ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চল তেল আবিবের কাছে একটি হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইয়েমেনের ইরানপন্থি হুথি গোষ্ঠী। রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) এই হামলাটি চালানো হয়। হামলার পর আল-কাসেম ব্রিগেডের সামরিক মুখপাত্র আবু উবাইদা এই ‘গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন’-এর জন্য হুথিদের প্রশংসা করেন। ফিলিস্তিন বিষয়ক সংবাদমাধ্যম প্যালেস্টাইন ক্রনিকলের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য।
হুথি বিদ্রোহীদের মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি দাবি করেছেন, তারা ইসরায়েলি সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ‘নতুন হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র’ নিক্ষেপ করেছে, যা ১১ মিনিটে ১ হাজার ২৭০ মাইল পাড়ি দিয়েছে এবং ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) সেটি আটকাতে ব্যর্থ হয়েছে।
ইসরায়েলি আর্মি রেডিও জানায়, বিমানবাহিনী এখনও তদন্ত করছে কেন ক্ষেপণাস্ত্রটি আগেই প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়নি।
ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলে হামলা এটিই প্রথম নয়। এর আগে গত ১০ জুলাই ইয়াফা নামক একটি ইয়েমেনি ড্রোন ইসরায়েলের ইলাত শহরে আঘাত হানার জন্য প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছিল। এরপরও হুথিরা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে।
তবে রবিবারের সর্বশেষ এই ক্ষেপণাস্ত্রটি একেবারেই ভিন্ন ছিল। এটি সত্যিই এক গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু কেন?
প্রথমত, ক্ষেপণাস্ত্রের ধরন। এটি রুশ বা ইরানি কোনও ক্ষেপণাস্ত্র নয়। অর্থাৎ ক্ষেপণাস্ত্রটি মূলত ইয়েমেনেই তৈরি ও উন্নত করা হয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্রের গায়েও লেখা রয়েছে ‘মেড ইন ইয়েমেন’।
দ্বিতীয়ত, কমপক্ষে তিনটি প্রধান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ইয়েমেনি ক্ষেপণাস্ত্রকে আটকাতে ব্যর্থ হয়েছে। লোহিত সাগরে মার্কিন নৌবাহিনীর উপস্থিতি, এই অঞ্চলে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক উপস্থিতি ও ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা- কোনোটাই এই ক্ষেপণাস্ত্রকে প্রতিহত করতে পারেনি।
তৃতীয়ত, ২০ জুলাই হুদাইদাহ বন্দরে ইসরায়েলি আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় ইয়েমেনি প্রতিক্রিয়ার বিলম্ব প্রমাণ করে যে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে হুথিদের বারবার হুমকি শুধু মুখের কথা ছিল না।
রবিবারের হামলাটি গুরুতর ছিল। কারণ এর ফলে ইসরায়েলিরা নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল। ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকেন্দ্র এবং তেল আবিব বিমানবন্দরের মধ্যবর্তী একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল এলাকায় এটি আঘাত হেনেছিল।
যদিও ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ক্ষয়ক্ষতি ঢেকে রাখার মিথ্যা প্রয়াস চালিয়ে গেছে। তা সত্ত্বেও ইসরায়েলিদের ধারণ করা অপেশাদার ভিডিওগুলো ক্ষেপণাস্ত্র ও এর টুকরোগুলোর কারণে সৃষ্ট বিশাল ক্ষতিই প্রদর্শন করেছে।
এছাড়া গত ৩১ জুলাই হামাসের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়েহকে হত্যার জন্য ইরানের প্রতিক্রিয়ায় বিলম্বের অর্থ এই নয় যে তেহরান প্রতিশোধ নেবে না। বরং তা আসছে এবং হয়তো শিগগিরই আসতে পারে।
চতুর্থত, আনসারাল্লাহর প্রতিক্রিয়ার সময়সূচি নবী মুহাম্মদ (সা.) এর জন্মদিন উদযাপনের সঙ্গে মিলে যায়। ঈদে মিলাদুন্নবী সব মুসলমান-সুন্নি এবং শিয়া উভয়কেই একত্রিত করে।
পঞ্চমত ও সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হলো- ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ প্রসারিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে আঘাত হানলো হুথিরা।
ইসরায়েলের উত্তর ও দক্ষিণ সীমান্তে যুদ্ধাবস্থা চলছে। কেবল মধ্যাঞ্চল কিছুটা স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু ইয়েমেনি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের জন্য এক কঠিন সতর্কতা ছিল যে যতক্ষণ না গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা চলতে থাকবে, ইসরায়েলের কোনও অংশই নিরাপদ নয়।
উল্লেখ্য, হুথিরা গাজার প্রতি সংহতি প্রকাশ করে লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরে ইসরায়েলি মালিকানাধীন, পরিচালিত বা তাদের বন্দরগামী জাহাজগুলো লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালাচ্ছে। ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়ায় হুথিরা এই হামলা চালাচ্ছে।