‘সব শিশু টিকা নেবে, স্বাস্থ্যঝুঁকি কমে যাবে’ প্রতিপাদ্য নিয়ে ঢাকার আটটি কেন্দ্রের প্রতিটিতে প্রতিদিন পাঁচ হাজার করে প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থীকে টিকাদানের পরিকল্পনা করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার-বায়োএনটেকের করোনা টিকা পাবে ১২-১৭ বছর বয়সীরা। সোমবার (১ নভেম্বর) সকাল ১০টায় রাজধানীর মতিঝিলে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে এই কার্যক্রমের উদ্বোধনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এসব তথ্য জানিয়েছেন। আগামীকাল থেকে রাজধানীর অন্য কেন্দ্রগুলোতে টিকা দেওয়া হবে।
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ছাড়া বাকি সাতটি কেন্দ্র হলো– হার্ডকো ইন্টারন্যাশনাল স্কুল (ভাটারা), সাউথ পয়েন্ট ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ (মালিবাগ), চিটাগং গ্রামার স্কুল (বনানী), কাকলী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ (ধানমন্ডি), ঢাকা কমার্স কলেজ (মিরপুর চিড়িয়াখানা রোড), স্কলাস্টিকা (মিরপুর-১৩) এবং সাউথ ব্রিজ স্কুল (উত্তরা)।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমরা স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকাদান কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। ইতোমধ্যে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের টিকাদান কার্যক্রম প্রায় সমাপ্ত হয়ে আসছে। ১২-১৭ বছর বয়সী স্কুল শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার চাহিদা ছিল অভিভাবকদের। শিক্ষার্থীদেরও আগ্রহ ছিল টিকা নেওয়ার। যুক্তরাষ্ট্র সরকার নিজেদের দেশে শিশুদের যে টিকা দিচ্ছে সেই টিকা তারা বাংলাদেশকে দিয়েছে। আমরা সেটি শিক্ষার্থীদের দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। এটি কিছুদিন আগে প্রাথমিকভাবে প্রয়োগ করে আমরা খুবই ভালো ফল পেয়েছি। কারও মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি এবং সবাই সুস্থ আছে। তাই ঢাকায় প্রাথমিক পর্যায়ে আটটি স্কুলে টিকা দিচ্ছি। আশা করি, আমরা সফল হবো।’
মানিকগঞ্জের কয়েকটি স্কুলের ১২০ জন শিক্ষার্থীকে গত ১৪ অক্টোবর পরীক্ষামূলকভাবে ফাইজারের টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের টিকার কোনও অভাব হবে না। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, দেশে যার যার প্রয়োজন সবার জন্য টিকার ব্যবস্থা করা হবে। আমরা সেই অনুপ্রেরণায় এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের হাতে ফাইজারের অনেক টিকা রয়েছে। আমরা ৯৬ লাখ টিকা পেয়েছি এবং হাতে আছে প্রায় ৮২ লাখ। আমাদের প্রতিশ্রুতির আরও ৯২ লাখ আছে। ১২-১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকা দিতে প্রয়োজন ৩ কোটি টিকা। ইতোমধ্যে ২ কোটি টিকা নিশ্চিত করা আছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরও বেশি পরিমাণে ফাইজার ও মডার্নার টিকা দেবে আমাদের।’
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছেন, দেশে ১২-১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের করোনা প্রতিরোধক টিকাদান কার্যক্রমে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তিনি বলেছেন, ‘আগামী ১৪ নভেম্বর থেকে শুরু হবে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা। তাই প্রথমে পরীক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া হবে। তবে বিভিন্ন স্কুলের অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীরাও টিকা পাবে। আমরা স্কুল ভিত্তিক টিকা দিচ্ছি। সব স্কুল থেকে এই আটটি কেন্দ্রে আসবে ছাত্র-ছাত্রীরা।’
এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরুর আগে সব পরীক্ষার্থীকে টিকা দেওয়া সম্ভব হবে কিনা নিশ্চিত নন ডা. দীপু মনি, ‘সব পরীক্ষার্থীকে টিকা দিতে পারবো সেই নিশ্চয়তা আমরা দিতে পারছি না। তবে আমরা চেষ্টা করবো। ইংরেজি মাধ্যম ও মাদ্রাসাসহ সব শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় আনা হবে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বললেন একই কথা, ‘এখনই বলতে পারছি না। তবে আমাদের চেষ্টা থাকবে। যাদের আগে দেওয়া দরকার তারা অগ্রাধিকার পাবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তালিকা অনুযায়ী টিকা দেওয়া হচ্ছে। ১৪ নভেম্বরের মধ্যে অনেকেই পেয়ে যাবে। তবে সব পরীক্ষার্থী পাবে কিনা এখনই বলতে পারছি না।’
এদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, টিকা কার্যক্রম চলা আট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শ্রেণি পাঠদান বন্ধ থাকবে।