গুরুতর করোনা আক্রান্তদের মাঝে ডেক্সামিথাসোন ওষুধ পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করে সাফল্য পাওয়া ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞদের সাধুবাদ জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। একে অনেক বড় সংবাদ বলে উল্লেখ করেছেন সংস্থার মহাপরিচালক ট্রেড্রোস অ্যাডহানম ঘেব্রেইয়েসুস। মঙ্গলবার (১৬ জুন) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইট থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
১৯৬০-এর দশক থেকে যুক্তরাজ্যে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস ও অ্যাজমাসহ বিভিন্ন সমস্যায় ডেক্সামিথাসোন নামক স্টেরয়েড প্রয়োগ করে আসা হচ্ছে। ব্রিটিশ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের দাবি, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া রোগীদের জন্য এ ওষুধ জীবনরক্ষাকারী ভূমিকা পালন করে। সম্প্রতি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের নেতৃত্বে হাসপাতালে থাকা দুই হাজার করোনা রোগীর শরীরে এ ওষুধ প্রয়োগ করে পরীক্ষা চালানো হয়। ডেক্সামিথাসোন প্রয়োগ করা হয়নি এমন ৪ হাজার রোগীর অবস্থার সঙ্গে তাদের অবস্থার তুলনা করা হয়। এতে দেখা যায়, ভেন্টিলেটরে থাকা রোগীদের মৃত্যু ঝুঁকি ৪০ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ২৮ শতাংশ। আর অক্সিজেনে থাকা রোগীদের ক্ষেত্রে মৃত্যু ঝুঁকি ২৫ শতাংশ থেকে কমে ২০ শতাংশ হয়েছে।
গবেষকদের দাবি, যুক্তরাজ্যে করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়ার প্রাথমিক পর্যায়ে এ ওষুধ প্রয়োগ করা হলে অন্তত ৫ হাজার মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব হতো। তুলনামূলকভাবে এর দাম কম হওয়ায় দরিদ্র দেশগুলোও এ ওষুধ ব্যবহার করে অনেক সাফল্য পেতো।
প্রধান পরীক্ষক পিটার হরবি বলেন, ‘এটিই এখন পর্যন্ত একমাত্র ওষুধ, যা মৃত্যুর হার কমানোর ক্ষেত্রে সাফল্য দেখিয়েছে। উল্লেখযোগ্য হারেই তা কমেছে। এটা এক যুগান্তকারী সাফল্য।’
নেতৃত্বস্থানীয় গবেষক অধ্যাপক ল্যান্ড্রি বলেন, ‘গবেষণায় দেখা গেছে, এ ওষুধ প্রয়োগের মধ্য দিয়ে ভেন্টিলেটরে চিকিৎসা নেওয়া প্রতি আট জনের একজন রোগীর জীবন বাঁচানো সম্ভব। আর অক্সিজেন গ্রহণকারী প্রতি ২০-২৫ জন রোগীর শরীরে এ ওষুধ প্রয়োগ করে একজনের জীবন রক্ষা করা যেতে পারে।
তবে গবেষকরা জানিয়েছেন, যেসব রোগীর মৃদু উপসর্গ রয়েছে এবং যাদের শ্বাস নিতে বাড়তি সরঞ্জামের প্রয়োজন পড়ে না, তাদের ক্ষেত্রে এই ওষুধ কার্যকর হবে কিনা তা পরীক্ষা করা হয়নি।
মঙ্গলবার (১৬ জুন) গবেষণার এ ফলাফলকে স্বাগত জানান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক অ্যাডহানোম ঘেব্রেইয়েসুস। তিনি বলেন, ‘যেসব কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর জন্য অক্সিজেন ও ভেন্টিলেটর সাপোর্ট প্রয়োজন তাদের মৃত্যুহার কমাতে সক্ষম হওয়া প্রথম চিকিৎসা এটি। এ এক মহা সংবাদ। এর জন্য আমি যুক্তরাজ্য সরকার, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং জীবনরক্ষাকারী বৈজ্ঞানিক এ আবিষ্কারের ক্ষেত্রে অবদান রাখা বহু হাসপাতাল ও রোগীকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।’