দীর্ঘ ১২ বছর পর সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে উড়লো যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা। নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত সিরিয়া বিষয়ক মার্কিন দূত থমাস বারাক বৃহস্পতিবার দামেস্ক সফরে এই পতাকা উত্তোলন করেন। একই সঙ্গে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে শান্তি অর্জন সম্ভব। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
মার্কিন দূত বারাক বলেন, সিরিয়া-ইসরায়েল বিরোধ একটি সমাধানযোগ্য সমস্যা। তবে এর সূচনা হওয়া উচিত আক্রমণ না করার একটি চুক্তি থেকে। এরপর সীমান্ত ও সীমারেখা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
মার্কিন দূত আরও বলেন, আমরা এই তরুণ সরকারকে একটি সুযোগ দিতে চাই—হস্তক্ষেপ না করে, কোনও শর্ত না দিয়ে, সংস্কৃতি চাপিয়ে না দিয়ে।
তিনি বলেছেন, সিরিয়াকে সন্ত্রাসে সহায়তা প্রদানকারী রাষ্ট্র হিসেবে আর বিবেচনা করা হবে না। যদিও এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে কংগ্রেসের ছয় মাস সময় লাগবে।
সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা এক সময় আল কায়েদার শীর্ষ কমান্ডার ছিলেন। আসাদ সরকার পতনের পর দেশটিকে দ্রুত পশ্চিমা দিকমুখী করছেন তিনি।
সিরিয়া দীর্ঘদিন ধরে আরব-ইসরায়েল সংঘাতের প্রধান ফ্রন্টলাইন রাষ্ট্র। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইসরায়েল গোলান মালভূমি দখল করে। এরপর ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে বাশার আল-আসাদের পতনের সময় সীমান্ত অঞ্চলে আরও এলাকা দখল করে নেয়।
রয়টার্স জানিয়েছে, ইসরায়েল ও সিরিয়ার কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে সরাসরি বৈঠক করেছেন। মূলত উত্তেজনা প্রশমন ও সীমান্ত সংঘর্ষ এড়ানোর লক্ষ্যে এই বৈঠক হয়েছে। চলতি মাসের শুরুর দিকে রিয়াদে ট্রাম্প-শারা বৈঠকেও এই বিষয়টি আলোচনায় আসে।
মার্কিন দূত বারাক বলেন, আসাদ সরকারের পতনের সঙ্গে সঙ্গে সন্ত্রাসে সহায়তার ইস্যুটিও শেষ হয়েছে।
সিরিয়া ১৯৭৯ সাল থেকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে। এর মধ্যে ২০২০ সালের ‘সিজার আইন’ অনুযায়ী কঠোর নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। বারাক জানান, এই আইন বাতিলের জন্য কংগ্রেসের ১৮০ দিনের সময়সীমা নির্ধারিত হয়েছে।
তিনি বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আপনাদের চেয়ে বেশি অস্থির যে ব্যক্তি, তিনি হলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই।
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরুর এক বছর পর, ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র দামেস্কে তাদের দূতাবাস বন্ধ করে দেয়। ওই সময় রাষ্ট্রদূত রবার্ট ফোর্ডকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এরপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সিরিয়া বিষয়ক দূতেরা বিদেশ থেকেই কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন।
এই দীর্ঘ গৃহযুদ্ধে কয়েক লাখ মানুষ নিহত হয়েছেন, কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আসাদ সরকার ইরান ও রাশিয়ার সহায়তায় ক্ষমতা আঁকড়ে রাখলেও পশ্চিমা বিশ্ব তাকে একঘরে করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
শারা ২০১৬ সাল পর্যন্ত আল কায়েদার সিরিয়া শাখার নেতৃত্বে ছিলেন। এরপর তিনি আন্তর্জাতিক জঙ্গি নেটওয়ার্কের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন।