ইসরায়েলি শহর রামাত গান। তেলআবিবের পাশেই। বৃহস্পতিবার শহরটির ওপর আছড়ে পড়ে ইরানের ছোড়া ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। এতে আশপাশের ভবন কেঁপে ওঠে, স্টক এক্সচেঞ্জ ভবন ও আবাসিক এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, আহত হন অন্তত ২০০ জন।
একই দিনে দক্ষিণ ইসরায়েলের বিয়ারশেভার সোরোকা হাসপাতালেও আঘাত হানে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র। আহত হন আরও ৬০ জন। হাসপাতালটি আংশিকভাবে বন্ধ করে সুরক্ষিত স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয় রোগী ও কর্মীদের।
এই পরিস্থিতিতে শুধু আতঙ্ক নয়, রাজনৈতিক সংশয়ও ঘনীভূত হচ্ছে সাধারণ ইসরায়েলিদের মধ্যে। কেউ কেউ সরাসরি প্রশ্ন তুলছেন, এই যুদ্ধ কী ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য, নাকি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা?
রামাত গানের বাসিন্দা ওমরি বলছেন, আমার ভবনে কোনও বোমা আশ্রয়কক্ষ নেই। তাই উত্তর ইসরায়েলে আমার সঙ্গীর পরিবারের বাড়িতে গেছি। কিন্তু ঘর থেকে বের হলেই ভয় হয়।
তার কথায়, আমার অবস্থা তুলনামূলক ভালো। নিরাপদ আশ্রয় আছে। কিন্তু এভাবে আর কদিন থাকা যাবে?
তেলআবিবের আরেক বাসিন্দা এলিশা বলেন, আমরা একটা স্বৈরশাসকের অধীনে আছি, যার আসল লক্ষ্য শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকা। ইরানে হামলার মূল উদ্দেশ্য তার শাসন টিকিয়ে রাখা।
তিনি আরও বলেন, মন্ত্রীদের জন্য বাঙ্কার আছে। আমরা সাধারণ মানুষ শুধু দাবার ঘুঁটি।
ইরানের প্রতিদিনকার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা প্রসঙ্গে এলিশার মন্তব্য, এটা একেবারে নতুন ধরনের অভিজ্ঞতা। নিজের জন্য নয়, প্রিয়জনদের জন্য ভয় হয়।
তার বাবা-মায়ের বাড়ির কাছে কিছু দিন আগে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করে। জানালার কাচ ভেঙে যায়। পুরো এলাকা ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে। এলিশা বলছেন, এটা কোনও বাচ্চা বড় করার জায়গা নয়। আমি দেশের বাইরে চলে যেতে চাই।
হারেৎজ পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রামাত গানের এক বাসিন্দা বলেন, রাতের পর রাত ঘুমাতে পারিনি। তাই যখন সাইরেন বাজলো, টের পাইনি। আশ্রয়কক্ষে যাওয়ার আগেই ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করে, আমার কাঁধে আঘাত লাগে।
বিয়ারশেভার সোরোকা হাসপাতালের এক নার্স ওয়াইনেটকে বলেন, হাসপাতালে পৌঁছেই দেখি বিশৃঙ্খলা। মানুষ দৌড়াচ্ছে, চিৎকার করছে। জরুরি বিভাগের দিকে ছুটে যাই। এখন পুরো হাসপাতাল সরিয়ে ফেলা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এখন কোনও ওয়ার্ড কার্যকর নয়। ভবনটিই আর নিরাপদ নয়।
ওমরি বলছেন, একটা বড় কিছু হচ্ছে। প্রশ্ন হলো, এখন কেন? গাজায় এখনও বন্দি আছে আমাদের নাগরিকরা, সেনারা মারা যাচ্ছে, এই পরিস্থিতিতে ইরানে হামলা কেন?
তার মতে, সরকার, বিরোধী দল, পার্লামেন্ট—সবাই মিলে আমাদের এমন এক ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে যার কোনও নিশ্চয়তা নেই।
তেলআবিব অঞ্চলের হোলোন শহরে এক ১৩ বছরের কিশোরী ওয়াইনেটকে বলেছে, সাইরেন শোনামাত্র ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে আশ্রয়কক্ষে ছুটেছিলাম। পরে ফিরে এসে দেখি পুরো বাড়িটা ধ্বংস হয়ে গেছে। আমার ঘর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। আমি কাঁদতে শুরু করি।
ইসরায়েলিদের অনেকেই এখন এমনই এক বাস্তবতায় বাস করছেন, যেখানে মাথার ওপর আকাশে ছুটে যাচ্ছে ক্ষেপণাস্ত্র। আর বুকের ভেতরে জমছে গভীর সন্দেহ। এ যুদ্ধটা কার, আর কেন?
সূত্র: মিডল ইস্ট আই