বৈশ্বিক স্বাস্থ্য খাতের অগ্রণী ব্যক্তিদের অংশগ্রহণে ঢাকায় শুরু হয়েছে এনআইএইচআর গ্লোবাল হেলথ সেন্টারের সম্মেলন। সোমবার (৪ মার্চ) শুরু হওয়া সম্মেলন চলবে চারদিন।
এনআইএইচআর গ্লোবাল হেলথ সেন্টার সিম্পোজিয়াম’ শীর্ষক এই সম্মেলনের আয়োজক আইসিডিডিআর,বি। এতে সহযোগিতা করছে যুক্তরাজ্যের জনস্বাস্থ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর হেলথ অ্যান্ড কেয়ার রিসার্চ (এনআইএইচআর)। বিশ্বস্বাস্থ্যের গুরুত্বপূর্ণ এই সম্মেলনে পশ্চিম আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা, ভারত-নেপাল, পাকিস্তান-আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশে-ভারত-ইন্দোনেশিয়া ভিত্তিক পাঁচটি গ্লোবাল হেলথ সেন্টারের ৬০ জন নেতৃস্থানীয় বিশেষজ্ঞ, নীতি নির্ধারক এবং স্বাস্থ্যখাতের পেশাদার যোগ দিয়েছেন।
আয়োজকরা জানান, এনআইএইচআর-এর গ্লোবাল হেলথ রিসার্চ সেন্টারগুলো, যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য ও সমাজসেবা বিভাগ (ডিএইচএসসি) ও সংশ্লিষ্ট অন্য অংশীদারদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানো ও অভিজ্ঞতা বিনিময় এই সম্মেলনের অন্যতম উদ্দেশ্য। পাশাপাশি এতে স্বাস্থ্যের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হবে যেখান থেকে অগ্রণী অন্তর্দৃষ্টি উঠে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। আলোচনার কেন্দ্রে থাকছে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাধি’র মতো অসংক্রামক রোগ (এনসিডি)। এসব রোগ মোকাবিলায় আরও কার্যকর লড়াই কীভাবে করা যায় তা আলোচনায় গুরুত্ব পাবে। এছাড়াও পরিবেশগত পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় করণীয় নিয়ে আলোচনা হবে। এই সম্মেলন ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলের স্বাস্থ্য পেশাদারদের মধ্যে নিবিড় যোগাযোগ তৈরিতেও ভূমিকা রাখবে।
উদ্বোধনী দিনে গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এনআইএইচআর গ্লোবাল হেলথ রিসার্চ সেন্টারের সমন্বিত উদ্যোগগুলো তুলে ধরা হয়। যেমন- পশ্চিম আফ্রিকার সেন্টার বুর্কিনা ফাসো, ঘানা এবং নাইজারে গবেষণা ও নীতি উন্নয়নের মাধ্যমে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে উন্নতির দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। লাতিন আমেরিকায় গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য পরিস্থিতির কমিউনিটি ভিত্তিক ব্যবস্থাপনার ওপর। এজন্য উদ্ভাবনী গবেষণা ও কমিউনিটি সম্পৃক্ততার কৌশল কাজে লাগানোয় জোর দেওয়া হচ্ছে। আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের সেন্টারগুলো হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাধি থেকে অকাল মৃত্যু হ্রাস করার লক্ষ্যে কাজ করছে। অপরদিকে, ভারত-নেপাল সেন্টার কাজ করছে একাধিক দীর্ঘমেয়াদী রোগ পরিস্থিতির ব্যবস্থাপনা নিয়ে। আর বাংলাদেশ সেন্টারের লক্ষ্য ক্রমবর্ধমান অসংক্রামক রোগ এবং পরিবেশগত পরিবর্তনের দ্বৈত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা, বিশেষ করে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্যের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলছে তাতে নজর দেওয়া।
আইসিডিডিআর,বি’র সায়েন্টিস্ট এবং এনআইএইচআর গ্লোবাল রিসার্চ সেন্টার ফর ননকমিউনিকেবল ডিজিজেস অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল চেঞ্জ’র এনআইএইচআর গ্লোবাল রিসার্চ সেন্টার ফর ননকমিউনিকেবল ডিজিজেস অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল চেঞ্জ’র কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. আলিয়া নাহিদ বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় বসবাসকারীদের মধ্যে হৃদরোগ, ডায়াবেটিক এবং দীর্ঘ মেয়াদি কিডনি রোগের মতো অসংক্রামক রোগের প্রাথমিক যত্ন জোরদার করার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে এনআইএইচআর গ্লোবাল রিসার্চ সেন্টার ফর ননকমিউনিকেবল ডিজিজেস অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল চেঞ্জের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো বাংলাদেশে উচ্চমানের গবেষণা দল গড়ে তোলা যাতে তারা ভবিষ্যতে আরও অনেক মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য বিভিন্ন সমাধান খুঁজে বের করতে পারেন।”
