X
সোমবার, ২০ মে ২০২৪
৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

কাঠমান্ডু পোস্টের বর্ণনায় ইউএস-বাংলার বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা

বিদেশ ডেস্ক
২৭ আগস্ট ২০১৮, ১৫:৩৭আপডেট : ২৭ আগস্ট ২০১৮, ১৫:৩৯

মার্চে ইউএস-বাংলার এয়ারলাইন্সের বিএস২১১ ফ্লাইটটি নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অবতরণের সময় বিধ্বস্ত হয়। সোমবার নেপালের সংবাদমাধ্যম কাঠমান্ডু পোস্ট দেশটির সরকারের একটি তদন্ত প্রতিবেদনের অনুলিপি হাতে পাওয়ার দাবি জানিয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে কাঠমান্ডু পোস্ট দুর্ঘটনাটির বিবরণ প্রকাশ করেছে।

কাঠমান্ডু পোস্টের বর্ণনায় ইউএস-বাংলার বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিএস২১১ ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বেলা সাড়ে বারোটায় উড়াল দেয়। প্রায় এক ঘণ্টা পর নাগাদ বিমানকর্মীরা ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে। বেলা একটা ৫০ মিনিটে বিমানটি অবতরণ শুরু করে এবং এর নিয়ন্ত্রণ কাঠমান্ডু বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ারকে দিয়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকে ১৩ হাজার ৫০০ ফিট উঁচুতে থাকা বিমানটিকে ‘গুরাস’ নামের একটি পয়েন্ট দিয়ে অবতরণের অনুমতি দেওয়া হয়।

বেলা ২টায় বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ার বিমানটিকে গতি কমিয়ে ১২ হাজার ৫০০ ফুট উঁচুতে রাখার অনুমতি দেয়। কন্ট্রোল টাওয়ার বিএস২১১-কে বিমানবন্দরের ২ নম্বর রানওয়ে দিয়ে নামার অনুমতি দেয়।

যখন বিমানের ক্রু সদস্যরা কন্ট্রোল টাওয়ারের নির্দেশনা অনুসরণ করছিল না তখন ত্রিভুবন বিমানবন্দরের কন্ট্রোলার বিমানের পাইলটকে জিজ্ঞেস করেছিলেন ‘কেন তারা গুরাসের ওপর নেই’। এই পর্যায়ে ককপিটের ভয়েস রেকর্ডারের তথ্য অনুযায়ী সুলতান বলেন, ‘এক্ষেত্রে ধরে রাখার দরকার পড়বে না’।

নেপাল সরকারের তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই পর্যায়ে সুলতান সিগারেটে একটি টান দেন। তখন বিমানটি প্রথম অবতরণ বিন্দুতে পৌঁছানোর বাকি মাত্র তিন মিনিট। এ থেকে রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই ঘটনায় দেখা যায় পাইলটের তরফ থেকে প্রক্রিয়াগত শৃঙ্খলা রক্ষায় বিপুল পরিমাণ অবজ্ঞা দেখানো হয়েছে।

তখন বিমানটি অটো-ফ্লাইট গাইডেন্স সিস্টেম কন্ট্রোল ব্যবহারের নিয়ন্ত্রণ হারায়। আর ২৮ নট বেগে প্রবাহিত তীব্র বাতাস বিমানটিকে পূর্ব দিকে ঠেলে দেয়।

টাওয়ার বিমানকর্মীদের জানিয়ে দেয়, ০২ নম্বর রানওয়ে দিয়ে অবতরণ করতে পারে। কিন্তু এর পরিবর্তে বিমানটি ২০ নম্বর রানওয়ের (বৌদ্ধ পাশ) দিকে রওনা দেয়। রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিমানকর্মীদের তরফ থেকে এই পরিস্থিতিতে পরিস্থিতিগত সচেতনতা অনুধাবনে পুরোপুরি ব্যর্থতা দেখা গেছে।

তখন কন্ট্রোল টাওয়ারের আরেকজন সুপারভাইজার মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে নেন এবং বিমানটিকে ২০ নম্বর রানওয়ে দিয়ে অবতরণের অনুমতি দেন। তার ধারণা ছিলে বিমানকর্মীরা বিমানটিকে বৌদ্ধ প্রান্ত দিয়ে নামাতে চান। কিন্তু বিমানটি তখন রানওয়ে খুঁজে পেতে সমস্যায় পড়ছিল এবং উত্তরপূর্ব দিয়ে উড়তে থাকে। মাটি থেকে ১৭৫ ফুট উঁচুতে থাকার সময়েই মাটির সতর্কতামূলক অ্যালার্ম বাজানো হয়।

