ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে সাফল্যের ধারা ধরে রাখতে পারেনি একুশের বিধানসভা ভোটে বিজেপি। আশা জাগিয়েও মর্মান্তিকভাবে তৃণমূলের কাছে হারতে হয়েছিল গেরুয়া শিবিরের। রাজনৈতিক মহলের মতে, গত উনিশের লোকসভা নির্বাচনে ‘আগে রাম, পরে বাম’ এই তত্ত্বে বামেদের ভোট রামের দিকে চলে গিয়েছিল। এর ফলে রাজনৈতিকভাবে বামেরা ধাক্কা খেলেও বিজেপি যার পুরো লাভ তুলেছিল। এরপর থেকেই একদিকে নিজেদের ভোট ফিরিয়ে আনার জন্য প্রচার, অন্যদিকে লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি নিলেও তার সাফল্য মেলেনি একুশের বিধানসভা ভোটে বামেদের। কিন্তু বিজেপির পরাজয়ের সুযোগে বামের ফের কিছুটা ঘর গুছিয়ে নিতে পেরেছিল। বিধানসভা ভোটের পরবর্তীতে বিজেপির সাংগঠনিক দূর্বলতার সুযোগে বামেরা ফের বেশ কয়েকটি বিধানসভার উপ-নির্বাচনে ও পৌরসভা ভোটে গেরুয়া শিবিরকে পিছনে ফেলে উঠে এসেছিল বিরোধী হিসেবে। 

এবার কিন্তু আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে বামেদের কাছে চলে যাওয়া সেই ভোটকে আবার ফিরিয়ে এনে তৃণমূলের সঙ্গে সমানে সমানে টক্কর দিতে চাইছেন মুরলীধর সেন লেনের কর্তারা। সম্প্রতি পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমারে সমবায় নির্বাচনে তৃণমূলকে বেকায়দায় ফেলা ‘রাম বাম’ জোট বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের উৎসাহিত করেছে। যা ইতোমধ্যে ‘নন্দকুমার মডেল’ বলে পরিচিত হয়েছে। যা নিয়ে আশাবাদী গেরুয়া শিবির। তারা মনে করছেন, এই মডেলেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিজেপির সঙ্গে অঘোষিত মহাজোট গড়ে পঞ্চায়েত লড়াই দেবেন স্থানীয় বাম নেতা-কর্মীরা।

জানা গেছে, সিপিএমের জেলা নেতারও একই আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন আলিমুদ্দিনে। আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে সিপিএমের নেতৃত্বে বামফ্রন্টের ফের রাজ্যের রাজনীতিতে দুর্দান্ত কামব্যাক করে বিজেপিকে পিছনে ফেলে চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে উঠে আসার স্বপ্নকে আপাতত জল ঢেলে দিয়েছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। অপর দিকে এই সুযোগে, পঞ্চায়েত ভোটকে সামনে রেখে জেলায় জেলায় বিজেপি যে তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ তা প্রমাণে মরিয়া গেরুয়া শিবির। যা চব্বিশের লোকসভা ভোটে তাদের বাড়তি মাইলেজ দেবে বলেই মনে করছেন তারা।

রাজ্যের প্রতিটি পঞ্চায়েত ধরে ধরে লড়াইয়ের ছক তৈরি করতে বলা হয়েছে জেলা নেতৃত্বেকে।  প্রতিটি বুথে বুথ কমিটি তৈরি করতে বলা হয়েছে প্রতিটি মণ্ডল সভাপতিকে। তৃণমূল পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েতগুলোর বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। পঞ্চায়েত দুর্নীতি ছাড়া ও একশ’ দিনের কাজে দুর্নীতির, কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ, নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে পদ্ম শিবির ইতোমধ্যে মাঠে নেমে পড়েছে। পঞ্চায়েত ভোটের দিন শাসকদলের জালিয়াতির আশঙ্কা করে প্রতিটি বুথে কারচুপি ঠেকানোর কমিটি তৈরি করার চেষ্টা শুরু করেছে তারা। তৃণমূল ঠেকাতে স্থানীয় স্তরে বামেরা একটা পর্যায়ে গিয়ে তাদের পঞ্চায়েত ভোটে সর্মথন করবেন বলে আশাবাদী মুরুলিধর সেন লেনের কর্তারা। গেরুয়া শিবিরের এই চিন্তার সমর্থন মিলছে স্থানীয় পর্যায়ে। এমনটাই জানিয়েছেন সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার এক নেতা। তিনি বলেন, ‘পঞ্চায়েত স্থানীয় পর্যায়ের ইস্যুগুলো নিয়ে হয়। সেখানে তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে, পেশি শক্তির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ রয়েছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে অনেক বিরোধী কর্মীকে জেলে পাঠানো হয়েছে। এই পরিস্থিতি কারা আসলে লড়াই দিতে পারবে সেটাই বড় কথা। সেখানে বিরোধী ভোট ভাগ হলে শাসকদলের সুবিধা হয়ে যাবে। এটা রুখতেই এধরণের মহাজোট অতীতেও হয়েছে এবারও হবে। অনেক ক্ষেত্রে সরাসরি জোট না হলেও সর্বসম্মতিক্রমে নির্দল প্রার্থীকে দাঁড় করিয়েও অনেক জায়গায় লড়াই হবে। যেটা আটকানোর ক্ষমতা বা মেকানিজেম আমাদের নেই। দল থেকে বহিষ্কারের ভয় দেখিয়ে এধরণের জোট গঠনকে আটকানো যাবে না। মানুষ বাঁচার স্বার্থে রাজনৈতিক আর্দশকে দূরে সরিয়ে রেখে জোট গড়ে তোলবার সম্ভাবনা এবার রয়েছে প্রবলভাবে।’

/এএ/
সম্পর্কিত
লোকসভা নির্বাচনপ্রথম ধাপে ভোটের হার ৬০ শতাংশ, সর্বোচ্চ পশ্চিমবঙ্গে
পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস, সিপিআই-এম ইন্ডিয়া জোট নয়, বিজেপির এজেন্ট: মমতা
লোকসভা নির্বাচন: মণিপুরে ভোটকেন্দ্রে সংঘর্ষ
সর্বশেষ খবর
ইউক্রেনের অন্তত ৭টি প্যাট্রিয়ট সিস্টেম প্রয়োজন: ন্যাটোকে জেলেনস্কি
ইউক্রেনের অন্তত ৭টি প্যাট্রিয়ট সিস্টেম প্রয়োজন: ন্যাটোকে জেলেনস্কি
শিশু হাসপাতালে তিন দিনের ব্যবধানে দুবার আগুন!
শিশু হাসপাতালে তিন দিনের ব্যবধানে দুবার আগুন!
ব্যাংককে চীনের দাবাড়ুকে হারালেন মনন
ব্যাংককে চীনের দাবাড়ুকে হারালেন মনন
ব্যয়বহুল প্রযুক্তি আর ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধের এখনই সময়
এনার্জি মাস্টার প্ল্যান সংশোধনের দাবিব্যয়বহুল প্রযুক্তি আর ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধের এখনই সময়
সর্বাধিক পঠিত
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!