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন আইসিডিডিআর,বি-এর নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ। তিনি এ ধরনের সম্মেলন আয়োজনের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে বলেন, “আমরা বিশ্বস্বাস্থ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁকে অবস্থান করছি, যেখানে সহযোগিতা এবং উদ্ভাবনের সম্মিলনই পারে আমাদের সময়ের সবচেয়ে জরুরি স্বাস্থ্যচ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে। এই সম্মেলন বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য সমতা ও গবেষণায় উৎকর্ষ অর্জনে এগিয়ে যাওয়ার পথে আমাদের সম্মিলিত অঙ্গীকারের একটি প্রমাণ। আমরা একসাথে উদ্ভাবনী সমাধানের পথ প্রশস্ত করছি যা বিশ্বস্বাস্থ্যের ভবিষ্যৎ গড়বে।”
গ্লোবাল হেলথ রিসার্চের জন্য এনআইএইচআর প্রোগ্রাম ডিরেক্টর অধ্যাপক কারা হ্যানসন বলেন, “গ্লোবাল হেলথ রিসার্চ সেন্টারগুলোতে এনআইএইচআর-এর বিনিয়োগ একটি গুরুত্বপূর্ণ হস্তক্ষেপ। এটি নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে এনসিডির ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার বিষয়ে নতুন প্রমাণ তৈরি করতে গবেষকদের সাহায্য করছে। এছাড়াও, এটি এই ধরনের গবেষণা পরিচালনার জন্য টেকসই ক্ষমতা তৈরি করতেও সাহায্য করছে।”
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি সম্মেলন আয়োজনের জন্য আইসিডিডিআর,বি ও এনআইএইচআর-কে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর প্রভাব সম্পর্কিত গবেষণা চালানোর জন্য আমি বাংলাদেশের চেয়ে ভালো দেশের কথা ভাবতে পারি না। আমরা মনে করি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে আমরা গ্রাউন্ড জিরো। এর ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বোঝার ক্ষেত্রে এটিই সম্ভবত সবচেয়ে সমৃদ্ধ গবেষণাগার।”
তিনি আরও বলেন, দুর্ভাগ্যবশত, আমাদের জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনায় স্বাস্থ্যক্ষেত্র বিশেষত জনস্বাস্থ্য অন্তর্ভুক্ত নয়। আমরা এটিকে অন্তর্ভুক্ত করতে চাই এবং এর জন্য আমাদের গবেষণা করা প্রয়োজন। ”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনের অ্যাক্টিং হাইকমিশনার ম্যাট ক্যানেল। অতিথিরা বক্তব্যে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যের অগ্রগতিতে এই ধরনের সম্মেলনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার ওপর জোর দেন।
ম্যাট ক্যানেল বলেন, “আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, যুক্তরাজ্যের অর্থায়নে পরিচালিত গ্লোবাল হেলথ রিসার্চ, বাংলাদেশ এবং অন্যান্য দেশে অসংক্রামক রোগ সংক্রান্ত গবেষণায় বিনিয়োগ করছে। এটি হৃদরোগ, দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসতন্ত্র জনিত রোগ, ডায়াবেটিস, মানসিক ব্যাধি এবং অন্যান্য অসংক্রামক রোগ মোকাবেলা করতে সহায়তা করবে।”
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এনআইএইচআর গ্লোবাল হেলথ রিসার্চ সেন্টারের প্রতিনিধি, বাংলাদেশে ডিএইচএসসি এবং ব্রিটিশ হাইকমিশনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, আইসিডিডিআর,বি-র বিজ্ঞানীসহ গবেষণায় জড়িত সহযোগী প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাবিদরা অংশগ্রহণ করেন।