কন্ট্রোল টাওয়ার তাৎক্ষণিকভাবে বিমানকর্মীদের উদ্দেশ্য সম্পর্ক জানতে চান। সুলতান তখন বলেন, তিনি ০২ নম্বর রানওয়ে দিয়ে নামতে চান। কন্ট্রোল টাওয়ার তখন আরেকটি বিমানকে ০২ নম্বর রানওয়েতে নামার অনুমোদন দিয়েছে। ওই বিমানটি তখন ০২ নম্বর রানওয়ের দিকে আসতে শুরু করেছে। এই তথ্য বিএস২১১ ফ্লাইটকে জানিয়ে দিয়ে তাদের সতর্ক করে দেওয়া হয় যে, ওই রানওয়েতে আরেকটি বিমান নামতে যাচ্ছে।

বিমানটি তখন আবারও ওপরে ওঠার চেষ্টা করে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই পর্যায়ে পাইলট তার সহকারীকে জানান যে তিনি একটি ভুল করে ফেলেছেন। এয়ারপোর্টের রাডারে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে থাকা একজন পাইলট তখন কন্ট্রোল টাওয়ারকে সতর্ক করে দেন যে, ইউএস বাংলার পাইলট বিচলিত হয়ে পড়েছেন আর নিয়ন্ত্রণ হারাতে যাচ্ছেন। কন্ট্রোল টাওয়ার তখন বিমানটিকে ০২ বা ২০ যে কোনও রানওয়ে দিয়ে নামার সম্মতি দিয়ে দেয়।

তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দুই পাইলটের বেশ কয়েকটি কথোপকথনে স্পষ্ট দেখা গেছে তারা রানওয়ের দিক নির্ণয় করতে ভুল করেছেন। আর এটা কন্ট্রোল টাওয়ারের সঙ্গে কোনও যোগাযোগগত ত্রুটির ফলাফল ছিল না।

কয়েক সেকেন্ড পরে সহকারী পাইলট বলেন, তিনি রানওয়ে দেখতে পাচ্ছেন। তখনও দ্বিধান্দ্বন্দ্বে রয়েছেন ক্যাপ্টেন। রানওয়ে দেখতে পাওয়ার পরও সহকারী পাইলট ভুলভাবে বিমান চালানোর ক্ষেত্রে কোনও বাধা দেননি। কন্ট্রোল টাওয়ার তাৎক্ষণিকভাবে অবতরণ অনুমতি বাতিল করে বলে দেয়, ‘টেক অফ ক্লিয়োরেন্স ক্যান্সেলড’।

কাঠমান্ডু পোস্টের বর্ণনায় ইউএস-বাংলার বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা

বিমানটি যখন ৪৫ ফুটের চেয়ে কম উচ্চতায় অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল ভবনের ওপর দিয়ে উড়ছিল তখন গ্রাউন্ড অ্যালার্ম ককপিটে শোনা যাচ্ছিল। নেপালের বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা তখন এত নিচু দিয়ে বিমান উড়তে দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন আর কন্ট্রোল টাওয়ারের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়ানোয় পাইলটের দক্ষতার প্রশংসা করেন। ওই সময়ে বিমানবন্দরের পার্কিং এলাকায় প্রায় আধাডজন বিমান রাখা ছিল।

ওইদিন বিকেলের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে কন্ট্রোল টাওয়ারে থাকা বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা জানান, বিধ্বস্ত হওয়ার পূর্বে বিমানটি যুদ্ধের সিনেমার মতো উড়ছিল। টাওয়ারের কাছ দিয়ে পুরোপুরি আত্মঘাতী প্রচেষ্টা নিয়েছিল বিমানটি।

এরপর বিমানটি যখন মাটিতে নেমে আসে তখন এর শুধু ডান পাশের ল্যান্ডিং গিয়ারটি রানওয়ে স্পর্শ করায় সেখানে বিধ্বস্ত না হয়ে এটি কাছের একটি মাঠে আটকে যায় এবং আগুন ধরে যায়। বিমানটিতে ২৮০০ কেজি তেল থাকায় সংঘর্ষের ছয় সেকেন্ডের মাথায় এতে আগুন ধরে যায়।

