ইরানের ওপর বিমান হামলা শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে যুদ্ধের মাঠে টানতে মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। একই সঙ্গে তিনি মার্কিন জনমতকেও প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন, যাতে করে ওয়াশিংটন সরাসরি ইরান-যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে।
রবিবার ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু মার্কিন নাগরিকদের প্রতি একটি প্রশ্ন ছুড়ে দেন। তিনি বলেন, ‘আপনারা কী চান এই মানুষগুলো পারমাণবিক অস্ত্র ও তা আমেরিকায় ছুড়ে মারার ব্যবস্থা পেয়ে যাক?’
এর পরদিন এবিসি নিউজকে তিনি বলেন, ‘আজ তেলআবিব, কাল নিউ ইয়র্ক।’
তার দাবি, ইরান এমন দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র বানাচ্ছে, যেগুলো একদিন মার্কিন ভূখণ্ড পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবে।
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে হোয়াইট হাউজে এক বৈঠকে নেতানিয়াহু ট্রাম্পের কাছে মার্কিন ‘বাংকার বাস্টার’ বোমা চেয়েছিলেন। এগুলো দিয়ে ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্র ফরদো ধ্বংস করা সম্ভব। তবে ওই অনুরোধে সাড়া দেননি ট্রাম্প।
ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন রিপাবলিকান শিবির বরাবরই বিদেশি যুদ্ধে জড়ানোর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তার ঘনিষ্ঠ মহলের মধ্যে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ড এবং মিডিয়া ব্যক্তিত্ব স্টিভ ব্যানন ও টাকার কার্লসনের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও স্পষ্টতই যুদ্ধবিরোধী।
যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ইরানে বিমান হামলা চালাবে কিনা, এই বিষয়ে বুধবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প বলেন, আমি হয়তো করবো, হয়তো করবো না। পরদিন বৃহস্পতিবার তিনি জানান, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে।
লন্ডনের চ্যাথাম হাউজ থিংক ট্যাংকের মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষক ইয়োসি মেকেলবার্গ বলেন, নেতানিয়াহু কৌশলগতভাবে ট্রাম্পের আত্মপ্রশংসার প্রতি দুর্বলতা কাজে লাগাচ্ছেন।
তিনি বলেন, ট্রাম্প হয়তো এমন কিছু খুঁজছেন যাতে গৌরব দাবি করা যায়। নেতানিয়াহু সেটি বোঝেন এবং সেই সুযোগ নিচ্ছেন।
এই বিশ্লেষক মনে করেন, গত শুক্রবার ইরান আক্রমণের জন্য ট্রাম্পের কাছ থেকে ‘হলুদ সংকেত’ পাওয়ার পরই নেতানিয়াহু হামলা শুরু করেন।
তবে হোয়াইট হাউজের সাবেক উপদেষ্টা এবং জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ এলিয়ট এ কোহেন মনে করেন, নেতানিয়াহুর প্রভাব অতিরিক্তভাবে দেখা উচিত নয়।
তিনি বলেন, এটা নেতানিয়াহুর লবিং নয়, বরং ট্রাম্পের নিজের ইরান বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি। ২০২৪ সালে তার বিরুদ্ধে ইরানি হত্যাচেষ্টার স্মৃতি, আর ইসরায়েলি অভিযানের প্রাথমিক সফলতাই বেশি প্রভাব ফেলছে।
তিনি আরও বলেন, নেতানিয়াহু শুধু ফরদোতে বোমা ফেলার কথা বলছেন, কেউই পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে নামার কথা বলছেন না। বেশিরভাগ আমেরিকান জানে—পারমাণবিক শক্তিধর ইরান যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকি।
সর্বশেষ দ্য ইকোনমিস্ট-এর জন্য ইউগভ পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ১৬ শতাংশ মার্কিন নাগরিক চান যুক্তরাষ্ট্র ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে সামরিকভাবে অংশগ্রহণ করুক।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের সবচেয়ে বড় অংশ ৫০ শতাংশ ইরানকে ‘শত্রু’ হিসেবে দেখলেও ডেমোক্র্যাটদের ৬৫ শতাংশ, স্বতন্ত্রদের ৬১ শতাংশ এবং রিপাবলিকানদেরও ৫৩ শতাংশ যুদ্ধের বিরোধিতা করেছেন।
ট্রাম্পের সাবেক কৌশলবিদ স্টিভ ব্যানন তার ওয়ার রুম পডকাস্টে বলেছেন, নেতানিয়াহু আমেরিকাকে লেকচার দিচ্ছেন এবং এমন এক যুদ্ধ শুরু করেছেন, যেটা তিনি নিজে শেষ করতে পারবেন না।
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, আমাদের কাছে যুদ্ধ শেষ করার দাবি করো না।
সূত্র: এএফপি