X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশে টিকার কাভারেজ ভালো: ইউনিসেফ

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২০ এপ্রিল ২০২৩, ১৫:৫৮আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২৩, ১৫:৫৮

দেশে টিকার কার্যকর কাভারেজ বেশ ভালো অবস্থায় রয়েছে। এখানকার প্রায় ৮৪ শতাংশ শিশু ১২ মাস বয়সের মধ্যেই টিকা গ্রহণ করছে। কার্যকরী কাভারেজ বলতে জাতীয় টিকাদান সূচি অনুসারে— একটি শিশুর ১২ মাস বয়স পর্যন্ত যেসব টিকা পাওয়ার কথা, সেগুলো পাওয়াকে বোঝায়।

বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।  টিকাদান বিষয়ে আজ প্রকাশিত এক নতুন প্রতিবেদনে ইউনিসেফ সতর্ক করে বলেছে, সমীক্ষা চালানো ৫৫টি দেশের মধ্যে ৫২টি দেশে কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালে শিশুদের জন্য টিকার গুরুত্ব সম্পর্কে জনসাধারণের ধারণা হ্রাস পেয়েছে।

ইউনিসেফ জানায়, ২০২০ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশে মহামারির কারণে লকডাউনে শুরু হলে প্রাথমিক অবস্থায় স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলোর ওপর প্রভাব পড়েছিল, যার ফলে পরবর্তী মাসগুলোতে টিকার আওতা ৫০ শতাংশের নিচে নেমে আসে। তবে ইউনিসেফের সহায়তায় বাংলাদেশ সরকার টিকাদান কমার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ২০২০ সালের অক্টোবর-নাগাদ মাসিক টিকাদানের হার কোভিড-১৯ পূর্ববর্তী সময়ের মাত্রা ছাড়িয়ে যায়।

ইউনিসেফের নতুন প্রতিবেদন তুলে ধরে যে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চাপে থাকার কারণে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হওয়ায় এবং দুষ্প্রাপ্য সম্পদের বিচ্যুতি, সংঘাত ও ভঙ্গুরতা এবং আত্মবিশ্বাস হ্রাসের কারণে বিশ্বে তিন বছরে ৬ কোটি ৭০ লাখ শিশু টিকার এক বা একাধিক ডোজ পায়নি।

‘দি স্টেট অব দি ওয়ার্ল্ডস চিলড্রেন ২০২৩: ফর এভরি চাইল্ড, ভ্যাকসিনেশন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, মহামারি শুরু হওয়ার পর কোরিয়া প্রজাতন্ত্র, পাপুয়া নিউ গিনি, ঘানা, সেনেগাল ও জাপানে শিশুদের জন্য টিকার গুরুত্ব সম্পর্কে মানুষের ধারণা এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি কমেছে। ‘দ্য ভ্যাকসিন কনফিডেন্স প্রজেক্টে’-এর সংগ্রহ করা এবং ইউনিসেফ প্রকাশিত নতুন উপাত্ত অনুসারে, সমীক্ষা চালানো দেশগুলোর মধ্যে শুধু চীন, ভারত ও মেক্সিকোতেই টিকার গুরুত্ব সম্পর্কিত ধারণা আগের মতোই অটল আছে, বা ক্ষেত্রবিশেষে বেড়েছে। মহামারি শুরু হওয়ার পর বেশিরভাগ দেশে ৩৫ বছরের কম বয়সী মানুষ ও নারীরা শিশুদের জন্য টিকা সম্পর্কে তাদের আস্থা কমার কথা বেশি জানিয়েছে।

টিকার ওপর আস্থা সাধারণত ক্ষণস্থায়ী ও সময় নির্দিষ্ট। সমীক্ষার ফল দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতার ইঙ্গিত দেয় কিনা, তা নির্ধারণ করতে আরও উপাত্ত সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণের প্রয়োজন হবে। আস্থা কমা সত্ত্বেও টিকার জন্য সামগ্রিক সমর্থন তুলনামূলকভাবে বেশ জোরালোই রয়েছে। সমীক্ষা চালানো ৫৫টি দেশের প্রায় অর্ধেকে ৮০ শতাংশেরও বেশি উত্তরদাতা টিকাকে শিশুদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেছেন।

তবে প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে যে, বিভিন্ন কারণে টিকা নিয়ে দ্বিধা বাড়ার সংকেত দেয়। এই কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে— মহামারিতে সাড়া দেওয়ার বিষয়ে অনিশ্চয়তা, ক্রমবর্ধমান বিভ্রান্তিকর তথ্য, বিশেষজ্ঞদের প্রতি আস্থা হ্রাস ও রাজনৈতিক মেরুকরণ।

ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল বলেন, ‘মহামারির চূড়ান্ত অবস্থায় বিজ্ঞানীরা দ্রুত টিকা তৈরি করেছিলেন, যা অগণিত জীবন বাঁচায়। কিন্তু এই ঐতিহাসিক অর্জন সত্ত্বেও, সব ধরনের টিকা নিয়ে  ভয় ও বিভ্রান্তি ভাইরাসের মতোই ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে। এই উপাত্ত একটি উদ্বেগজনক সতর্কতা সংকেত। আমরা নিয়মিত টিকাদানের প্রতি মানুষের অনাস্থাকে মহামারির মারাত্মক পরিণতির অংশ হতে দিতে পারি না। অন্যথায়, মৃত্যুর পরবর্তী ঢেউয়ে যুক্ত হতে পারে হাম, ডিপথেরিয়া বা অন্যান্য প্রতিরোধযোগ্য রোগে আক্রান্ত শিশুরা।’

বাংলাদেশেও কিছু ভৌগোলিক ও আর্থ-সামাজিক বৈষম্য রয়ে গেছে। অনেক শিশু টিকার নির্ধারিত সব ডোজ পায় না, বা সঠিক সময়ে সঠিক ডোজ পায় না। জাতীয় পর্যায়ে টিকার কাভারেজের তুলনায় দুর্গম এলাকা ও শহরের বস্তিগুলোতে কভারেজ কম রয়ে গেছে।

বাংলাদেশে 'জিরো-ডোজ' শিশুর সংখ্যা ৩০ হাজার বা ১ বছরের কম বয়সী শিশুদের এক শতাংশেরও কম। যদিও এটি দেশের টিকাদান কর্মসূচির একটি উল্লেখযোগ্য অর্জনকে তুলে ধরে, তবে বিচ্ছিন্নভাবে টিকা না পাওয়া শিশুদের বিষয়টিও এতে উঠে আসে।

বাংলাদেশের টিকাদান কর্মসূচির জন্য শৈশবকালীন সব টিকা সংগ্রহ ও সরবরাহ করে ইউনিসেফ। ২০২২ সালে ইউনিসেফ ৮ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের ১৭ কোটি ৩০ লাখ শৈশবকালীন টিকার ডোজ সরবরাহ করেছে বাংলাদেশে। এই টিকাগুলো কিনতে অর্থের যোগান দিয়েছে 'ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স, গ্যাভি' ও বাংলাদেশ সরকার।

বাংলাদেশে ইউনিসেফ প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, ‘টেকসই রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি এবং একটি সুপ্রশিক্ষিত ও অনুপ্রাণিত স্বাস্থ্য কর্মীবাহিনী থাকলে কী করা সম্ভব, বাংলাদেশে শিশু টিকাদান কর্মসূচির সাফল্য তারই প্রমাণ। শৈশবকালীন টিকাদানের ক্ষেত্রে নিজস্ব অর্থায়নের দিকে এগোতে থাকা দেশটিকে ইউনিসেফের দেওয়া সহায়তা আগামী বছরগুলোতেও অব্যাহত থাকবে।’

/এসও/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
চিকুনগুনিয়ার প্রথম টিকার অনুমোদন
ডেঙ্গু টিকার আরও ট্রায়াল করতে চায় আইসিডিডিআর,বি
৫১ বছরে টিকা দেওয়া হয়েছে ৯৯ কোটি শিশুকে
সর্বশেষ খবর
গরমে বদলে যাচ্ছে জীবনযাপন, মার্কেটে ভিড় বাড়ছে সন্ধ্যায়
গরমে বদলে যাচ্ছে জীবনযাপন, মার্কেটে ভিড় বাড়ছে সন্ধ্যায়
রাফাহতে অভিযানের পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছে ইসরায়েল
রাফাহতে অভিযানের পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছে ইসরায়েল
সুন্দরবনে আগুন
সুন্দরবনে আগুন
এখনও অচল লাইন, সব ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়
এখনও অচল লাইন, সব ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়
সর্বাধিক পঠিত
মিল্টনের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের এখন কী হবে
মিল্টনের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের এখন কী হবে
বিসিএসে সফলতায় এগিয়ে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা
বিসিএসে সফলতায় এগিয়ে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
চট্টগ্রামে যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
চট্টগ্রামে যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
লিথুয়ানিয়ার ড্রোন হামলা ব্যর্থ হয়েছে: বেলারুশ
লিথুয়ানিয়ার ড্রোন হামলা ব্যর্থ হয়েছে: বেলারুশ