নেপালের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংঘর্ষের ধাক্কা কম হওয়ায় বিমানের আরোহীদের বেঁচে যাওয়ার ভালো সুযোগ থাকলেও দ্রুত আগুন ছড়িয়ে যাওয়ায় বের হওয়ার সুযোগ পাননি তারা।

দুর্ঘটনায় এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট কিছু ক্ষেত্রে কন্ট্রোল টাওয়ারের কর্মীদের প্রক্রিয়াগত ভুল শনাক্ত করলেও তদন্ত কমিটি সিদ্ধান্তে পৌঁছায় যে, বিধ্বস্তের ঘটনায় কন্ট্রোল টাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেনি।

নিরাপত্তা সুপারিশে তদন্ত কমিটি বাংলাদেশের সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটিকে (বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ) পাইলটদের শারিরীক ও মানসিক দক্ষতা পুনর্মূল্যায়ন করে তাদের লাইসেন্স নবায়নের পরামর্শ দিয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ১২ মার্চ নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ড্যাশ-৮ কিউ 8০০ বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। বিমানটিতে চারজন ক্রু ও ৬৭ যাত্রীসহ ৭১ জন আরোহী ছিলেন। তাদের মধ্যে চারজন ক্রুসহ ২৭ জন বাংলাদেশি, ২৩ জন নেপালি ও একজন চীনা যাত্রী নিহত হন। আহত হন নয়জন বাংলাদেশি, ১০ জন নেপালি ও একজন মালদ্বীপের নাগরিক।

নেপালের এই তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'ক্যাপ্টেনের কোনও প্রবলেম আমরা খুঁজে পাইনি। তার কোনও মানসিক ও স্বাস্থ্যগত সমস্যা ছিল না।’

ঘটনার পরপরই এই বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য এসেছে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স ও ত্রিভুবন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দাবি, পাইলটের ভুলেই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে। আর ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়া হচ্ছিলো তাদের। 

 

/জেজে/এএ/
সম্পর্কিত
রাইসির জন্য খামেনির প্রার্থনা
রাখাইনের বুথিডাউং শহর দখলে নিলো আরাকান আর্মি
চীন সফর: শি’র মন জয়ের চেষ্টায় ব্যস্ত ছিলেন পুতিন
সর্বশেষ খবর
অভিযান চালিয়েও কেন রিকশা ঠেকানো যাচ্ছে না রাজপথে?
অভিযান চালিয়েও কেন রিকশা ঠেকানো যাচ্ছে না রাজপথে?
হেলিকপ্টারে থাকা সব যাত্রীর নিহতের আশঙ্কা
ইরানের প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্তহেলিকপ্টারে থাকা সব যাত্রীর নিহতের আশঙ্কা
দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে রেড ক্রিসেন্ট
ইরানের প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্তদুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে রেড ক্রিসেন্ট
রাঙামাটিতে ইউপিডিএফের ডাকা অর্ধদিবস অবরোধ চলছে
রাঙামাটিতে ইউপিডিএফের ডাকা অর্ধদিবস অবরোধ চলছে
সর্বাধিক পঠিত
শনিবার ক্লাস চলবে ডাবল শিফটের স্কুলে
শনিবার ক্লাস চলবে ডাবল শিফটের স্কুলে
রাইসির হেলিকপ্টারের অবস্থান ‘শনাক্ত’, সুসংবাদের প্রত্যাশা
রাইসির হেলিকপ্টারের অবস্থান ‘শনাক্ত’, সুসংবাদের প্রত্যাশা
এনবিআর চেয়ারম্যানকে আদালত অবমাননার নোটিশ
এনবিআর চেয়ারম্যানকে আদালত অবমাননার নোটিশ
হিমায়িত মাংস আমদানিতে নীতিমালা হচ্ছে
হিমায়িত মাংস আমদানিতে নীতিমালা হচ্ছে
হামজার পর দিয়াবাতেকে বাংলাদেশ দলে খেলানোর প্রক্রিয়া শুরু
হামজার পর দিয়াবাতেকে বাংলাদেশ দলে খেলানোর প্রক্রিয়া শুরু