X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী: রক্ষকই যখন ভক্ষক!

বিদেশ ডেস্ক
০৬ এপ্রিল ২০১৬, ২২:৫২আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০১৬, ০৩:০৮

যুদ্ধবিধ্বস্ত সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে বেসামরিক জনগণকে রক্ষার জন্য শান্তিরক্ষীদের পাঠিয়েছিল জাতিসংঘ। তবে উল্টোটাই ঘটেছে। শতাধিক নারী, মেয়ে ও ছেলে অভিযোগ করেছেন সেনারা তাদের ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়ন করেছেন। ২০১৪ সালে জাতিসংঘের পাঠানোর বাহিনীর স্থানীয় ও বিদেশি সদস্যদের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠেছে। বুধবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর প্রকাশিত এক বিশেষ প্রতিবেদনে বিষয়গুলো বিস্তারিত ওঠে এসেছে।

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী: রক্ষকই যখন ভক্ষক!

বিভিন্ন খবরে বলা হয়েছে, জনগণকে রক্ষার পরিবর্তে ভক্ষকে পরিণত হয়েছেন সেনারা। এ সংকট বিষয়ে জাতিসংঘে যুক্তরাজ্যের উপ-প্রতিনিধি পিটার উইলসন এক বৈঠকে বলেছেন, যখন মানুষ সবচেয়ে অসহায় হয়ে পড়ে, নারী ও শিশুরা তাদের সব কিছু হারিয়ে ফেলে; তখনই তারা জাতিসংঘের কাছে নিরাপত্তা চায়। তারা মনে করে তাদের দুর্ভোগ শেষ হয়ে গেছে কিন্তু আসলে তা শুরু মাত্র।

তিন বছর আগে রাজনৈতিক সহিংসতা শুরু হলে বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে জাতিসংঘের সম্পৃক্ততা শুরু হয়। ২০১৩ সালের মার্চে মুসলিম বিদ্রোহীদের দ্বারা দেশটির প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোয়া বজিজে উৎখাত হলে ফ্রান্স ও আফ্রিকান দেশগুলো শান্তিরক্ষী পাঠায়। রাজনৈতিক পট পরিবর্তন শুরু হওয়ার আগে মুসলিম ও খ্রিস্টান মিলিশিয়াদের সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সহিংসতায় মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনে। কয়েক হাজার মানুষ বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়।

দেশটিতে মিশন স্থাপনের প্রায় দুই বছর পর এখন কয়েক হাজার মাইল দূরে সংস্থার সদর দফতরে বসে শান্তিরক্ষীদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে বৈঠক করছেন। মঙ্গলবারের ওই বৈঠকে জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শতাধিক নির্যাতিত অভিযোগ করেছেন তারা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী ও অন্যান্য সেনা সদস্য কর্তৃক যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। সংস্থার যৌন নিপীড়ন শাখার প্রধান এডমন্ড মুলেট বলেন, মর্মান্তিকভাবে নিপীড়নের শিকার হওয়াদের মধ্যে বেশি হচ্ছে শিশুরা। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, বেশ কয়েকজন নারী ও শিশু, যাদের মধ্যে পুরুষ ও মেয়ে রয়েছে তারা অসংখ্য অভিযোগ তুলেছেন।

মুলেট জানান, এসব অভিযোগ এখনও প্রাথমিক অবস্থায় রয়েছে। সংস্থার পক্ষ থেকে তা যাচাই এবং তদন্ত করা হবে পেশাদারিত্বের সঙ্গে। এসব অভিযোগ যদি কোনও নির্দিষ্ট ইউনিটের বিরুদ্ধে ওঠে তাহলে জাতিসংঘ তাদের স্থানান্তরের বিষয়ে চিন্তা করবে কিন্তু তাদের বিচার করা হবে না।

মুলেট বলেন, এটা শুধু সদস্য রাষ্ট্রগুলো করতে পারে বিশেষ করে যেসব দেশ সেনা পাঠাচ্ছে। সব সদস্যকে এটার দায়িত্ব নিতে হবে। এসব সদস্য রাষ্ট্রের দায়িত্ব জাতিসংঘে কাজের সময় যারা অপরাধ করেছে তাদের বিচার করে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা।

