X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

হাসি-কান্নার ভেলায় ‍ফুটবলের ৫০ বছর

তানজীম আহমেদ
০৬ জুলাই ২০২১, ০০:২৫আপডেট : ০৬ জুলাই ২০২১, ০০:২৫

একটি ট্রফির জন্য দেশের ফুটবলে হাহাকার! সেই ২০০৩ সালে সাফ ফুটবলে ট্রফি জিতেছে বাংলাদেশ, এরপর থেকে ট্রফি যেন ‘সোনার হরিণ’! সাফ কিংবা বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ অথবা হালের নেপালে তিন জাতির ফুটবল প্রতিযোগিতা- কোনোটিতেই ট্রফি ছুঁতে পারেনি লাল-সবুজের সেনানিরা। শুধু কী তাই! স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে পেছনে ফিরে তাকালে দেখা যাবে হাতে গোনা চারটি সাফল্য ফুটবলে বড় অর্জন হিসেবে সঙ্গী।

স্বাধীনতার আগ থেকেই ফুটবল ছিল ভীষণ জনপ্রিয়। স্বাধীন হওয়ার পর ফুটবলে জনপ্রিয়তা যেন নতুন রূপে মাত্রা পায়। ৭০, ৮০ ও ৯০ দশকের ফুটবল যেন ছিল এই দেশের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম। কাজী সালাউদ্দিন থেকে শুরু করে চুন্নু-আসলাম-বাদল রায়সহ তারকার অভাব ছিল না। ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে একেকজন ছিলেন ভাস্বর। সেই সময় বিভিন্ন প্রতিযোগিতা কিংবা আন্তর্জাতিক ম্যাচে ইরান, থাইল্যান্ড কিংবা ভারতের সঙ্গে সমান তালে খেলার চেষ্টা করতো বাংলাদেশ। অনেক সময় সমানে সমান লড়াই হতো। কিন্তু পরিতাপের বিষয় সেই সময় যাদের খেলা দেখতে দর্শকরা মাঠে যেত, ঠিক তারাই কিনা থেকেছেন আন্তর্জাতিক ট্রফিশূন্য! পরবর্তীতে কোচ কিংবা কর্মকর্তা হয়েও অতৃপ্তি ঘোচাতে পারেননি কেউ।

’৮০ দশক থেকে সাফ গেমসের (বর্তমানে এসএ গেমস) পাশাপাশি সাফ ফুটবলের প্রচলন হয়েছে। সাফ তো ‘দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপ’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। কিন্তু সে সময় একাধিক প্রতিযোগিতার ফাইনালে খেললেও ট্রফি জেতা আর হয়নি। এছাড়া বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব খেললেও সাফল্য সেভাবে ধরা দেয়নি।

সেই আফসোস এখনও অনেকের মনে বিদ্যমান। তাদের সেই কষ্ট অবশেষে ঘুচিয়েছেন আরেক কিংবদন্তি প্রয়াত মোনেম মুন্নার নেতৃত্বের দল। ১৯৯৫ সালে মিয়ানমারে প্রথম চার জাতি ফুটবলের শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ। স্বাধীন বাংলাদেশে ফুটবলে প্রথম কোনও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় শিরোপা জয়।

মোনেম মুন্নার নেতৃত্বে একদল বীর সেনানি অসাধারণ খেলে স্বাগিতক মিয়ানমারকে হারিয়ে ট্রফি জিতেছিল। অথচ গ্রুপ পর্বে স্বাগতিক দলটির কাছেই হারতে হয়েছিল!

জার্মান কোচ অটো ফিস্টারের কোচিংয়ে মিয়ানমারে প্রথম আন্তর্জাতিক ফুটবলে ট্রফি জয়ের স্বাদ পেয়েছিল বাংলাদেশ। এরপরের ট্রফিও এসেছে সব বিদেশি কোচের অধীনেই।

এরপর ১৯৯৯ সালে কাঠমান্ডুতে সাফ গেমস ফুটবলে সোনা জিতে সবাইকে চমকে দেন আলফাজ-জুয়েল রানারা। সেখানেও ইরাকি কোচ সামির শাকিরের অবদান।

সেই ধারা অব্যাহত ছিল ২০০৩ সালেও। অস্ট্রিয়ান কোচ জর্জ কোটানের অধীনে প্রথমবারের মতো ‘দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপ’ বলে অভিহিত সাফ ফুটবলের শিরোপা জেতে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। ঢাকার মাঠে কনকনে ঠান্ডার মধ্যে স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শকের উপস্থিতিতে সেই ট্রফি জয়ের পর আর সাফ ফুটবলে সাফল্য আসেনি। শুধু ২০১০ সালে এসএ গেমসে ঢাকার মাঠে এমিলি-ওয়ালিরা সোনা জিতেছিল। বর্তমানে জাতীয় দল অনেক সুযোগ-সুবিধা পেলেও সেভাবে সাফল্য আনতে পারছে না। সাফল্যের ঘর শূন্যই রয়ে গেছে। বরং এই সময়ে হারতে হয়েছে ভুটানের কাছে!

জাতীয় দলের পাশাপাশি আমাদের ক্লাব ফুটবলে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং অন্য মাত্রা যোগ করেছে। এখনও দুই দলের খেলা হলে অনেকেই নস্টালজিক হয়ে পড়েন। যদিও ফুটবলের সেই ক্রেজ আর নেই। মাঠে দর্শক হয় না সেভাবে। তারপরও স্বাধীন বাংলাদেশের ক্লাব ফুটবলে দুটি দলের নাম আলাদা করেই লেখা থাকবে। ক্লাব ফুটবলে আবাহনীর পাশাপাশি মোহামেডানও দেশে ও দেশের বাইরে সম্মান কুড়িয়ে এনেছে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামালের হাতে গড়া আবাহনী দেশের ফুটবলে অন্যরকম আবহ তৈরি করেছিল। আইরিশ কোচ উইলিয়াম বিল হার্টের অধীনে প্রথম বাংলাদেশের কোনও ক্লাব আধুনিক ফুটবল খেলতে শুরু করে। এরপর ক্লাবটি ধীরে ধীরে সমর্থকদের মনের কোঠায় জায়গা করে নেয়।

৮০’র দশকের শেষ দিকে ভারতে নাগজি কাপে আবাহনী শিরোপা জিতে ঢাকায় এসেছিল। সেটাই দেশের কোনও ক্লাবের বাইরে প্রথম ট্রফি জয়। দর্শকদের উন্মাদনা তখন ছিল দেখার মতো। এছাড়া বিটিসি কাপ, চার্মস কাপ ও বরদুলই ট্রফি জিতে নিজেদের ট্রফির শোকেস সমৃদ্ধ করেছে তারা। সবশেষ এএফসি কাপে জোনাল সেমিফাইনালে খেলে ইতিহাস গড়েছে আকাশি-নীল জার্সিধারিরা।

অন্যদিকে এশিয়ান কাপ উইনার্স কাপের দ্বিতীয় পর্বে গিয়ে মোহামেডানও চমক দেখায়। যদিও এক যুগের বেশি সময় ধরে সাফল্যবিহীন ক্লাবটি এখনও ধুঁকছে।

ফুটবলের অতীত ইতিহাস বেশ রোমাঞ্চকর হলেও বর্তমানে সেই আভা নেই। কাজী সালাউদ্দিনের যুগে বেঁচে থাকার জোর লড়াই চলছে ফুটবলের!

 

/টিএ/কেআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
একযুগ পর দলছুট, সঙ্গে সঞ্জীব চৌধুরী
একযুগ পর দলছুট, সঙ্গে সঞ্জীব চৌধুরী
সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করা ব্যক্তির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো বাঘ, নিয়ে গেলো গহীন বনে
সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করা ব্যক্তির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো বাঘ, নিয়ে গেলো গহীন বনে
ট্রাম্পের বিচার চলাকালে আদালতের বাইরে গায়ে আগুন দিলেন এক ব্যক্তি
ট্রাম্পের বিচার চলাকালে আদালতের বাইরে গায়ে আগুন দিলেন এক ব্যক্তি
দুই জনপ্রতিনিধির নাম বলে সাভারে সাংবাদিকের ওপর কেমিক্যাল নিক্ষেপ
দুই জনপ্রতিনিধির নাম বলে সাভারে সাংবাদিকের ওপর কেমিক্যাল নিক্ষেপ
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি