X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশে ছাঁটাই হচ্ছেন অন্তঃসত্ত্বা গার্মেন্ট শ্রমিকরা: দ্য গার্ডিয়ান

বিদেশ ডেস্ক
০৯ জুলাই ২০২০, ২২:২৭আপডেট : ১০ জুলাই ২০২০, ০১:৩৫

কয়েক সপ্তাহ আগে কল্পনা আক্তারের ফোন কেঁপে ওঠে। মোবাইলে একের পর এক খুদেবার্তা আসছিল। তা পড়ে তার চোখেমুখে ভয়ের ছাপ ছড়িয়ে পড়ে। প্রথমে গার্মেন্ট সহকর্মীদের জন্য সুরক্ষা সরঞ্জাম দাবি করায় ছাঁটাইয়ের কথা। পরে অন্তঃসত্ত্বা শ্রমিক ও ইউনিয়ন সদস্যদের সহযোগিতা চাওয়া। তাদেরও চাকরি চলে যাচ্ছে।

বাংলাদেশে ছাঁটাই হচ্ছেন অন্তঃসত্ত্বা গার্মেন্ট শ্রমিকরা: দ্য গার্ডিয়ান


কোভিড-১৯-এর অর্থনৈতিক প্রভাব এবং প্রায় আড়াইশ’ কোটি ব্রিটিশ পাউন্ড মূল্যের অর্ডার বাতিল হওয়ায় বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাত যখন সংকটে তখন দেশজুড়ে ব্যাপক ছাঁটাই চলছে। এছাড়া লকডাউনের সময় কয়েক হাজার শ্রমিক যেসব কাজ ইতোমধ্যে করে ফেলেছেন সেগুলোর মজুরি পাননি।





সরকার গার্মেন্টস খাতকে টিকিয়ে রাখার জন্য বড় ধরনের আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করলেও বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, ১৮ লাখ শ্রমিক স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত হতে পারেন। অ্যাক্টিভিস্টরা বলছেন, ইতোমধ্যে মালিকরা ট্রেড ইউনিয়নকে দুর্বল ও ‘অবাঞ্ছিত’ শ্রমিকদের সরিয়ে দিতে কোভিড-১৯-কে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করেছেন।
বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটি’র প্রতিষ্ঠাতা কল্পনা আক্তার বলেন, যারা কথা বলে, যারা সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে– তাদের ছাঁটাই করার জন্য মহামারি মালিকদের কাছে সুযোগ হয়ে এসেছে।
চার সপ্তাহ আগে তথ্য সংগ্রহ শুরুর পর থেকে কল্পনা আক্তারের সংগঠনসহ অন্যদের কাছে ৩০টিরও বেশি কারখানায় অন্তঃসত্ত্বা শ্রমিকদের ছাঁটাই করার খবর পাওয়া গেছে। কল্পনা আক্তারের আশঙ্কা, আগামী দিনগুলোতে এই সংখ্যা নাটকীয় মাত্রায় বাড়বে। কারণ, প্রতিদিন শ্রমিক ছাঁটাই অব্যাহত থাকবে।
ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকদের একজন মিতু। জুন মাসের শেষদিকে প্রডাকশন ম্যানেজার যখন তাকে ছাঁটাই করেন তখন তিনি তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা। নিজের পুরো নাম গোপন রাখতে চাওয়া এই শ্রমিক জানান, কাজে অমনোযোগ ও প্রায় অজ্ঞান হওয়ার মতো অবস্থার পর তিনি ১৯ দিনের চিকিৎসা ছুটি নিয়েছিলেন। কাজে যোগ দেওয়ার পর তিনি শুনতে পান কর্তৃপক্ষ তাকে মাতৃত্বকালীন সুবিধা দিতে চায় না। তাকে ছাঁটাই করা হয় কাজ না করার অজুহাতে।
মিতু বলেন, আমার আয় ও মাতৃত্বকালীন সুবিধার ওপর নির্ভরশীল করছিল আমার পরিবার। এখন বেঁচে থাকার জন্য আমাদের ঋণ নিতে হবে। কিন্তু তা দ্রুত ফুরিয়ে যাবে।
আরেকজন, মর্জিনা, মে মাসে পাঁচ মাস অন্তঃসত্ত্বা থাকার সময় তাকেসহ আরও তিনজন গর্ভবতী শ্রমিককে ‘নিজেদের নিরাপত্তার জন্য’ বাড়িতে থাকার জন্য বলেন। জুনে তারা যখন কাজে ফিরেন তখন জানানো হয় তাদের চাকরি নেই। মর্জিনা আট বছর ধরে ওই কারখানায় আসছেন। কিন্তু কোনও ছাঁটাই সুবিধা পাননি। আইন অনুসারে তিনি নয় মাসের মজুরির সমান অর্থ পাওয়ার দাবিদার।
সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার জানান, আইন অনুসারে অন্তঃসত্ত্বা শ্রমিকদের ছাঁটাই বেআইনি হলেও আন্তর্জাতিক পোশাক ক্রেতারা অর্ডার বাতিল করার পর এই প্রবণতা বেড়েছে।
মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত অন্তঃসত্ত্বা শ্রমিকদের হয়ে নাজমা আক্তার ৫০টি মামলা দায়ের করেছেন। এসব ঘটনার কয়েকটি ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের আইডি কার্ড রেখে দিয়েছে এবং অব্যাহতি দিতে বাধ্য করেছে। অন্যরা নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন সুবিধা দিতে সোজাসাপটা অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

