ওমানে রবিবার (১৫ জুন) অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্ধারিত ইরান-যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক আলোচনার পরবর্তী পর্ব বাতিল করা হয়েছে। শনিবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
আরাঘচিকে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘আমরা কি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে রোববারের আলোচনা বাতিল?’ জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ।’
এর কিছুক্ষণ পর ওমানও নিশ্চিত করে যে আলোচনাটি ‘এখন আর অনুষ্ঠিত হচ্ছে না।’
এর আগে ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আরাঘচির উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, ইরান পরিষ্কারভাবে ইঙ্গিত দিয়েছে যে, যখন ‘নির্মম’ ইসরায়েলি হামলা দেশটিকে লক্ষ্য করছে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনা চালিয়ে যাওয়া অযৌক্তিক।
ইসরায়েল ও ইরানের হঠাৎ ও ব্যাপক সংঘাতের ফলে আলোচনা স্থগিত হওয়াকে অবশ্যম্ভাবী বলেই মনে করা হচ্ছিল।
ইসরায়েল যখন ইরানের বিরুদ্ধে তার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামরিক হামলা চালায়, তখন তেহরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনাকে ‘অর্থহীন’ বলে অভিহিত করে। তেহরান অভিযোগ করে, ওয়াশিংটন এই হামলায় ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পারমাণবিক আলোচনার ষষ্ঠ পর্ব রবিবার ওমানে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
ইরান বরাবরই দাবি করে আসছে, তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম শুধুই বেসামরিক উদ্দেশ্যে এবং এটি গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে বলে ইসরায়েলের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু অঙ্গীকার করেছেন, ‘ইরানকে ‘পারমাণবিক হুমকি’ তৈরি করা থেকে বিরত রাখতে যতদিন লাগবে, ততদিন হামলা অব্যাহত থাকবে।’
ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে বলেন, তিনি ইরানি নেতাদের আগেই সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, ‘তারা যা জানে বা যা কল্পনা করেছে তার চেয়েও অনেক খারাপ কিছু হতে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সেরা এবং সবচেয়ে প্রাণঘাতী সামরিক সরঞ্জাম তৈরি করে এবং ইসরায়েলের হাতে এর অনেক কিছু রয়েছে—আরও আরও আসছে।’
ট্রাম্প ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের জন্য দায়ী করেন এবং আরও কঠোর ইসরায়েলি হামলার হুমকি দেন।
তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিজ্ঞানের অধ্যাপক হামেদ মুসাভি আল জাজিরাকে বলেন, অনেক ইরানির মতে, যখন তাদের ওপর বোমাবর্ষণ চলছে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনা চালিয়ে যাওয়াটা সত্যিই অর্থহীন।
তিনি বলেন, ইসরায়েল কার্যত কূটনৈতিক সমাধানের পথটাই বন্ধ করে দিয়েছে। এবং আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র পুরোপুরি ইসরায়েলের সঙ্গে সমন্বয় করেই চলেছে। তাই আমি মনে করি না যে এই আলোচনা আর এগোবে।
মুসাভি আরও বলেন, ইসরায়েলিরা আশা করেছিল ইরানের রাজধানীতে জনগণের কোনও বিক্ষোভ বা দাঙ্গা হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এমন কিছু দেখা যায়নি। ভবিষ্যতে হবে কি না, বলা কঠিন। তবে এই মুহূর্তে জনগণের মনোভাব আসলেই বেশ প্রতিরোধমূলক।