১৪ বছরের এক মেয়ে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে জানিয়েছে, গত ডিসেম্বরে একটি রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় এক সেনার সামনে সে পড়ে যায়। এরপর ওই সেনা তার কাপড় খুলে তা দিয়ে পিছমোড়া করে বেঁধে ফেলে। এরপর তাকে ধর্ষণ করা হয়।

জাতিসংঘ নিজেও ডিসেম্বরে শান্তিরক্ষীদের যৌন নিপীড়নের ওপর প্রতিবেদন তৈরি করে। শতাধিক পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনের সারমর্ম হতে পারে: আমরা ব্যর্থ হয়েছি। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, সর্বোপরি, জাতিসংঘের সাড়া ছিল বিচ্ছিন্ন ও আমলাতান্ত্রিক এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার লঙ্ঘনের মূল শর্ত পালনে ব্যর্থ হয়েছে।

আরও বলা হয়েছে, অপরাধীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ না দিয়ে অসহায় মানুষদের রক্ষায় তাদের পাঠানোর ফলে জাতিসংঘ ও শান্তিরক্ষা মিশনের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।

তবে এ বছর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে শান্তিরক্ষীদের বিরুদ্ধে আরও বেশি কিছু যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠেছে।

মার্চে প্রকাশিত জাতিসংঘের এক প্রতিবেদন অনুসারে, গত বছর ওঠা অভিযোগের মধ্যে ১৭টি অভিযোগের তদন্ত হয়েছে। এরমধ্যে ১০টি ভিত্তিহীন বলে প্রমাণিত হয়েছে। ১১ মার্চ নিরাপত্তা পরিষদও বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া এবং এ জন্য বেশ কিছু সুপারিশ দিয়েছে।

কিন্তু মার্চের শেষেই আরও অসংখ্য অভিযোগ সামনে আসে। তবে সিএনএন’র পক্ষ থেকে এসব অভিযোগের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। জাতিসংঘের পক্ষ থেকেও নিশ্চিত করা হয়নি এসব অভিযোগের ধরন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক শীর্ষ কর্মর্তা নতুন ওঠা এসব অভিযোগকে অসুস্থকর হিসেবে উল্লেখ করেছেন। মহাসচিব বান কি-মুন আখ্যায়িত করেছেন, ‘জঘন্য, চরিত্রহীন এবং গভীর উদ্বেগজনক অভিযোগ’ হিসেবে।

মঙ্গলবারের বৈঠকে জাতিসংঘের ফিল্ড সার্পোট আন্ডার সেক্রেটারি আতুল খারে আহ্বান জানিয়েছেন, যেসব দেশ এসব ভ্রষ্ট সেনাদের মিশনে পাঠাচ্ছে তাদেরকে সংশোধন করা এবং সংশ্লিষ্ট দেশের আইনে অপরাধী হিসেবে তাদের বিচার করা।

খারে জানান, জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফের মাধ্যমে নির্যাতিত ও ওই সমাজের উন্নয়নে বিশেষ সহযোগিতা নিশ্চিত করা হবে।

তিনি আশঙ্কা করেন, এ ধরনের অভিযোগের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।সূত্র: সিএনএন।

/এএ/

সম্পর্কিত
এমভি আবদুল্লাহকে মুক্ত করতে ‘অভিযানের প্রস্তুতি’ নিচ্ছে আন্তর্জাতিক নৌবাহিনী
তিউনিসিয়া উপকূলে নৌকাডুবিতে নিহত ২, নিখোঁজ আরও ৩৪
হোটেলে হামলাকারীদের ‘নিষ্ক্রিয়’ করার দাবি সোমালিয়ার
সর্বশেষ খবর
বেচাকেনা জমজমাট, কম দামে ভালো পাঞ্জাবিতে আগ্রহ ক্রেতাদের
বেচাকেনা জমজমাট, কম দামে ভালো পাঞ্জাবিতে আগ্রহ ক্রেতাদের
‘মাঝেমধ্যে ভাবি, আইপিএল কি আদৌ ক্রিকেট’
‘মাঝেমধ্যে ভাবি, আইপিএল কি আদৌ ক্রিকেট’
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
করোনার পর মাধ্যমিকে ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী কমেছে
করোনার পর মাধ্যমিকে ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী কমেছে
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়