বাংলাদেশে ছাঁটাই হচ্ছেন অন্তঃসত্ত্বা গার্মেন্ট শ্রমিকরা: দ্য গার্ডিয়ান
নাজমা আক্তার মনে করেন, এমন ঘটনা আরও অনেক থাকতে পারে। কিন্তু যে হারে ছাঁটাই চলছে, গার্মেন্টস খাতে তাতে করে অনেক অন্তঃসত্ত্বা শ্রমিক মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, অনেক নারীই তাদের মাতৃত্বকালীন সুবিধা পাচ্ছেন না। কারখানাগুলো তাদের চাকরি ছেড়ে দিতে বলছে এবং অল্প কিছু দিনের মজুরি দিচ্ছে। সাধারণত অন্য সময় হলে আমরা বিক্ষোভ করতাম, কিন্তু এই মহামারির সময় নারীরা ভীত। তারা তাদের চাকরি হারাতে চায় না।
এই গার্মেন্ট নেতার মতে, মহামারিতে কাজের ধরন বদলে যাওয়ায় অনেক ব্র্যান্ড সামাজিক নিরীক্ষা ও কারখানা পরিদর্শন করছে না। ফলে কর্মক্ষেত্রে নিপীড়ন বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, নজরদারি না থাকায় কারখানা কর্তৃপক্ষ যা ইচ্ছা তা করতে পারে। আমরা লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা প্রত্যক্ষ করছি।
ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠকদেরও টার্গেট করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট বাবুল আক্তার। তিনি জানান, তার সংগঠন সক্রিয় রয়েছে এমন কারখানাগুলোর অন্তত এক-তৃতীয়াংশতে ট্রেড ইউনিয়নবিরোধী কর্মকাণ্ডের খবর পাওয়া গেছে।
বাবুল আক্তার বলেন, মহামারির আগে যখন কারখানাগুলো ইউনিয়নের বিরুদ্ধে যেত, আমরা সরাসরি ব্র্যান্ডগুলোর কাছে যেতে পারতাম এবং তারা সহযোগিতা করতো। কিন্তু এখন ব্র্যান্ডগুলো অর্ডার বাতিল করছে এবং সরবরাহকারীদের সঙ্গে দরকষাকষি করছে। এখন আর আমাদের যাওয়ার কোনও জায়গা নেই।
পেন স্টেট ইউনিভার্সিটির শ্রম ও কর্মসংস্থান সম্পর্কের অধ্যাপক ও বাংলাদেশি গার্মেন্ট খাত বিশেষজ্ঞ মার্ক সেবাস্টিয়ান অ্যানার সতর্ক করে বলছেন, গণহারে ছাঁটাই ও ইউনিয়নের কর্মকাণ্ড থামানোর ফলে শ্রমিকদের ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে পড়তে হতে পারে। এই ভয়াবহতার মধ্যে জোর করে খাটানোও থাকতে পারে।
তিনি বলেন, এটি একটি গভীর আন্তর্জাতিক সংকট, যা সরবরাহ চেইনের একেবারে নিচের সারিতে থাকা মানুষদের সীমাহীনভাবে প্রভাবিত করেছে। এর ব্যাপ্তি এমন যে তাদের বেঁচে থাকাও ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। আগামী কয়েক বছর ধরে এর প্রতিক্রিয়া আমরা দেখতে পাবো।

/এএ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন কলকাতায় উদযাপিত হলো ‘জাতীয় সংবিধান দিবস’
২০২৪ সালের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির তালিকায় বাংলাদেশ ১৬তম
বিএনপির প্রবাসী নেতাদের গ্রেফতারের অপেক্ষায় অ্যাসাইলাম শিকারিরা
সর্বশেষ খবর
সার্বিক অগ্রগতির পথে প্রধান বাধা বিএনপি: ওবায়দুল কাদের
সার্বিক অগ্রগতির পথে প্রধান বাধা বিএনপি: ওবায়দুল কাদের
ইউক্রেনে রুশ বিমান হামলায় দুই শিশুসহ নিহত ৮
ইউক্রেনে রুশ বিমান হামলায় দুই শিশুসহ নিহত ৮
হাসপাতালের বদলে শিশুরা ঘুমাচ্ছে স্বজনের কোলে
হাসপাতালের বদলে শিশুরা ঘুমাচ্ছে স্বজনের কোলে
পারটেক্সের বিপক্ষে হেরে রূপগঞ্জ টাইগার্সের অবনমন
পারটেক্সের বিপক্ষে হেরে রূপগঞ্জ টাইগার্সের অবনমন
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!