চট্টগ্রামে দুই ব্যক্তির নমুনায় ওমিক্রনের সাম্প্রতিকতম ধরন ‘বিএ২’ বা ‘স্টেলথ ওমিক্রন’ শনাক্ত হয়েছে। বন্দরনগরীতে এই প্রথম ‘বিএ২’ শনাক্তের খবর পাওয়া গেলো। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল এবং মা ও শিশু হাসপাতালের রোগীদের জিনমিক সার্ভেইল্যান্স প্রজেক্টের আওতায় জিনোম সিকোয়েন্সের মাধ্যমে এই তথ্য জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন কনসালট্যান্ট ও করোনা ইউনিটের চিকিৎসক ডা. এইচ এম হামিদুল্লাহ মেহেদী এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক ড. আদনান মান্নান বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য জানান।
গবেষকরা জানান, সম্প্রতি চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল এবং আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে ২০২১ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর এবং ২০২২-এর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের কোভিড পজিটিভ রোগীদের জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে দেখা গেছে, ২৫ ডিসেম্বরের পর থেকে আসা রোগীদের ৭৫ ভাগই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। ৩০ জন রোগীর নমুনা থেকে করা জিনোম সিকোয়েন্সে দেখা গেছে, ১ নভেম্বর থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত আগত সব রোগীই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত ছিল। এর মধ্যে নবজাতক হতে ৮০ বছরের বৃদ্ধ রোগীও ছিল। কিন্তু ২৫ ডিসেম্বরের পরের ৭৫ ভাগ রোগী ওমিক্রনে আক্রান্ত।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল দুই জন রোগীর শরীরে ওমিক্রনের সাম্প্রতিকতম ধরন ‘বিএ২’ বা ‘স্টেলথ ওমিক্রন’। ওমিক্রনের এই ধরনটি জানুয়ারির শুরু থেকেই কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস ও হিউস্টন, ভারত, চীন ও ওমানেও এটি পাওয়া গেছে। তবে এই নতুন ভ্যারিয়েন্টটি খুব বেশি বিপদজ্জনক নয় বলে জানান গবেষকেরা।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) গবেষকরা আগে জানিয়েছিলেন, ‘বিএ২’-এর স্পাইক প্রোটিনে বেশ কিছু নতুন পরিবর্তন আছে, যা এটির শনাক্তকরণকে কঠিন করে তুলতে পারে।
গবেষকরা জানান, ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে, গলা ব্যথা ও গলার স্বর বিকৃত হয়ে যাওয়া, ৯০ ভাগ রোগীর মধ্যেই এই লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়েছে। ৮৫ ভাগের মধ্যে শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা ও মাথা ব্যথা এবং ৮০ ভাগের জ্বর পরিলক্ষিত হয়েছে। ওমিক্রনে আক্রান্ত সবার বয়স ২১ বছরের উর্ধ্বে, শিশু ও কিশোরদের মধ্যে এখনও এটি শনাক্ত হয়নি।
চট্টগ্রামের ওমিক্রনে আক্রান্তদের নিয়ে অবশ্য এতো অল্প নমুনার বিশ্লেষণে কোনও উপসংহারে পৌঁছানো সম্ভব নয় বলে মনে করেন ডা. হামিদুল্লাহ মেহেদী। তিনি বলেন, আরও অন্তত কয়েকশ’ জিনোম সিকোয়েন্স করলে এর চরিত্র নিয়ে ধারণা পাওয়া যাবে।’
এই প্রকল্পে সহ-প্রকল্প পরিচালক হিসেবে আছেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র মেডিসিন কনসালট্যান্ট ডা. আব্দুর রব মাসুম, মা ও শিশু হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সঞ্জয় বিশ্বাস এবং ডা. নাহিদ সুলতানা, আইসিডিডিআরবি’র ভাইরোলজি বিভাগের বিজ্ঞানী ড. মুস্তাফিজুর রহমান এবং ড. মোহাম্মদ এনায়েত হোসেন। সহায়তায় ও পৃষ্ঠপোষকতায় আছে কানাডার ডালহৌসি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি অব ইমার্জিং ইনফেকশাস ডিজিজ এবং তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণের দায়িত্বে আছেন অধ্যাপক ডেভিড কেলভিন এবং আব্দুল্লাহ মাহমুদ আল রাফাত। সহকারী গবেষক হিসেবে আছেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ডা. রাজদ্বীপ বিশ্বাস, ডা. মিনহাজুল হক এবং মা ও শিশু হাসপাতালের ডা. ফাহিম হাসান রেজা। সিকোয়েন্সিং-এর সামগ্রিক তত্ত্বাবধানে আছেন আইসিডিডিআরবি-এর ভাইরোলজি ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানীরা।
