ভারতের কেরালা রাজ্যের একটি মন্দিরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহতের সংখ্যা বেড়ে অন্তত ১০৬ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ঘটনায় কমপক্ষে সাড়ে তিনশো মানুষ আহত হয়েছেন। ভারতের স্থানীয় সময় দুপুর দুইটার মধ্যে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছাবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। হতাহতদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে থেকে পরিস্থিতি নজরদারি করছেন। বিরোধীদলীয় নেতা ভি এস অচ্ছুতানন্দনও নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ রেখে কোল্লাম পৌঁছেছেন। চলছে উদ্ধার তৎপরতা। ধ্বংসস্তূপের নিচে কেউ চাপা পড়ে আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালার রাজধানী থিরুভানান্তাপুরমের ৬০ কিলোমিটার দূরবর্তী কোল্লাম জেলার পারাভর পুত্তিঙ্গাল দেবী মন্দিরে রবিবার ভোরে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। একটি ধর্মীয় উৎসবের আতশবাজি থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার সূত্রপাত বলে পুলিস জানিয়েছে।
ওই মন্দিরে এক উত্সবকে ঘিরে ১০ থেকে ১৫ হাজার মানুষ জমায়েত হয়েছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মন্দিরে রাতভর বাজি ফাটছিল। হঠাৎ বাজির আগুনের ফুলকি গিয়ে পড়ে মন্দির চত্বরে জমা করে রাখা আতশবাজির স্তূপে। মুহূর্তের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে গোটা মন্দির ও মন্দির চত্বরে। আতঙ্কিত মানুষেরা পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেন। কিন্তু ততোক্ষণে আগুন ভয়াবহ আকার ধারণ করে। বাজির বিস্ফোরণের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে মন্দিরের ছাদের একাংশ ভেঙে পড়ে।
বিপর্যয় মোকাবেলা বাহিনী, পুলিশ এবং দমকল দমকল কর্মীরা কয়েক ঘন্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। বিমানবাহিনীর চারটি হেলিকপ্টারও উদ্ধারকাজে যোগ দেয়। ধ্বংসসূপের নীচে কেউ আটকে আছেন কিনা তা খতিয়ে দেখছে উদ্ধারকারী দল।
অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়। হুড়োহুড়িতে পদপিষ্ট হয়ে মারা যান আরও বেশ কিছু মানুষ। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, অগ্নিকাণ্ডে এ পর্যন্ত অন্তত ১০৬ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় কমপক্ষে সাড়ে তিনশো মানুষ আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৫৬ জনকে শনাক্ত করা গেছে।
আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে পারাভর এবং থিরুভানান্তাপুরম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই সবচেয়ে বেশি আহত ব্যক্তি চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কেরালার স্বাস্থ্যমন্ত্রি ভি এস শিভকুমার বলেন, ‘জেলার কালেক্টর পুলিস কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের ব্যবস্থা করছেন, এরপরই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কেরালার মুখ্যমন্ত্রী উম্মেন চণ্ডি দিনের অন্যান্য কার্যক্রম স্থগিত রেখেছেন। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে তিনি একটি তদন্তের আদেশ দেবেন। তিনি হতাহতদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। প্রয়োজনীয় সমস্ত রকম ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে কোল্লামে মন্ত্রীসভার জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্থানীয় সময় ২টা নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছাবেন বলে জানানো হয়েছে। এক টুইটার বার্তায় তিনি বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে পি নাড্ডাকে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতির দিকে নজর রাখতে বলেছি।’ তিনি আরও জানিয়েছেন, আশঙ্কাজনকদের উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারের সাহায্যে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিশেশজ্ঞ ডাক্তারদের একটি দল সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে যাবেন বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে ২ লাখ রুপি এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য ৫০ হাজার রুপি করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বলে সরকারের এক মুখপাত্র বার্তা সংস্থা এএনআই-কে জানিয়েছেন।
এর আগে রাজ্যের গৃহমন্ত্রী রমেশ চেন্নিলাল জানিয়েছেন, রবিবার ভোর সাড়ে তিনটার দিকে ওই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তিনি জানান, হতাহতদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে এবং ওই ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে আতশবাজি সরবরাহকারী সুরেন্দ্রনের বাসায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ তবে তাকে আটক করা সম্ভব হয়নি বলে পুলিস জানিয়েছে। সূত্র: দ্য হিন্দু, টাইমস অব ইন্ডিয়া, হাফিংটন পোস্ট।
/এসএ/ বিএ/